Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

আদিবাসী গ্রাম উঠে এল শহরে

দশভূজাদেবী বাঁকুড়ায় আবির্ভূত হতে চলেছেন আদিবাসী বধূর সাজে! একেবারে আদিবাসী ঢঙে লালপেড়ে সাদা শাড়ি পরিহিতা দুর্গার কোমর ধরে আদিবাসী নৃত্যের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাবে লক্ষ্মী, সরস্বতীকেও।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩২
Share: Save:

দশভূজাদেবী বাঁকুড়ায় আবির্ভূত হতে চলেছেন আদিবাসী বধূর সাজে! একেবারে আদিবাসী ঢঙে লালপেড়ে সাদা শাড়ি পরিহিতা দুর্গার কোমর ধরে আদিবাসী নৃত্যের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাবে লক্ষ্মী, সরস্বতীকেও। মা দুর্গার মতোই এই দুই দেবীও আদিবাসী শাড়িতে সজ্জিতা। তার সামনে আদুল গায়ে মাথায় গামছা বেঁধে, সাদা ধুতি ধামসা মাদল বাজাতে দেখা যাবে গণেশকে। কার্তিকের হাতে থাকবে বাঁশুরি। বাদ পড়ছে না মহিষাসুরও। আদিবাসী সাজে সকলের সামনে বসে তিনি দু’ হাতে তাল ঠুকবেন!

বাঁকুড়ার প্রণবানন্দপল্লি সর্বজনীনের পুজোর থিম এ বার জঙ্গলমহল। ফাঁকা মাঠে কৃত্রিম ভাবে বানানো হচ্ছে জঙ্গলমহলের আস্ত একটি আদিবাসী গ্রাম। সেই গ্রামেই দেখা মিলবে আদিবাসী সাজে সজ্জিত মহিষাসুর-সহ সপরিবার দেবী দুর্গার। পুজো কমিটির সম্পাদক রথীনকুমার দে বলেন, “জঙ্গলমহল ও আদিবাসী সংস্কৃতি জেলার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাকে ফুটিয়ে তোলাই লক্ষ্য।”

এটা অবশ্য প্রথম নয়। আদিবাসী রূপে সপরিবার দেবীকে বছর তিনেক আগেও দেখা গিয়েছিল পুরুলিয়ার এক মণ্ডপে। সে বারও ওই মূর্তি গড়েছিলেন পুরুলিয়ার শিল্পী প্রণব সহিস। প্রণবানন্দপল্লির পুজোতেও তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ‘‘এ বারের থিম আরও আকর্ষক হবে’’—আশাবাদী প্রণব।

অন্য দিকে, বাঁকুড়ার লালবাজার পুজো কমিটির দুর্গাপুজো ‘কৃষ্ণ-ময়’ হতে চলেছে। পুজো কমিটির মণ্ডপ গড়া হচ্ছে মথুরার এক কৃষ্ণ মন্দিরের আদলে। গোটা প্যান্ডেলে লোহার জালি দিয়ে গড়া হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের নানা লীলা কাহিনি। প্যান্ডেল তৈরির দায়িত্বে রয়েছেন কাঁথির শিল্পী সুশান্ত মণ্ডল। বাঁকুড়ার সেরা পুজোগুলির মধ্যে লালবাজার অন্যতম। এ বারের থিম যে সকলের নজর টানবে, তা নিয়ে একরকম নিশ্চিত কমিটির সদস্যেরা। লালবাজার পুজো কমিটির সম্পাদক গৌতম দাসের দাবি, “রাতের ঝলমলে আলোয় মণ্ডপটির শোভা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।” পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য মৃত্যুঞ্জয় বাগদির কথায়, “শ্রীকৃষ্ণের লীলা কাহিনিতে সকলের টান চিরন্তন। এ বারের পুজোয় নতুন ভাবে সেই লীলা আস্বাদন করা যাবে।’’

থিমে বৈচিত্রের দিক দিয়ে বাঁকুড়ার পোয়াবাগান পুজো কমিটি বরাবরই প্রথম সারিতে থাকে। এ বার এই পুজো কমিটির থিম হল ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’। পুজো কমিটির সম্পাদক বিদেশ পাত্র জানাচ্ছেন, সর্ব ধর্ম সমন্বয় ঘটাতে মণ্ডপে মন্দির, মসজিদ ও গির্জা তো বটেই সব ধর্মের সংস্কৃতিকেই তুলে ধরা হচ্ছে। বাউল, ফকির থেকে আদিবাসী নৃত্য— রয়েছে নানা অনুষ্ঠান। মণ্ডপটিও বেশ অভিনব। জাতীয় পাখি ময়ূরের উপরে মন্দির, মসজিদ ও গির্জার আদলে প্যান্ডেল করা হচ্ছে।

থিমটি ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে খাতড়ার একটি ডেকরেটর সংস্থাকে। পুজো শুরু হতে আর তো কয়েক ঘণ্টা বাকি! এই অবস্থায় কাজ শেষ করতে রাত জেগে কাজ করে চলেছেন শিল্পীরা। বিদেশের কথায়, “বর্তমান পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখাটা আমাদের দেশের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই দিকটির কথা ভেবেই থিম নির্বাচন।”

মধ্য কেন্দুয়াডিহি সর্বজনীনের এ বারের থিম ‘ধন ধান্য পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা।’ ওই পুজো কমিটির সম্পাদক অচিন্ত্য কুণ্ডু জানান, পুজো মণ্ডপটি ধান, ডাল, গম, চট ইত্যাদি দিয়ে তৈরি।

শহরের কাটজুড়িডাঙা ইলেকট্রিক সাব-স্টেশন মোড়ের পুজোর থিম জেলারই অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র ‘বিষ্ণুপুর’। রাসমঞ্চ, শ্যামরাইয়ের মতো বিষ্ণুপুরের ঐতিহাসিক মন্দিরগুলি তুলে ধরা হবে এই থিমে।

অন্য বিষয়গুলি:

Adivasi village puja theme
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE