অসন্তোষ: আদিবাসী বসতিতে জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। সোমবার বনেরপুকুর ডাঙায়। নিজস্ব চিত্র
শান্তিনিকেতনের বনেরপুকুর ডাঙায় জবরদখলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন আদিবাসীরা। অভিযোগ, প্রায় ২২ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই এলাকার বাসিন্দা গদাই হেমরমের বাড়ি সপ্তাহখানেক আগে ভেঙে দেওয়া হয়। তার পরে লাটারবাঁধ পুকুরের পাড়ে কোনও নির্মাণকাজ শুরু হয়। রুখে দাঁড়ান সেখানকার আদিবাসীরা।
তাঁদের ক্ষোভের খবর পেয়ে সোমবার বনেরপুকুর ডাঙায় যান জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চোধুরী। তাঁর নির্দেশে বাড়ি ভাঙার লিখিত অভিযোগ জানানো হয় শান্তিনিকেতন থানায়। বিকাশবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস সব সময় আদিবাসী ভাই-বোনদের পাশে রয়েছে। আদিবাসীদের উপর কোনও নির্যাতন যদি হয়, তাঁদের এক ইঞ্চি জমিও যদি কেউ কেড়ে নেয়, সে ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেস তাঁদের পাশে থেকে যে জায়গায় যেতে হবে সেখানে যাবে।’’ এমনকী দলের কেউ যদি যুক্ত থাকে, তার বিরুদ্ধেও দল উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
এলাকার সর্দার কালো হেমব্রম, স্থানীয় ক্লাবের সম্পাদক রবীন্দ্র হেমব্রম, স্থানীয় বাসিন্দা মানু বেসরা, বাদল কিস্কু, রাম সরেন জানান— তাঁরা দীর্ঘদিন এই গ্রামে বাস করছেন। লাটারবাঁধ পুকুরের জল ব্যবহার করেন। স্বাধীনতারও আগে থেকে তাঁদের পূর্বপুরুষেরা এখানে থেকেছেন। কোনও জায়গারই সে রকম পোক্ত নথি নেই। তাঁদের অভিযোগ, হঠাৎ রূপপুর পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান ইন্দ্রজিৎ মিত্র আদিবাসীদের জানান, এই জায়গা তাঁর নামে রয়েছে। সেই মতো পুকুর পাড়ের গাছ কাটা শুরু হয়, পুকুর ঘিরে দেওয়ার জন্য পিলার পড়ে। পুকুরের ধারেই ছিল গদাই হেমরমের বাড়ি। সেটিও ভেঙে দেওয়া হয়।
সোমবার জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী তাঁদের আশ্বস্ত করার পর বাড়ি ভেঙে দেওয়ার অভিযোগে ইন্দ্রজিৎ মিত্রের নামে শান্তিনিকেতন থানায় লিখিত ভাবে নালিশ জানান গদাই হেমব্রম। বনেরপুকুর ডাঙা এলাকার মানুষের অভিযোগ, শাসক দলের নির্দেশেই নাকি এ সব কাজ হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন প্রাক্তন উপপ্রধান। রূপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অঞ্চল সভাপতি এবং বর্তমান উপপ্রধানের বিরুদ্ধেও এই কাজে মদত দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
অভিযোগ শুনেই বিকাশবাবুর মন্তব্য, ‘‘যদি সে রকম কিছু হত, তা হলে আজ আমরা আসতাম না। দলের কেউ অসাধু কাজে যোগ দিলে, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দল।’’ তিনি আরও জানান, আদিবাসীরা এখানে যেমন ভাবে বসবাস করতেন, সে ভাবেই থাকবেন, চাষাবাদ করবেন, পুকুর ব্যবহার করবেন। সেই বার্তা দিতেই তাঁরা এসেছেন।
অভিযুক্ত ইন্দ্রজিৎবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, ওই এলাকায় তাঁর একটি ডাঙা জমি রয়েছে। খাতায়-কলমেও তার প্রমাণ রয়েছে। ওই পরিমাণ জমির মধ্যে গদাই হেমরমের বাড়ি ছিল। গদাই হেমরমের সঙ্গে এ নিয়ে একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তিপত্রও তাঁর কাছে রয়েছে বলে দাবি ইন্দ্রজিৎবাবুর। তাঁর দাবি, পুনর্বাসনের জন্য গদাইকে দেড় লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। এক লক্ষ টাকা দেওয়ার ভিডিও ফুটেজ তাঁর কাছে রয়েছে বলেও দাবি করেছেন প্রাক্তন ওই উপপ্রধান।
কোথাও কোনও বেআইনি সম্পত্তি তাঁর নেই বলে দাবি করে ইন্দ্রজিৎবাবু বলেন, ‘‘আমি প্রশাসনিক কাজ দক্ষতার সঙ্গে করি বলে অনেকের অনেক অসুবিধা হয়। তাই চক্রান্ত করে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। অঞ্চল সভাপতি ও উপপ্রধানকে সঙ্গে নিয়ে আমি যাইনি। তাঁরাই আমাকে ডেকেছিলেন। চাইলে আমিও এখন আইনি সাহায্য নিতে পারি। আদিবাসী জনজাতির প্রতি আমার কোনও রাগ নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy