Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Purulia Monk Manhandle

গুজবের জেরে পুরুলিয়ায় আক্রান্ত গঙ্গাসাগরগামী উত্তরপ্রদেশের তিন সাধু, ঘটনায় গ্রেফতার ১২ জন

পুরুলিয়ার কাশীপুরে উত্তরপ্রদেশ থেকে গঙ্গাসাগরগামী তিন সাধুকে গণপিটুনির ঘটনায় ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। বিজেপিকে জবাব দিয়েছে তৃণমূল।

representational image

— প্রতীকী ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:৩০
Share: Save:

গুজবের জেরে গঙ্গাসাগরগামী উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা তিন সাধুকে মারধরের অভিযোগ উঠল স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়ার কাশীপুর থানার গৌরাঙ্গডি গ্রামে। খবর পেয়ে কাশীপুর থানার পুলিশ ওই তিন সাধুকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় মোট ১২ জনকে।

সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশের বরেলির বাসিন্দা তিন সাধু একটি গাড়ি ভাড়া করে গঙ্গাসাগরের উদ্দেশে বেরিয়েছিলেন। রাস্তায় রাঁচীর জগন্নাথ মন্দির দর্শন করে তাঁরা এসে পৌঁছন পুরুলিয়ার কাশীপুরে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে রাস্তার ধারে গাড়ি রেখে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করছিলেন। সাধুরা স্থানীয় এলাকায় ভিক্ষা করে খাবার জোগাড়ের চেষ্টা করলে এলাকায় গুজব ছড়িয়ে রটে যায় যে, সাধুরা নাবালিকা অপহরণ করার চেষ্টা করছেন। গুজব ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয়রা ওই তিন সাধুর উপর চড়াও হয়। গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি মারধর করা হয় সাধুদের সঙ্গে থাকা গাড়ির চালক এবং রাঁধুনিকেও। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাধুদের উদ্ধার করে কাশীপুর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তিন জন সাধু গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন। গৌরাঙ্গডির কাছে তিনটি মেয়ে স্থানীয় কালীমন্দিরে পুজো দিতে যাচ্ছিল। তাদের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে সাধুরা কিছু জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু ভাষা সমস্যার কারণে ভুল বোঝাবুঝি হয়। মেয়েরা ভাবে, সাধুরা মনে হয় তাদের পিছু নিয়েছেন। তখন স্থানীয় বাসিন্দারা এসে সাধু তিন জনকে দুর্গামন্দিরের কাছে নিয়ে গিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে। সাধুদেরও মারধর করা হয়। পুলিশ সাধুদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। একজন সাধুর অভিযোগের উপর ভিত্তি করে মামলা শুরু করে পুলিশ। ১২ জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’

শুক্রবার রাতে আচমকা থানায় হাজির হয়ে ওই তিন সাধুকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো। শনিবার তিন সাধুকে গঙ্গাসাগরের উদ্দেশে রওনা করানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সাধুদের উপর এই আক্রমণের ঘটনা নিয়ে আসরে নেমে পড়েছে বিজেপি। পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় বলেন, ‘‘এ রাজ্যে মাফিয়াদের কাছে সাধু-সন্তরাও নিরাপদ নন।’’

বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় এই ঘটনাকে মহারাষ্ট্রের পালঘরের সন্ন্যাসী নিগ্রহের সঙ্গে তুলনা করে বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তাঁর দাবি, গণপিটুনি যাঁরা দিয়েছিলেন, তাঁরা সকলেই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী।

এক্স হ্যান্ডলে মালবীয়ের বার্তাকে ট্যাগ করে রাজ্য সরকারের দিকে আক্রমণ শানান বঙ্গ বিজেপির নেতারাও। কলকাতায় এসে এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূল এবং রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরও। পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি তৃণমূল। তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘সন্দেহের বশে গ্রামের লোকেরা সন্ন্যাসীদের মারধর করেছেন। পুলিশ সাধুদের থানায় নিয়ে যায়। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১২ জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। তবুও বিজেপি চিরাচরিত অভ্যাসে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে নেমে পড়েছে। বিজেপি আইটি সেলের ছেলেরা যখন ধর্ষণের ঘটনা ঘটান, তখন অমিত মালবীয় চুপ করে থাকেন। আর অনুরাগ ঠাকুর বাংলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কেন কথা বলছেন, তিনিই তো দেশের গদ্দারদের গুলি করার নিদান দিয়েছিলেন অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে। তাঁরই তো জেলে থাকার কথা!’’

তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনাকে তৃণমূল সমর্থন করে না। গুজবের জেরে এলাকার মানুষের জনরোষে এমন ঘটনা ঘটে গিয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা না থাকলে এবং পুলিশ সঠিক সময়ে না পৌঁছলে আরও বড় ঘটনা ঘটে যেতে পারত। বিজেপি এই বিষয়টিকে নিয়ে অযথা বিভাজনের রাজনীতি করার চেষ্টা করছে।’’ এ দিকে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার শনিবার সকালে ভিডিয়ো কল করে নিগৃহীত সাধুদের কাছে রাজ্যবাসীর হয়ে ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy