Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

সাইবার দস্যুর হানা জেলার বিদ্যুৎ দফতরের কম্পিউটারে

শুক্রবার বিকাল ৩টে, কি ৩টে ১০ হবে। নলহাটি বিদ্যুৎ দফতরের সাব স্টেশনে বসে কম্পিউটারে কাজ করছিলেন কল ফরওয়ার্ডিং অপারেটর শুভজিত হালদার।

হ্যাকের পরে বিদ্যুৎ দফতরের কম্পিউটার স্ক্রিন। —নিজস্ব চিত্র।

হ্যাকের পরে বিদ্যুৎ দফতরের কম্পিউটার স্ক্রিন। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৭ ০১:০১
Share: Save:

শুক্রবার বিকাল ৩টে, কি ৩টে ১০ হবে। নলহাটি বিদ্যুৎ দফতরের সাব স্টেশনে বসে কম্পিউটারে কাজ করছিলেন কল ফরওয়ার্ডিং অপারেটর শুভজিত হালদার। কম্পিউটারে একটা ফাইলে ক্লিক করতে গিয়েই চমক। একটি ডায়লগ বক্স স্ক্রিনে ভেসে উঠে, লেখা কম্পিউটারের সব ফাইল এনক্রিপ্ট করা হল। এরপর অফিসের অন্যান্য কম্পিউটারেও ফাইল খুলতে গিয়ে একই অভিজ্ঞতায় রীতিমত অবাক শুভজিত ও অন্যান্যরা। প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে শুভজিতেদের বুঝতে বাকি থাকেনি যে সাইবার দস্যু ‘ওয়ানাক্রাই’-এর হানায় আক্রান্ত অফিসের ৫টি কম্পিউটার!

কেননা, দিন কয়েক ধরেই এই ভাইরাসের চর্চাই চলছে সোস্যাল মিডিয়াজুড়ে।

শুধু নলহাটি সাবস্টেশন কেন, জেলা বিদ্যুৎ দফতর জানাচ্ছে, শুক্র থেকে সোমবারের মধ্যে মল্লারপুর, আমোদপুর, সিউড়ি সাবস্টেশন এমনকী সিউড়ি ডিভিশন অফিসের একাধিক কম্পিউটার হ্যাক হয়েছে। জেলার বিদ্যুৎ দফতরের বিভিন্ন অফিসের কম্পিউটারে একে একে এমন বার্তা ভেসে উঠায় শোরগোল পড়ে যায়। সাইবার হানায় আক্রান্ত কম্পিউটারগুলিতে কোনও ফাইল-ই খুলতে না পারায় বিঘ্নিত হচ্ছে দৈন্যন্দিন কাজকর্ম। গুরুত্বপূর্ণ ফাইল না খুলতে পারায় সমস্যায় পড়েছেন বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকরাও।

যদিও এখনও গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুতের বিল নিতে চূড়ান্ত দুর্ভোগ হয়েছে বলে খবর নেই। মল্লারপুর সাবস্টেশনে দু’একটা বাদ দিয়ে সাইবার হানায় আক্রান্ত ৫টি কম্পিউটার। তবে যে সফ্টওয়ার নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়ে সেগুলি স্লো হলেও কাজ করেছে দাবি কর্মীদের। বিল নেওয়া গিয়েছে নলহাটিতেও। দাঁড়িয়ে থেকে বিল দিতে হয়েছে গ্রাহকদের। এমনকী হ্যাক হওয়া সাবস্টেশনগুলির কাছে থাকা কিয়স্কগুলিও ধীর গতিতে চলছে বলে জানা গিয়েছে।

জেলার কতগুলি সাবস্টেশন বা ডিভিশন অফিসের কম্পিউটার হ্যাক হয়েছে তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি বিদ্যুৎ দফতরের বীরভূমের রিজিউনাল ম্যানেজার তপন দে। তপনবাবু বলেন, ‘‘এই নিয়ে যা বালার আইটি সেল বলবে।’’ আইটি সেলের সিউড়ি ডিভিশানাল অফিসের অধিকারিকরাও এ ব্যাপারে কোনও তথ্য সংবাদমাধ্যমকে দিতে রাজি হননি। তবে বেশ কিছু কম্পিউটার অকেজো হয়ে পড়ায় সমস্যা যে বেড়েছে সেটা মেনে নিয়েছেন কর্তারা।

বোলপুর বা রামপুরহাট, সাঁইথিয়া খয়রাশোল-সহ যে সব সাবস্টেশনে কম্পিউটারগুলি সাইবার হানা থেকে অক্ষত আছে সেগুলি নিয়ে চিন্তায় রয়েছে দফতর। রামপুরহাট সাবস্টেশনের এক কর্মী বলছেন, ‘‘গত চার দিন ধরে দফতের উঁচু মহল থেকে এই রকম একাট হানা হতে পারে বলে সতর্কতা ছিল। তাই দিন চারেক নেট বন্ধ রাখা হয়েছিল। এ যাত্রা তাই বেঁচে গিয়েছে।’’ দফতর সূত্রে খবর, ল্যান লাইনে যুক্ত থাকা কম্পিউটারগুলি ব্যবহারে সতর্কতা নিতে বলা হয়েছে। আধিকারিকদের কম্পিউটারে মেল এলে সেগুলি খোলার আগে এবং কিছু ডাউনোলড করার আগেও একই ধরনের সতর্কতা নিতে বলা হয়েছে। বোলপুর সাব স্টেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে সোমবারই নির্দেশ এসেছে।

ঠিক কোথায় কোথায় বিপদ? কম্পিউটারগুলিকে হ্যাক করে কী ভাবে ডলারে টাকা চাওয়া হচ্ছে। শুধু কম্পিউটার নয় মোবাইলের বিভিন্ন সফ্টওয়ার ব্যবহারের জন্য কী করণীয়— এমন নানা উপদেশ ও পরামর্শ ছড়িয়ে পড়েছে হোয়াটস অ্যাপ ও ফেসবুকোর মাধ্যমে। কিন্তু তাতে কতটা সুরাহা হবে সেটাই এখন প্রশ্ন চিহ্নে।

অন্য বিষয়গুলি:

Cyber Attack Ransomware WannaCry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE