মানবাজার ২ ব্লকের একটি কেন্দ্রে প্রতিষেধক। দেওয়া হচ্ছে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
পুরুলিয়ায় পঞ্চায়েত স্তরে করোনার প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ শুরু হল সোমবার থেকে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন জেলার মোট ২০৮টি কেন্দ্র থেকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। এত দিন শনি ও রবিবার বাদে প্রতিদিন ৪৮ থেকে ৫২টি কেন্দ্রে ওই কাজ হত। সেখানে এক দিনে দু’শোরও বেশি কেন্দ্র থেকে পরিষেবা মেলায় লক্ষ্যমাত্রার আওতায় থাকা মানুষজনকে দ্রুত প্রতিষেধক দিয়ে দেওয়া যাবে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য দফতর। অন্য দিকে, বাঁকুড়াতেও স্থানীয় স্তর থেকে করোনার প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যাপারে জোর দিচ্ছে
স্বাস্থ্য দফতর।
গত ১৬ জানুয়ারি থেকে পুরুলিয়া জেলায় শুরু হয়েছে প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত ১ এপ্রিল থেকে ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের আওতায় নিয়ে আসায় জেলার প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষকে করোনার প্রতিষেধক দিতে হবে। রবিবার পর্যন্ত প্রথম ‘ডোজ’ দেওয়া হয়েছে প্রায় এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার মানুষকে। এখনও অনেক বাকি। নিচুতলায় প্রথম দিন প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ কেমন হচ্ছে, তা সরজমিনে দেখতে এ দিন রঘুনাথপুর মহকুমার বিভিন্ন এলাকা ঘুরেছেন পুরুলিয়ার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বুদ্ধদেব মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যা খবর মিলেছে, তাতে আমরা আশাবাদী।’’
বাঁকুড়ায় প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হওয়ার পরে প্রথমে বিশেষ সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে স্বাস্থ্যক-র্তাদের দাবি, ইদানীং পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। বাঁকুড়া স্বাস্থ্য জেলার আওতায় থাকা লক্ষাধিক মানুষ ইতিমধ্যেই প্রতিষেধক নিয়েছেন। জেলার করোনা প্রতিষেধক আধিকারিক সুব্রত দে জানান, মানুষ যাতে বাড়ির কাছাকাছি জায়গায় প্রতিষেধক পান, সে জন্য ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি থেকেও তা দেওয়া শুরু হয়েছে। ওই জায়গাগুলিতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন দিন কাজ হচ্ছে। পাশাপাশি, বাঁকুড়া মেডিক্যাল ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলিতে পুরোদমে প্রতিষেধক দেওয়া চলছে। বাঁকুড়ার ডেপুটি সিএমওএইচ (৩) সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘ভ্যাকসিন নেওয়ার আগ্রহ ধাপে ধাপে বাড়ছে।’’
দ্বিতীয় পর্যায়ের করোনা সংক্রমণ চিন্তা বাড়াচ্ছে দুই জেলাতেই। আবার নতুন করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। পুরুলিয়া জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের সম্পাদক তথা পুরুলিয়া মেডিক্যালের চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায়ের মতে, এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষার সংখ্যা না বাড়ালে, করোনা সংক্রমণের হার ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে তা বোঝা যাবে না। নয়নবাবু বলেন, ‘‘ভোটের আগে জনসভা, মিটিং, মিছিল, রোড-শো হয়েছে। হাজার হাজার লোক এক জায়গায় জড়ো হয়েছেন। হাতে গোনা কয়েক জনকে বাদ দিলে, বাকি অধিকাংশ লোকজনের মুখেই মাস্ক ছিল না। পর্যবেক্ষকও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পরীক্ষা করা হয়েছিল বলেই তো ধরা পড়েছে।’’ নয়নবাবুর দাবি, আগে পুরুলিয়ায় উপসর্গহীন আক্রান্তের সংখ্যা বেশি দেখা গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণের অভিঘাত কেমন হবে, তা এখনও অজানা। পরীক্ষার মাধ্যমে আক্রান্তদের খুঁজে বের করে আলাদা করার মাধ্যমেই এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।’’
পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) আকাঙ্ক্ষা ভাস্করের দাবি, জেলার পরিস্থিতি এখনও তেমন উদ্বেগজনক নয়। তবে দু’দিন আগেও জেলায় আক্রান্তের হার ছিল ২.১৮ শতাংশ। এ দিন তা বেড়ে হয়েছে ২.৬ শতাংশ। তিনি বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে আমরা পরীক্ষাও বাড়াচ্ছি।’’ পরীক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে বাঁকুড়াতেও। বাঁকুড়ার একমাত্র কোভিড হাসপাতাল ওন্দা সুপার স্পেশালিটিতে। সেখানকার তথ্য তুলে ধরে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘কিছু দিন আগেও ওন্দা সুপার স্পেশালিটিতে মেরেকেটে দু’-তিন জন করোনা রোগী ভর্তি থাকছিলেন। ইদানীং সেই সংখ্যাটা বেড়ে প্রায় ১৪-১৫ হয়েছে।’’
আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যে নেমে আসায়, ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে পুরুলিয়া জেলার ‘সেফ হাউস’গুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন করে ‘সেফ হাউস’ তৈরির কথা ভাবছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) বলেন, ‘‘কোভিড হাসপাতাল আগেই হাতোয়াড়ায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রয়োজন হলে, হাতোয়াড়া এবং রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটিতে সেফ হাউস তৈরি করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy