লড়াকু: সূরজ (বাঁ দিকে) ও পল্লবী। নিজস্ব চিত্র
বয়স যখন মাত্র ছ’মাস, তখনই শরীরে থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়েছিল। তার পর থেকেই দক্ষিণের ভেল্লোর-সহ বিভিন্ন হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে হয়েছে বাবা-মাকে।
এখনও নিয়মিত রক্ত নেওয়া এবং চিকিৎসার জন্য মাসে চার দিন বাবা অথবা মায়ের সঙ্গে সিউড়ি সদর হাসপাতালে যেতে হয় তাঁকে। তাই বেশির ভাগ দিন স্কুলেই যাওয়াই হয় না। এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জেদ ও মনের জোরকে সম্বল করে লড়াই চালিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সূরজ মণ্ডল।
সাঁইথিয়ার কাগাস গ্রামে বাড়ি সূরজের। এ বার তিনি আমোদপুর জয়দূর্গা হাইস্কুল থেকে কলা বিভাগে ৪০৩ নম্বর নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। ওই স্কুল থেকেই ৪২৫ নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন। শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন সূরজ। তাঁর কথায়, ‘‘আমার জন্য পরিবারের লোকেদের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। শিক্ষক হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।’’
কিন্তু, ছেলের ইচ্ছের কথা জেনে পরিবারের লোকেরা পড়েছেন ভারী দুশ্চিন্তায়। কারণ, সূরজের বাবা রামকৃষ্ণ মণ্ডল প্রান্তিক চাষি। বিঘে খানেক জমি সম্বল। তাতে সংসার চলে না বলে স্ত্রী আশালতাকে বাড়িতে একটা ছোট্ট একটি মুদিখানার দোকান করে দিয়েছেন। সেই আয়েই ছেলের চিকিৎসা, পড়াশোনা-সহ ৪ সদস্যের সংসার চলে। বছর কয়েক আগে সূরজকে ভেল্লোরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে ঘটিবাটি পর্যন্ত বিকিয়ে গিয়েছে। এখনও প্রতি মাসে সূরজের চিকিৎসা বাবদ খরচ হয় প্রায় ২৫০০ টাকা। তাই তাঁরা ছেলেকে কী করে আর পড়াবেন, ভেবে পাচ্ছেন না।
রামকৃষ্ণবাবু বলছিলেন, ‘‘ছেলে জেদ ধরেছে কলেজে পড়াশোনা করবে। কিন্ত কী করে তা সম্ভব হবে, ভেবে পাচ্ছি না। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি আমাদের যে আছে অর্থের টানাটানিও।’’
শিক্ষক হয়ে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চান লাভপুরের ফিঙতোড়ের পল্লবী পালও। তিনি এ বছর নানুর চণ্ডীদাস স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কলা বিভাগে ৪৮৯ নম্বর নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। ভূগোল অথবা ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষক হতে চান। সেই কথা শুনে তাঁর পরিবারের লোকেরাও পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। কারণ, পল্লবীর বাবা প্রশান্ত পাল মাটির হাঁড়ি-কলসি তৈরি করে হাটে বাজারে বিক্রি করে বেড়ান। যৎসামান্য আযে সংসার চালানোই মুশকিল। ফলে, পল্লবীকেও পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে বাবাকে সাহায্য করতে হয়। মেয়ের স্বপ্নের কথা শুনে প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘হাঁড়ি-কলসি বিক্রি করেই এত দিন ওর পড়াশোনা আর সংসার চলাতে হয়েছে। শুনেছি, কলেজে পড়ার খরচ অনেক বেশি। জানি না চালাতে পারব কিনা।’’
সূরজের মতো পল্লবীও বলছেন, ‘‘আমাকে পড়ানোর জন্য বাবা-মাকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। তাই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তাঁদের সেই ত্যাগের মর্যাদা দিতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy