প্রতীকী ছবি।
‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পের জন্য অনলাইনে আবেদন জমা নেওয়া শুরু হয়েছে সোমবার থেকে। কিন্তু পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ার প্রচুর মানুষ দু’দিন চেষ্টা করেও আবেদন করতে পারেননি বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার বাঁকুড়ার বড়জোড়ার একটি সহজ তথ্যমিত্র কেন্দ্রের কর্মী জানান, সকাল থেকে অনেকে এসেছিলেন আবেদন করার জন্য। কিন্তু এতটাই সময় লাগছিল, যে মাত্র তিন জনের আবেদন করে ওঠা গিয়েছে। অনলাইনে কত জন আবেদন করতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধী দলগুলিও।
নতুন নির্দেশিকায় দেখা গিয়েছে, গ্রামাঞ্চলের অনেকেই ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পে সাহায্যের আবেদন করতে পারবেন না। প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, মূলত শহরাঞ্চলের বাসিন্দা অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকেরাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। কিন্তু নির্মাণ শ্রমিক, ঠেলা চালক, দিনমজুর, বিড়ি শ্রমিকদের অনেকেরই ‘স্মার্টফোন’ নেই। তাঁরা কী ভাবে আবেদন করবেন, উঠছে সেই প্রশ্ন। অনেকে হাজির হচ্ছেন ‘সাইবার ক্যাফে’ বা তথ্যমিত্র কেন্দ্রে। পুরুলিয়া শহরের একটি ‘সাইবার ক্যাফে’-র মালিক দিব্যকান্তি চট্টোপাধ্যায়ের কাছে এসেছিলেন তেমনই কিছু শ্রমিক। দিব্যকান্তিবাবু জানান, ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পের ওয়েবসাইট খেকে মোবাইলে ‘অ্যাপ’ ডাউনলোড করা যাচ্ছে। আবেদন করতে হচ্ছে সেই ‘অ্যাপ’ থেকেই। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক ধাপ পেরিয়ে ফর্ম পূরণ করার পরেও, শেষ পর্যন্ত জমা করা যায়নি। ওই শ্রমিকদের ফিরিয়ে দিতে হয়েছে।’’
‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পের ‘অ্যাপ’ খুব ঢিমে তালে চলছে বলে অভিযোগ শোনা গিয়েছে বাঁকুড়ার নানা জায়গা থেকেও। সিপিএমের বড়জোড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুজয় চৌধুরী বলেন, ‘‘আবেদন করার প্রক্রিয়া খুবই দীর্ঘ ও সার্ভার ঠিক ভাবে কাজ না করায় প্রচুর মানুষ মঙ্গলবারও ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পে আবেদন করতে পারেননি।” তবে বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অসীমকুমার বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘প্রচেষ্টা প্রকল্পে আবেদন করার ক্ষেত্রে এ দিন সমস্যার অভিযোগ পাইনি। প্রক্রিয়া ঠিকঠাকই হয়েছে।”
অনলাইনে ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পের আবেদন করা যাচ্ছে বলে শুনেছেন ঝালদা ২ ব্লকের নলকুপি গ্রামের বিড়ি শ্রমিকেরা। তাঁদের মধ্য়ে কালীপদ পরামানিক, জগদীশ পরামানিকেরা মঙ্গলবার বলেন, ‘‘কম্পিউটারে বা মোবাইলে ফর্ম পূরণ করা যাবে শুনেছি। কিন্তু আমাদের মোবাইল নেই। কম্পিউটারের দোকান বন্ধ। কোথায় গিয়ে ফর্ম পূরণ করব, সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না।”
কাশীপুরের ভোলাপ্রসাদ রজক জামাকাপড় ইস্ত্রি করে দিন গুজরান করেন। আগে ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পের ফর্ম জোগাড় করে পঞ্চায়েতে জমা দিতে গিয়ে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। পুরসভায় ফর্ম জমা না করতে পেরে ফিরে এসেছিলেন পুরুলিয়া শহরের চায়ের দোকানদার সোমনাথ সেন। তাঁরা বলেন, ‘‘অনলাইনে ফর্ম পূরণ করা সম্ভব নয়। কোথায় যাব, ভাবছি।’’
কংগ্রেস ও সিপিএম প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, জেলার অনেক অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক এখনও সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় আসেননি। এই সময়ে সরকারি প্রকল্প থেকে তাঁদের আর্থিক সহায়তা করা জরুরি। কিন্তু ‘অব্যবস্থার’ ফলে সেটা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।
পুরুলিয়া জেলা বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়ন কংগ্রেসের নেতা ফনীভূষণ কুমার এবং সিআইটিইউ-র পুরুলিয়া বিড়ি কারিগর ইউনিয়নের নেতা ভীম কুমার বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত এলাকার শ্রমিকদের এমনিতেই দিন-আনি দিন-খাই অবস্থা। তাঁরা কী ভাবে ‘স্মার্টফোন’ থেকে অনলাইনে আবেদন করবেন? রাজ্য সরকারের চিন্তা-ভাবনাটাই ভুলে ভরা।” এই প্রকল্প নিয়ে প্রশাসন বা শ্রম দফতর প্রচার করেনি বলেও অভিযোগ করছেন ওই দুই শ্রমিক নেতা।
তবে ‘লকডাউন’-এর মধ্যে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে শিবির করার উপায় নেই বলে জানাচ্ছেন শ্রম দফতরের কর্তারা। পুরুলিয়ার সহকারী শ্রম মহাধ্যক্ষ চন্দ্রচূড় পান বলেন, ‘‘সদ্য অফিস খুলেছে। অনেকেই প্রচেষ্টা প্রকল্প নিয়ে জানতে অফিসে আসছেন। কর্মীরা তাঁদের সম্পূর্ণ
সহযোগিতা করছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy