—প্রতীকী ছবি
পুজো পরিক্রমার জন্য কলকাতায় রাস্তায় থাকবে সরকারি পরিবহণ নিগমের পাঁচশো অতিরিক্ত বাস। সেই জন্যই কী কলকাতা-সিউড়ি রুটের দু’টি এসি বাস তুলে নেওয়া হয়েছে— এই প্রশ্ন ঘিরেই ছড়িয়েছে ধন্দ।
পরিবহণ দফতরের বক্তব্য, পুজোর সময় সিউড়ি রুটে দু’টি এসি বাসের একটিও তোলা হয়নি। কিন্তু কলকাতা থেকে জেলা সদরে ওই বাসে ফিরতে চেয়ে অনলাইনে টিকিট কাটতে গিয়ে ভিন্ন অভিজ্ঞতা যাত্রীদের।
সিউড়ির বাসিন্দা অনিন্দ্যসুন্দর রায় উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক। কর্মসূত্রে সপরিবার কলকাতায় থাকেন। ১৬ অক্টোবর ষষ্ঠীর দিন সিউড়ি ফেরার টিকিট কাটতে গিয়েই ওই অভিজ্ঞতা হয় তাঁর। অনিন্দ্যবাবু বলেন, ‘‘স্ত্রী পৌলমী ও ছেলে অধ্যয়নকে নিয়ে সে দিন বিকেলেই বাড়ি যাব বলে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু এসি বাসের জন্য টিকিট কাটতে গিয়ে দেখলাম, অনলাইনে বাসের কোনও তথ্য দেখা যাচ্ছে না।’’ তাঁর বক্তব্য— ‘‘পরিবহণ নিগমের নম্বরে ফোন করলে বলা হয়, শহরে পুজো পরিক্রমার জন্য বাস তোলা হয়েছে। ষষ্ঠী থেকে দশমী ওই পরিষেবা থাকছে না।’’ প্রায় একই অভিজ্ঞতা মহানগরীতে কর্মরত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সিউড়ির বাসিন্দা দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় ও একটি আইটি সংস্থার সিনিয়র সায়েন্টিস্ট তনুশ্যাম চট্টোপাধ্যায়েরও।
দ্বৈপায়নবাবু বলছেন, ‘‘আমার মা পুজোর বাজার করতে কলকাতায় এসেছেন। প্রথম দিকে কলকাতার পুজো দেখে সপ্তমীর দিন সকালে বাড়ি ফেরার কথা। কিন্তু টিকিট কাটতে গিয়ে জানলাম, ওই দিনগুলিতে সরকারি এসি বাস দু’টি থাকবে না।’’ অন্য দিকে তনুশ্যামবাবুর বক্তব্য, ‘‘নিয়মিত সিউড়ি-কলকাতা ওই বাসেই যাতায়াত করি। স্বাচ্ছন্দের একটা বিষয় রয়েছে। ঠিক ছিল, পুজোর সময় সপরিবার বাসেই সিউড়িতে ফিরব। কোনও নোটিস ছাড়াই কী ভাবে বাস তুলে নেওয়া হল!’’ তাঁদের ক্ষোভ, ‘কলকাতার বাইরের মানুষ কী মানুষ নন!’
গত বছর মে মাসে বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠকে জেলা সদর থেকে কলকাতা পর্যন্ত এসি বাস চালানোর দাবি উঠে। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর হস্থক্ষেপে সিউড়ি থেকে ভায়া ইলমাবাজার ও বোলপুর দু’টি কলকাতাগামী বাস পরিষেবা চালু হয়। প্রথমে তার দায়িত্ব পেয়েছিল দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থা। তেমন ভাল বাস দিতে ‘না পারায়’ এবিএসটিসি-র থেকে পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্ব নেয় ডব্লিউটিসি (পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম)। জোড়া এসি বাস পেয়ে খুশি হয়েছিলেন যাত্রীরা।
কলকাতা বা শহরতলি থেকে সিউড়ি বা বোলপুরে কর্মস্থলে আসার জন্য এবং উল্টো দিকে কলকাতা যাওয়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারি কর্মী আধিকারিক, ব্যবসায়ীরা ওই বাস দুটিতেই চড়তেন। ছন্দপতন হয় চলতি বছর জুলাই থেকে, এককালীন অনেকটা ভাড়া বৃদ্ধির জন্য। যাত্রী কমতে থাকে। যাত্রীদের দাবি ছিল, যাত্রাপথ ও বাসের কোনও পরিবর্তন না করে, শুধুমাত্র বাসের গায়ে ‘বাংলাশ্রী’ স্টিকার সেঁটে দিয়ে সিউড়ি থেকে কলকাতাগামী সরকারি এসি ভলভো-র ভাড়া ৩২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৫১০ টাকা। শেষ পর্যন্ত যাত্রীদের দাবি মেনে দু’দফায় ১০০ টাকা কমানোয় ফের যাত্রী সংখ্যা বেড়েছিল।
কিন্তু পুজোয় বাস বন্ধ রাখার ‘সিদ্ধান্ত’ ঘিরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সিউড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক কিসান পাল ও সভাপতি নজরুল ইসলাম বলছেন, ‘‘সরকারি পরিষেবায় কেন বার বার এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
যদিও বাস তুলে নেওয়ার কথা মানতে চাননি ডব্লিউটিসি-র (পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম) এক কর্তা। কলকাতা থেকে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘পুজোর সময় শহরে অতিরিক্ত বাস চালাতে হবে এটা ঠিক। তবে সিউড়ি রুটের বাস আমরা তুলছি না। কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।’’ প্রশ্ন ছিল, তা হলে অনলাইনে টিকিট মিলছে না কেন? ওই কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘বাস ছাড়ার ১০ দিন বা ২৪০ ঘন্টা আগে অনলাইনে টিকিট মেলে। তাঁরা যেহেতু তারও আগে চেষ্টা করেছেন, তাই পাননি। সময়ে চেষ্টা করলে টিকিট পেতে অসুবিধা হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy