Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Sonamukhi

ডাকের সাজই এ বছর ঘুরে দাঁড়ানোর ভরসা

শম্ভুবাবু জানান, কাগজ, থার্মোকল, অভ্র আনতে হয় কলকাতা থেকে। অতিমারিতে সে সবের দাম বেড়েছে। সহজে মিলছেও না।

শিল্পীর হাতে। নিজস্ব চিত্র।

শিল্পীর হাতে। নিজস্ব চিত্র।

শুভ্র মিত্র
সোনামুখী শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২০ ০৬:২৯
Share: Save:

পরিশ্রমের দাম মেলে না বলে যে পেশা থেকে ক্রমশ সরে যাচ্ছিলেন, এ বছর কালীপুজোর সেই ডাকের সাজ তৈরি করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন বাঁকুড়ার সোনামুখীর অনেক শিল্পী। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, নাওয়াখাওয়া ভুলে কাজ করে চলেছেন শম্ভুনাথ দাস। সোনামুখীর কৃষ্ণ বাজারের প্রবীণ এই ডাক শিল্পীর হাতে সেজে উঠবে শহরের অধিকাংশ কালী প্রতিমা। নিপুণ হাতে বানিয়ে চলেছেন শোলার কানপাশা, বাউটি, তাগা, শাড়ির আঁচল, মানতাসা।

বৃহস্পতিবার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, পরিবারের সবাই হাত লাগিয়েছেন কাজে। শম্ভুবাবুর ছেলে রাজু জানান, তাঁরা প্রান্তিক তাঁতশিল্পী। নিজেদের তাঁত নেই। মজুরির বিনিময়ে সোনামুখী সিল্কের শাড়ি তৈরি করেন। বিশ্বকর্মা পুজো থেকে সরস্বতী পুজো পর্যন্ত ডাকের সাজের চাহিদা থাকে। বেশ কিছুটা আর্থিক সুরহা হয়ে যায়। করোনা-পরিস্থিতিতে প্রায় আট মাস শাড়ির বেচাকেনা নেই। ডাকের সাজ তৈরি করেই কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর আশা দেখছেন।

শম্ভুবাবু জানান, কাগজ, থার্মোকল, অভ্র আনতে হয় কলকাতা থেকে। অতিমারিতে সে সবের দাম বেড়েছে। সহজে মিলছেও না। আগে আশপাশের রামপুর, ভুলা, পাথরাগ্রাম থেকে শোলা মিলত। এখন সে সবও আনাতে হয় বাইরে থেকে। শম্ভুবাবু বলেন, ‘‘পরিচিত কয়েক জন উপকরণ কেনার জন্য টাকা ধার দিয়েছেন। তাই দিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি।’’

হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আতান্তরে পড়েছিলেন আতশবাজির কারিগর পিন্টু মালাকার। তিনি এ বছর প্রতিমার সাজ তৈরি করছেন। সোনামুখীর এই শিল্পী জানান, ডাকের সাজ তৈরিতে তাঁদের পরিবারের সুনাম আছে। শহরের ষোলোটি প্রতিমার সাজ বংশ পরম্পরায় করে আসছেন তাঁরা। এক সময় ছত্তীসগঢ়, মুম্বই থেকেও ডাক আসত। এ বছর পাড়ার রক্ষাকালীর ডাকের সাজ তৈরি করছেন তিনি। পিন্টুবাবু বলেন, ‘‘এখানে ট্রেন চলছে না বলে বাইরে ঠাকুর সাজাতে যেতে পারছি না।’’

নিয়মিত অনুষ্ঠান বাড়িতে রান্না করেন সোনামুখীর ধর্মতলার চিন্ময় শর্মা। তিনি শখে ডাকের সাজের কাজ শিখেছিলেন। আট মাস বসে থাকার পরে, সেই শখ রুজির পথ দেখাচ্ছে। বাড়িতে ঠাকুরের ধাঁচা মুকুট তৈরির ফাঁকে শিল্পী বলেন, ‘‘৩৫ জনের রান্নার দল। সবাই বসে আছে। পুঁজি ভেঙে তলানিতে ঠেকেছে। এক সময়ে শিখে রাখা বিদ্যা আজ কাজে আসছে।’’

এ দিকে, করোনা-পরিস্থিতিতে পুজো কমিটিগুলি বাজেটও কমিয়েছে। এ বার অর্ধেক টাকার বরাত পেয়েছেন অনেক শিল্পীই। বড়কালী পুজো কমিটির পলাশ চট্টোপাধ্যায় ও হটনগর পুজো কমিটির বিজয় ঘোষাল বলেন, ‘‘সোনামুখীর কালী পুজোয় ডাকের সাজ ঐতিহ্য বহন করে। টাকার সঙ্কট চলছে। এ বছর প্রাণ ভরে মাকে সাজানোর ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। বাধ্য হয়েই বাজেট কমিয়েছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Artisans Sonamukhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy