ফাইল চিত্র।
বৃষ্টির জল ধরে রাখতে এবং ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার বাড়াতে ‘ওয়াটার শেড’ তৈরি হবে জলতীর্থ প্রকল্পে। বীরভূমে বন দফতর তত্ত্বাবধানে দফতরের জমিতেই তৈরি হবে বড় জলাশয় বা চেকড্যামের মতো ছ’টি ওয়াটার শেড।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোথায় সেগুলি তৈরি হবে সেগুলি নির্দিষ্ট করে ডিপিআর তৈরি হয়েছে। জেলা কৃষি সেচ দফতর থেকে ইতিমধ্যেই তিনটির অনুমোদন মিলেছে। প্রতি প্রকল্পের জন্য কমবেশি এক কোটি টাকা করে বরাদ্দ হয়েছে।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘জলতীর্থ’ নামে নতুন এই প্রকল্পের কথা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ঘোষণা করেন। বলা হয়েছিল ,এই প্রকল্পে চেক ড্যাম তৈরি করে ক্ষুদ্র সেচের জন্য বিভিন্ন জলাশয়ের জল এবং বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা হবে। প্রাথমিক ভাবে রাঢ়বঙ্গের চার শুখা জেলা বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রকল্পটি রূপায়িত হবে। এর ফলে ভূমিক্ষয় রোধ হবে, কৃষিক্ষেত্রে ফলন বাড়বে, হাঁস-মুরগি প্রতিপালনেও সুবিধা হবে। পরে অবশ্য সুন্দরবন, ঝাড়গ্রাম জেলাও প্রকল্পের আওতায় আসে। প্রাথমিক ভাবে জানানো হয়েছিল প্রকল্পে চেক ড্যাম, ক্ষুদ্র সেচের প্রায় ৮০০টি কাঠামো তৈরি করা হবে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচশো কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ছিল, প্রকল্প রূপায়িত হলে প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর চাষ জমিতে সেচের সুবিধা মিলবে। উপকৃত হবেন প্রায় ৬৪ হাজার কৃষক।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজ শুরু হয়েছে তারপর থেকেই। কাজ শেষ করার জন্য নবান্ন, জলসম্পদ উন্নয়ন দফতর, বন দফতর, সেচ দফতর এবং পূর্ত দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু, সব দফতর প্রকল্পের কাজে আশানুরূপ অগ্রগতি না করতে পারায় নির্দিষ্ট কিছু দফতরের দায়িত্ব কমিয়ে বাকিগুলিকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। বন দফতর তার মধ্যে রয়েছে। বীরভূমে বন দফতর এর আগে এই প্রকল্পে কাজ না করে থাকলেও চলতি অর্থবর্ষ সেই নির্দেশ এসেছে, জানিয়েছেন বীরভূমের এডিএফও বিজনকুমার নাথ। তিনি বলেন, ‘‘ছ’মাসে আগেই ডাইরেক্টটরেট জলতীর্থ প্রকল্পে ৬টি ওয়াটারশেড গড়ার নির্দেশ দেয়।’’
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলাশয় বা চেকড্যাম তৈরি হবে বোলপুর মহকুমার ইলামবাজারের চৌপাহাড়ি মৌজায়, সিউড়ি মহকুমার মহম্মদবাজারের ট্যাংশুলি, খয়রাশোলের রাইপুর, সিউড়ি ১ ব্লকের রাওতাড়া ও টাকিপুর এবং সাইঁথিয়ার আমডহড়া মৌজায়। প্রথম তিনটিতে বড় জলাশয় তৈরি হবে। বাকিগুলিতে হবে চেকড্যাম। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওয়াটার শেড তৈরি হবে বনভূমি লাগোয়া এলাকায়। বন দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, নির্দেশ আসার পরই সাইট ঠিক করা হয়েছে। ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করে কৃষি সেচ দফতরেও পাঠানো হয়। প্রথম তিনটির কারিগরি অনুমোদন মিলেছে। বাকিগুলির এখনও মেলেনি।
বনকর্তাদেরও আশা, জলাশায়ে বৃষ্টির জল ধরে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর বাড়ানো, তা সেচের কাজে লাগানো, এবং জলাশয়ে মাছ, হাঁস-মুরগি পালন এর মতো কাজ করে জীবন জীবিকার উন্নতির হবে। পাশাপাশি ভূমিক্ষয় রোধ, বনভূমির পরিধি বাড়াতে উপোযোগী হবে প্রকল্পটি। এক কর্তার কথায়, ‘‘তবে কাজ শুরু করতে বাকি তিনটির অনুমোদন দ্রুত প্রয়োজন।’’
যদিও প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব কারা নেবে, তা স্পষ্ট নয় এখনও। কৃষি-সেচ দফতরের দাবি, তারাই নোডাল এজেন্সি। অন্য দিকে, বন দফতরের কথায় রূপায়ণ করবে বন দফতরই। এডিএফও বলছেন, ‘‘কে করবে, সেটা ডাইরেক্টটরেট থেকেই নির্দেশ আসবে। তার আগে প্রয়োজন কারিগরি অনুমোদনের।’’
কৃষি-সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অমিতাভ রায় জানান, কিছু টেকনিক্যাল বিচ্যুতির জন্য অনুমোদন দেওয়া যায়নি। বন দফতর তা জানে। কৃষি সেচ দফতর সূত্রে খবর, সমস্যা বড় জলাশয়ের ক্ষেত্রে নয়। চেকড্যামগুলো নিয়েই। সংশোধন করে দিলেই অনুমোদন মিলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy