পথে: মৃত বিজেপি কর্মী ত্রিলোচনের গ্রাম সুপুরডিতে চলছে রাতপাহারা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
দুই বিজেপি কর্মীর মৃত্যুর পরে এ বার রাত পাহারা শুরু করলেন বলরামপুরের বিজেপি কর্মীরা। ইতিমধ্যেই মৃত বিজেপি কর্মী দুলাল কুমারের গ্রাম ডাভা ও ত্রিলোচন মাহাতোর গ্রাম সুপুরডিতে রাতপাহারা শুরু করে দিয়েছেন গ্রামবাসী। শুধু তাই নয়, বিজেপির জেলা নেতৃত্ব রাতে দলীয় কর্মীদের এলাকায় ঘোরাফেরার ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।
দুলাল ও ত্রিলোচন দু’জনেই পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির হয়ে খেটে ছিলেন। দু’জনের পরিবারই দাবি করেছেন, তাঁদের উপরে সে জন্য হুমকিও ছিল। দু’জনেই রাতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে ফেরেননি। অভিযোগ ওঠে অপহরণ করে দুষ্কৃতীরা তাঁদের গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে মারে। পরিবারের মতো বিজেপি নেতৃত্বও অভিযোগ তোলেন— দু’টি ঘটনাই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের। যদিও তা মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে নিয়ে পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া দাবি করেছেন, দুলাল আত্মঘাতী হয়েছেন বলে পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড জানিয়েছে।
বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী সোমবার দুপুরে জেলা পার্টি অফিসে সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেন, ‘‘জেলার মধ্যে বলরামপুরেই তৃণমূলের সব থেকে ভরাডুবি হয়েছে। এখানে যুবকেরা বিজেপির হয়ে ভাল পরিশ্রম করেছেন। সে কারণেই তৃণমূলের রাগ বিজেপির যুব কর্মীদের বিরুদ্ধে।’’ তিনি জানান, তাই বলরামপুরের গ্রামে গ্রামে বিজেপি কর্মীদের রাতে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
বলরামপুরের মণ্ডল কমিটির নেতা কৃষ্ণপদ সিং সর্দার বলেন, ‘‘কর্মীদের বলা হয়েছে, অন্ধকার নামলেই তাঁরা যেন এক রাস্তাঘাটে চলাফেরা না করেন। কোথাও যেতে হলে দলবেঁধে যেতে হবে।’’ ঘটনা হল, বলরামপুর সদরে লাক্ষা কুঠি-সহ বিভিন্ন দোকানে বহু গ্রামবাসী কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে বিজেপির কর্মী-সমর্থকও কেউ কেউ রয়েছেন। দু’টি মৃত্যুর পর থেকেই ওই লোকজন দল বেঁধে সাত তাড়াতাড়ি গ্রামে ফিরছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
ইতিমধ্যেই দল থেকে বলরামপুর ব্লকে গ্রামে গ্রামে রাত পাহারারও নির্দেশ গিয়েছে। সুপুরডির বাসিন্দা তথা বলরামপুর ব্লকের যুব মোর্চার সভাপতি ছোটুলাল মাহাতো, মৃত ত্রিলোচনের দাদা শিবনাথ মাহাতো বলেন, ‘‘রাতে কখন কী হয়, তার ঠিক নেই। তাই আমরা রোজ রাতে গ্রামের বেশ কয়েকজন ছেলেপুলে বিভিন্ন দলে ভাগে গ্রামে টহল দিচ্ছি।’’ তাঁরা জানান, অনেক মহিলাও বাড়ির বাইরে অনেক রাত পর্যন্ত বসে পাহারা দিচ্ছেন। বিজেপির তেঁতলোর পঞ্চায়েত প্রমুখ সুনীল মাহাতোর দাবি, ‘‘পঞ্চায়েতের সব এলাকাতেই আমরা রাত পাহারা শুরু করেছি।’’
রাত পাহারা শুরু হয়েছে দুলালের ডাভা গ্রামেও। সেখানকার বাসিন্দা বিধান পাল জানাচ্ছেন, তাঁরাও ইতিমধ্যে টর্চ, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে রাত পাহারা শুরু করেছেন। দুলালের মৃত্যুর পরে যাতে ওই ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য গ্রামের সবাই সজাগ। তাই রাত পাহারার সিদ্ধান্ত। মাওবাদী নাশকতায় জেলার জঙ্গলমহলে একের পর এক সিপিএম নেতা খুন হওয়ার সময়ে সিপিএম নেতৃত্বও ওই এলাকার দলীয় নেতা-কর্মীদের রাতে বাইরে বেরোতে একইরকমের সতর্কতার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য দুই কর্মীকে খুন করা হয়েছে বলেই দাবি করেছেন। দলের রাজ্য নেতা সায়ন্তন বসু এ দিন কলকাতায় দাবি করেন, ‘‘দুলালের পরিবার খুনের অভিযোগ দায়ের করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করছে না।’’ যদিও এ দিন রাতে পুলিশে অভিযোগ হয় বলে জানিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
পুরুলিয়ায় বিদ্যাসাগরবাবু অভিযোগ করেন, ‘‘দুই কর্মীর খুনে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় জয়ী বিজেপি প্রার্থীদের তৃণমূলে যোগ দেওয়ানোর জন্য পুলিশের চাপ দেওয়ার প্রতিবাদে আমরা মঙ্গলবার থেকে জেলাশাসকের অফিসের সামনে চার দিনের অবস্থান-বিক্ষোভে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ যদিও পুলিশ এবং তৃণমূল নেতৃত্ব সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। সায়ন্তন বসুর দাবি, ভোটের আগে দলের কর্মী জগন্নাথ টুডু এবং সম্প্রতি ত্রিলোচন ও দুলালের মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত চেয়ে তাঁরা শীঘ্রই হাইকোর্টে যাবেন। ত্রিলোচনের মেজদা শিবনাথ মাহাতো বলেন, ‘‘আমারও চাই, ভাইয়ের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ হোক। তবে সিবিআইয়ের উপরেই আমাদের ভরসা।’’
অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের বিদায়ী জেলা সভাধিপতি, বলরামপুরের নেতা সৃষ্টিধর মাহাতো দাবি করেন, ‘‘বিজেপি নেতারা আষাঢ়ে গল্প ফাঁদছেন। পাঁচ জন ডাক্তারের মেডিক্যাল বোর্ড ময়না-তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছেন, দুলাল আত্মহত্যা করেছেন। তারপরেও বিজেপির এই ধরনের দাবি, প্রমাণ করে, ওরা বিজ্ঞান মানে না।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy