Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

আড়াল সরিয়ে সামনে এল কামান

পাঁচিলের আড়ালে এত দিন অবহেলায় পড়ে ছিল ইতিহাসের সাক্ষী। সেই কামানকে এ বার সবার সামনে তুলে নিয়ে এল বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসন। পর্যটকেরাও যাতে এই কামান দেখতে আসেন, সে জন্য সোমবার মহকুমাশাসকের অফিস চত্বরে কামানটি বসিয়ে সাজানোর কাজ শুরু হল। 

ঐতিহাসিক: বিষ্ণুপুরের ট্রেজারি অফিস চত্বরে পড়েছিল কামানটি। তুলে এনে শুরু হল সৌন্দর্যায়নের কাজ। নিজস্ব চিত্র

ঐতিহাসিক: বিষ্ণুপুরের ট্রেজারি অফিস চত্বরে পড়েছিল কামানটি। তুলে এনে শুরু হল সৌন্দর্যায়নের কাজ। নিজস্ব চিত্র

শুভ্র মিত্র
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৮ ০০:০৬
Share: Save:

পাঁচিলের আড়ালে এত দিন অবহেলায় পড়ে ছিল ইতিহাসের সাক্ষী। সেই কামানকে এ বার সবার সামনে তুলে নিয়ে এল বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসন। পর্যটকেরাও যাতে এই কামান দেখতে আসেন, সে জন্য সোমবার মহকুমাশাসকের অফিস চত্বরে কামানটি বসিয়ে সাজানোর কাজ শুরু হল।

মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল বলেন, ‘‘মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরের স্থাপত্য শৈলিকে মাথায় রেখেই কামানের চারপাশ সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দুই পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী বাউল কুম্ভকার এবং কাঞ্চন কুম্ভকার টেরাকোটার নকশা এবং হাতি, ঘোড়ার মূর্তি-সহ দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য দিয়ে সাজাবেন। বর্তমানের আগাছা ভরা বাগান সাফ সুতরো করেই এই কাজ শুরু হচ্ছে।’’

ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের অধীনে থাকা ছিন্নমস্তা এলাকার সুবিখ্যাত ‘দলমাদল কামান’-এর মতো বড় না হলেও এটিও যে সবার নজর কাড়বে তা নিয়ে প্রশাসনের অনেকেই এক মত। এত দিন ট্রেজারি অফিস চত্বরে দলমাদলের থেকে কিছুটা ছোট এই লোহার কামান সবার নজরের আড়ালে পড়েছিল। তাই কামানটিকে সামনে এনে সবার দেখার সুযোগ করে দিল মহকুমা প্রশাসন। সেই সঙ্গে ওই কামানকে সামনে রেখেই মহকুমা প্রশাসনিক ভবনকে আরও আকর্ষণীয় করা হচ্ছে। অতিথিদের কাছে ওই কামানই বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যকে এক ঝলকে মনে করিয়ে দেবে মত আধিকারিকদের।

মহকুমাশাসকের সঙ্গেই এ দিন কামান বসানোর কাজের তদারকি করছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নীলাঞ্জন তরফদার ও অন্যান্য কর্মীরা। কামানটি সিমেন্টের খুঁটির উপরে বসানোর কাজে হাত লাগিয়েছিলেন স্থানীয় কুসুমবনি গ্রামের ১২ জন শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে আসগর শেখ, সকেট দালাল, নিতাই লোহাররা বলেন, ‘‘বাপরে কী ভারী! এই কামান নিয়ে লোকজন যুদ্ধ করত কী করে?’’

বিষ্ণুপুর মহকুমা অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, কামানটির ওজন প্রায় ১০ কুইন্টাল। দৈঘ্য আট ফুট। এক ফুটের বেড়ের মধ্যি খানে সরু ফাঁপা অংশ আছে অনেকটাই। সেখান দিয়েই গোলা-বারুদ বেরোত। মল্লরাজাদের সাবেক রাজধানী বিষ্ণুপুরের ইতিহাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা ঐতিহাসিক চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত জানান, বিড়াই নদীর ধারে চাকদহ গ্রামের আদূরে মুণ্ডমালা ঘাটের কাছে প্রায় একশো বছর আগে মাটির নীচ থেকে গ্রামবাসী কামানটি পেয়েছিলেন। উদ্ধার করে সেটি তৎকালীন ফৌজদারি আদালতের সামনে এনে রাখা হয়। সেই আদালত ভবনের নীচের তলাতেই এখন ট্রেজারি অফিস।

চিত্তরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, কামানটি ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী বীর হাম্বিরের সময়কার। কারণ ইতিহাস বলে, বিদেশি শত্রু বিশেষশত মরাঠা দস্যুদের হাত থেকে মল্ল রাজধানীকে রক্ষা করতে কামানের ব্যবহার করা হয়েছিল। দাউদ খাঁ-র সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভ করেন বীর হাম্বির। যাই হোক, অত প্রাচীন এই কামানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কম নয়।’’ তিনি বর্তমান প্রজন্মের সামনে ওই কামানটি তুলে আনার জন্য প্রশাসনের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।

এ দিন বিষ্ণুপুর মহকুমা অফিসে এসেছিলেন কোতুলপুরের কারকবেড়িয়ার ভোলানাথ বারিকের মতো অনেকেই। কামান দেখেই ভোলানাথবাবু হাঁ। বলে ফেলেন— ‘‘বাহ্‌, এত দিন তো বড় কামানটাই দেখেছি। এটা তো দেখিনি। বেশ লাগছে বটে।’’ অনেকেইর মতে, কামানের সামনে ছোট্ট করে ইতিহাস লিখে রাখলে আগ্রহীদের কৌতূহল মিটবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Cannon Administration Tourists Tourism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE