মঞ্চে বক্তব্য তখন রাখছেন বামফ্রন্ট রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। ঝালদার হাটতলা মাঠে। ছবি: প্রদীপ মাহাতো।
আইসিএসই পরীক্ষার মধ্যে বামফ্রন্টের কর্মিসভায় শব্দবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে দাবি করে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাল তৃণমূল। শুক্রবার ঝালদার হাটতলা ময়দানের ওই কর্মিসভায় উপস্থিত ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। অভযোগপত্রের সঙ্গে ওই সভার ছবিও প্রশাসনের কাছে জমা দিচ্ছে রাজ্যের শাসকদল। বামফ্রন্ট নেতারা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া ঝালদার পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকারের দাবি, নাম কা ওয়াস্তে ত্রিপলের ঘেরা দিয়ে বড় সাউন্ডবক্স ব্যবহার করে শব্দবিধি লঙ্ঘন করেছেন বিমানবাবুরা। ঘটনা হল, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মাঝের ফাঁকা এই সময়ে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি ঝালদায় জনসমাবেশ করে লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করার কথা ভেবেছিল বাম-তৃণমূল, দুই শিবিরই। শুক্রবারই দু’দলের সভা করার কথা ছিল। তৃণমূলের সভায় আসার কথা ছিল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর। যদিও আইসিএসই পরীক্ষা চলায় মাইক বাজানোর অনুমতি পায়নি কোনও পক্ষই। তার জেরে তৃণমূল সভা স্থগিত করে দেয়। আর বামফ্রন্ট জন সমাবেশের ডাক দিয়েও শেষ পর্যন্ত বর্ধিত কর্মিসভা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বামফ্রন্টের সেই কর্মিসভা ঘিরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। প্রদীপবাবু বলেন, “আমরাও বামেদের মতো সভা করতে পারতাম। আমরা বড় সভা করব ঠিক করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসন জানায়, পুরো ঘেরা জায়গায় কম আওয়াজে সভা করতে হবে। এ ভাবে সভা করলে সভা ছোট করতে হত। শুভেন্দু অধিকারী সভা করতে এলে অত ছোট আকারে সভা করা কোনও ভাবেই সম্ভব হত না। সে কথা মাথায় রেখেই আমরা সভা স্থগিত করেছি।” তাঁর অভিযোগ, এ দিন দেখা গেল, বামফ্রন্ট রাস্তার দিকটা নাম কে ওয়াস্তে ঘেরা দিয়ে বড় সাউন্ডবক্স ব্যবহার করে প্রায় প্রকাশ্য সভাই করল। “এটা কি শব্দ বিধিভঙ্গের আওতায় পড়ে না?”—প্রশ্ন ঝালদার পুরপ্রধানের।
ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সভাপতি নিশিকান্ত মেহেতা অবশ্য বলেন, “আমরা ঘেরা জায়গার মধ্যেই সভা করে সাউন্ডবক্স ব্যবহার করেছি। তা ছাড়া প্রশাসন আমাদের সভা করার অনুমতিও দিয়েছিল।” তাঁর আরও দাবি, পরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে কিছু মহল থেকে। কিন্তু, ঝালদায় আইসিএসই পরীক্ষাকেন্দ্র নেই। প্রদীপবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “যেখানে সভা হয়েছে, সেটা জনবহুল কি না, তা প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া আমাদের ছবি পরীক্ষা করলেই বোঝা যাবে। তা ছাড়া, ঘেরা জায়াগায় কম শব্দের সাউন্ডবক্স ব্যবহার করার কথা। বামেদের সভায় কত বড় সাউন্ডবক্স ব্যবহার করা হয়েছে, তা-ও ছবিতেই বোঝা যাবে। আমরা সবই প্রশাসনের কাছে জমা দেব।”
পুরুলিয়ার মহকুমাশাসক (পশ্চিম) নিমাইচাঁদ হালদার জানান, বামফ্রন্টকে সভা করার অনুমতি দেওয়া হলেও প্রশাসনের তরফে বলে দেওয়া হয়েছিল, কোনও জনবহুল স্থানে সভা করা যাবে না। পুরো ঘেরা জায়গার মধ্যে সাউন্ডবক্স ব্যবহার করে করতে হবে। মহকুমাশাসক বলেন, “আমাদের ভিডিওগ্রাফি টিম সভার রেকর্ডিং নিয়েছে। সেই রেকর্ডিং দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
এর আগে এ দিনের কর্মিসভায় তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেন বিমানবাবু। তিনি বলেন, “ওদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমন জায়গায় গিয়েছে, প্রার্থী করতে পারছে না। এক নেতা অন্য নেতাকে পছন্দ করে না। তাই তারাদের (তারকা) প্রার্থী করছে তৃণমূল।” কর্মিদের উদ্দেশে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের বার্তা, “আমাদের তারকা নেই। আমাদের লোকেরা মানষের সঙ্গে থাকে। আমাদের নীতি হচ্ছে মানুষের কথা বলা।” বর্তমান রাজ্য সরকার সরকার কর্মসংস্থান বা অন্যান্য বিষয়ে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, সে প্রশ্নও এ দিন তোলেন বিমানবাবু। কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “বামফ্রন্ট একটা দলের ফ্রন্ট নয়, ১১টা দলের ফ্রন্ট। এখানে সিপিএমের, ফরওয়ার্ড ব্লকের না সিপিআইয়ের প্রার্থী, তা দেখবেন না। এখানে লড়ছেন বামফ্রন্টের প্রার্থী।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy