কুনকির পিঠে চেপে ‘গুন্ডা’ হাতির সন্ধানে বন দফতরের কর্মীরা। বেলিয়াতোড়ের কয়মা জঙ্গলে সোমবার ছবিটি তুলেছেন অভিজিৎ সিংহ।
আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল বিস্তর। কিন্তু বার কয়েক নাগালে এসে শেষ পর্যন্ত গভীর জঙ্গলে সেঁধিয়ে গেল বন দফতরের খাতায় ‘গুন্ডা’ হিসাবে চিহ্নিত তিনটি দাঁতাল।
সোমবার সকালে ঘুমপাড়ানি গুলি বিশেষজ্ঞরা ওই তিনটি দাঁতালকে ধরতে বেরিয়েছিলেন কুনকি হাতি নিয়ে। প্রথম পর্বের অভিযান শেষে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁদের। ক্যাম্পে ফেরার পরে বনপাল (বনপ্রাণ) শুভঙ্কর সেনগুপ্তের প্রশ্নের উত্তরে হাতির বুদ্ধির তারিফ শোনা গেল কলকাতা থেকে আসা এক বিশেষজ্ঞের কথায়। মাটিতে আঁচড় কেটে অভিযানের পথের বিবরণ দিয়ে তিনি শুভঙ্করবাবুকে বোঝাচ্ছিলেন, কী ভাবে ঘন থেকে আরও ঘন জঙ্গলে ঢুকে, খালে-ডোবায় নেমে কুনকি হাতিতে সওয়ার বনদফতরের বন্দুকধারীদেরই পাল্টা ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছিল দাঁতালগুলি। পরে শুভঙ্করবাবু বলেন, “হাতিগুলি জঙ্গলের এতটাই গভীরে ঢুকে পড়েছে যে বেঁহুশ করলেও সেখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসা যেত না। খালে ঘেরা ওই ঘন জঙ্গলের মধ্যে গাড়ি নিয়ে ঢোকা যাবে না।
হাতির হানায় প্রাণহানি এবং ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা কার্যত রুটিন হয়ে গিয়েছে বাঁকুড়া জেলায়। গত সাত মাসে জেলার বাঁকুড়া উত্তর, বিষ্ণুপুর পাঞ্চেৎ ও দক্ষিণ— তিনটি বনবিভাগে মোট ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে হাতির হানায়। বহু ঘরবাড়িও ভেঙেছে। চাষজমির ফসল নষ্ট করেছে হাতি। বনদফতরের দাবি, বেশিরভাগ হামলাই চালিয়েছে স্থানীয় হাতিগুলিই। বনদফতর যে তিনটি হাতিকে গুন্ডা বলে চিহ্নতি করেছে তার প্রতিটিই দাঁতাল। তার মধ্যে একটি প্রাপ্তবয়স্ক এবং একটি অপ্রাপ্তবয়স্ক স্থানীয় হাতি বড়জোড়া, বেলিয়াতোড় গঙ্গাজলঘাটির বিভিন্ন গ্রামে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে । বনদফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, দু’টি হাতি একে অন্যের কাছছাড়া হয় ন। হামলাও চালায় একই সঙ্গে।
বন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “ওই দু’টি হাতিকে আমারা ‘বাপ-ব্যাটা’ নাম দিয়েছি। বনদফতরের খাতাতেও ওরা এই নামেই পরিচিত। একটির বয়স তেরো, আর অন্যটির তিরিশের কাছাকাছি।’’
গুন্ডা হাতিগুলিকে ধরে উত্তরবঙ্গে নিয়ে যাওয়া হবে বলে কয়েক সপ্তাহ আগেই জেলায় এসে জানিয়ে গিয়েছিলেন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। সেই মোতাবেক জেলায় পাঁচটি কুনকি হাতিও আনা হয় উত্তরবঙ্গ থেকে। রবিবার কলকাতা থেকে সিএফ (বন্যপ্রাণ) শুভঙ্করবাবু ছাড়াও বন্যপ্রাণ শাখার টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট সুব্রত পাল চৌধুরী এবং কলকাতা ও উত্তরবঙ্গের ঘুম-গুলি বিশেষজ্ঞদের একটি দল আসে বেলিয়াতোড়ে। ওই দিন বেলিয়াতোড়ে একটি বৈঠক করে অভিযানের রূপরেখা ঠিক করা হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলার একমাত্র ঘুম-গুলি বিশেষজ্ঞ তথা পাত্রসায়র রেঞ্জের কুশদ্বীপ বিটের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সনাতন মুর্মু।
রবিবার খারাপ আবহাওয়ার কারনে অভিযানে নামা যায়নি। সোমবার সকালে আকাশ একটু পরিষ্কার হতেই বেলিয়াতোড় রেঞ্জের মার্কা গ্রাম সংলগ্ন বারোমেস্যার জঙ্গল থেকে অভিযান শুরু করা হয়। জঙ্গলেই একটি শিবির গড়া হয়। নিয়ে আসা হয় পাঁচটি কুনকি হাতিকেই। সেই হাতিগুলির পিঠে চেপে জঙ্গলে অভিযান শুরু করেন বনদফতরের বন্দুকধারীরা। ক্যাম্প থেকেই একটি ড্রোন আকাশ পথে জঙ্গলে পাঠিয়ে হাতির গতিবিধির উপর সাময়িক নজর রাখা হচ্ছিল। হাতি ধরার অভিযানে রাজ্যে এবারই প্রথম ড্রোনের ব্যবহার করা হল।
দুপুরে একটু বিরতি দিয়ে এ দিন ফের কুনকি হাতি চড়ে জঙ্গলে গিয়েছিলেন বন্দুকধারীরা। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলিয়াতোড়ের বারোমেস্যা জঙ্গল ছাড়িয়ে ওন্দা, সোনামুখী ও বেলিয়াতোড় রেঞ্জের সীমানায় খেমা-র জঙ্গলে গিয়ে ঘাঁটি গে়ড়েছে তিনটি দাঁতাল। ওই জঙ্গলটিও বেশ ঘন। খাদ রয়েছে অনেক। ফলে বিকেল পর্যন্ত ঘুমপাড়ানি গুলি ছোঁড়ার মতো সুযোগ হয়নি। বনপাল শুভঙ্করবাবু বলেন, “হাতিগুলি আমাদের নাগালেই রয়েছে। ওদের একটু অগভীর জঙ্গল এলাকায় পেলেই ধরা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy