ছটের ছবি। রবিবার দুপুরে নলহাটিতে ছবিটি তুলেছেন সব্যসাচী ইসলাম।
নদীর মাঝে মাঝেই বালির চর জেগে উঠেছে। পড়ন্ত বিকেলে বয়ে যাওয়া নীলাভ আভার জলরাশির গভীরতা কোথাও হাঁটুজল। কোথাও গোড়ালি পর্যন্ত। আর সেই জলের উপরেই দাঁড়িয়ে হাজার কয়েক পুণ্যার্থী। যেন রঙের খেলা।
ফি বছর ছট পুজোর দিন বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বর ও খয়রাশোলের ভীমগড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া অজয় নদে এ ভাবেই মানুষের ঢল নামে। পাণ্ডবেশ্বরের দিকে তেমন জল না থাকায় ছট পুজোর ভিড়টা হয় খয়রাশোলের দিকেই। মূলত পড়শি জেলা বর্ধমান থেকে আগত পুণ্যার্থীরা রবিবার অজয়ের জলে দাঁড়িয়ে সূর্যদেবকে অর্ঘ্য নিবেদন করেন। এ বারও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ব্যতিক্রম দু’টি ক্ষেত্রে। এক, গত বারের তুলনায় অজয়ে এ বার কিঞ্চিত বেশি জল। যাতে সহজেই ডুব দিতে পেরেছেন পুণ্যার্থীরা। আর যেটা চোখে পড়ার মতো তা হল পড়শি জেলার মানুষের জন্য বীরভূম পুলিশের সহযোগিতা। যার প্রশংসা করলেন ছটপুজো কমিটি থেকে আগত পুণ্যার্থী, সকলেই।
গত ১৮ বছর ধরে অজয়ের ছটপুজো যাতে সঠিক ভাবে পালিত হয়, তার নজরদারি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে পাণ্ডবেশ্বর ছটপুজো সর্বজনীন কমিটি। কমিটির সম্পাদক রাজু গুপ্ত, গুরুত্বপূ্র্ণ সদস্য অশোক অগ্রবালরা বলছেন, ‘‘প্রতিবছর কমবেশি দশ হাজার মানুষ এই নদে আসেন। কিন্তু দু’তিনটি বিষয় নিয়ে আমাদের বেশ সমস্যা ছিল।’’ প্রথমত, যেহেতু অংশটি খয়রাশোল থানা এলাকায় পড়ে। তাই পড়শি জেলার তরফে তাঁদের অনুরোধ করার ক্ষেত্রে একটা সঙ্কোচ থাকত। পুলিশ হয়তো আসত। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত ছিল না। দ্বিতীয়ত, নদে জল না থাকলেও যতটা এলাকা জুড়ে মানুষ নদী ব্যবহার করেন, সেখানে কোথাও কোনও চোরাস্রোত বা বালি আছে কিনা, সেটা দেখাও কষ্টকর ছিল। ‘‘আমরা এ বার বীরভূম প্রশাসনের কাছে দু’টি বিষয়েই অনুরোধ করেছিলাম। প্রশাসন দু’টিতেই ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। জলে কোথাও চোরাবালি নেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসেছে পুলিশও,’’—বলছেন তাঁরা।
ভীমগড়ে অজয়ের পাড়ে পুণ্যার্থীদের ঢল। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।
এ দিন বিশাল বাহিনী নিয়ে অজয়ে উপস্থিত ছিলেন খয়রাশোলের ওসি মাধব মণ্ডল। মাধববাবু বলেন, ‘‘পুণ্যার্থীরা আসেন জাতীয় সড়ক হয়ে। তাঁদের গাড়ি পার্কিং, পথদুর্ঘটনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নজরদারি করতে অফিসার, পুলিশকর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ার মিলিয়ে ৫০ জন রয়েছি।’’
ছটে চতুর্থী থেকে সপ্তমী ব্রতপালন চলে। ব্রত শেষের ঠিক আগের দিন বিকালে সূর্যকে অর্ঘ্য দিতে ও পরের দিন ভোরে সূ্র্যারতি করতে নদী বা জলাশয়ে আসা বাধ্যতামূলক। মূলত বাড়ির মহিলারারাই এই ব্রত পালন করেন। অজয়ে আসেন পাণ্ডবেশ্বর, অন্ডাল, উখড়া, হরিপুর নতুনডাঙা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার হিন্দিভাষী মানুষ। এ বার ব্যবস্থা যে অনেক ভাল, তা স্বীকার করছেন সকলেই। পাণ্ডবেশ্বর থেকে আগত কৃষ্ণমুরারি বর্ণওয়াল, প্রকাশ বর্ণওয়ালরা বলছেন, ‘‘বাড়ির মহিলা ও বাচ্চারা সকলেই আসে। অন্যান্য বারের থেকে এ বার প্রশাসন অনেক বেশি তৎপর মনে হল।’’ উখড়া ৪ নম্বর কোলিয়ারি থেকে আসা পায়েল, অণ্ডাল থেকে আসা বাবলি দেবীরা বলছেন, ‘‘এ বার সমস্ত ব্যবস্থাপনা দেখে খুব ভাল লাগল।’’
অজয়ের উপর সেতু থেকে রঙিন ছট পুজো দেখতে ভিড় জমান অসংখ্য মানুষ। সেই দলে ছিলেন ইসিএল-এর পাণ্ডবেশ্বর কোলিয়ারির জেনারেল ম্যানেজার ইউনুস আনসারি। তিনি বলছেন, ‘‘এই সময় যেখানেই থাকি, অজয়ে আসার চেষ্টা করি। ওই পাড় থেকে এপাড়ে আসার জন্য নদীতে একটি রাস্তাও বানিয়ে দিয়েছি। খুব ভাল অনুভূতি হয়। এ বার তো প্রশাসনও বাড়তি নজর দিয়েছে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy