রাজনীতিতে তাদের দল প্রতিপক্ষ। কিন্তু, কারখানা খোলার দাবিতে এক সঙ্গে পথে তিন শ্রমিক সংগঠন। শুক্রবারের নিজস্ব চিত্র।
দুর্গাপুরে বৈঠক ব্যর্থ। মালিকপক্ষ অনুপস্থিত থাকায় সমাধানসূত্র বেরোল না বিষ্ণুপুরের বৈঠকেও। আপাতত তাই লক-আউট বহালই থাকছে বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ সেন্টারের ‘শ্রী বাসবী ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ কারখানায়। এই অবস্থায় কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে আন্দোলকারী শ্রমিক সংগঠনগুলি এবং প্রশাসনও।
কারখানা খোলা নিয়ে বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হলেও তাতে কোনও রফাসূত্র বেরোয়নি। শুক্রবার দুপুরে ফের বৈঠক ছিল বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসকের অফিসে। বন্ধ থাকা ফেরো অ্যালয় কারখানার কাজ হারানো শ্রমিকেরা মিছিল করে এসেছিলেন ওই অফিসে। কিন্তু, গেটেই তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। তিন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়। ফলে গেটের সামনে মূল রাস্তায় বসে পড়েন শ্রমিকেরা। তার জেরে ঘণ্টা দুয়েক যান চলাচল ব্যাহত হয় বিষ্ণুপুর শহরের রবীন্দ্র স্ট্যাচুর কাছে ওই রাস্তায়। আরামবাগের দিক থেকে বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডে ঢোকা বাসগুলিকে পুলিশ উল্টো রাস্তায় ঘুরিয়ে দেওয়ায় সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা।
দুপুর ২টো থেকে প্রায় দু’ঘণ্টা চলা এ দিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত, সহকারী শ্রম কমিশনার (বিষ্ণুপুর) সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বিডিও (বিষ্ণুপুর)প্রশান্তকুমার মাহাতো, আইসি (বিষ্ণুপুর) স্বপন দত্ত। ছিলেন তৃণমূল, সিপিএম এবং বিজেপি-র শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তবে, দুর্গাপুরে এলেও এই বৈঠকে যোগ দেননি কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও প্রতিনিধি। স্বাভাবিক ভাবেই তাই বৈঠকে সমাধানসূত্রও মেলেনি। বৈঠক শেষে সিটু-র বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক কিঙ্কর পোশাক, আইএনটিটিইউসি-র দ্বারিকা ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ সেন্টারের ইউনিট সম্পাদক উদয় ভকত, ভারতীয় জনতা মজদুর মোর্চার বিষ্ণুপুর জেলা সাংগঠনিক সভাপতি অঞ্জন নাগচৌধুরী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “মালিকপক্ষের বৈঠক এড়িয়ে চলা আমরা মেনে নেবো না। আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। কারখানা খোলার জন্য মহকুমাশাসককে উদ্যোগী হতে বলেছি। প্রয়োজনে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া এবং জেলাশাসককে দিয়ে ফের বৈঠক ডাকার অনুরোধও জানিয়েছি আমরা।”
মহকুমাশাসক বলেন, “ওই কারখানার মালিকপক্ষ আগে সমস্যার কথা না জানিয়ে, প্রশাসনের কাছে কোনও আবেদন না করেই লক-আউট ঘোষণা করেছে। এটা বেআইনি। এ দিনের বৈঠকে ডেকেও মালিকপক্ষের কোনও প্রতিনিধিকে পাওয়া গেল না। আমি সহকারী শ্রম কমিশনারকে আইনি পদক্ষেপ করতে বলেছি। জেলাশাসককে শ্রমিক সংগঠনের দাবি-দাওয়ার কথাও জানাবো।” না আসার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বন্ধ কারখানার ভাইস প্রেসিডেন্ট এন এস রাজু মোবাইলে বলেন, “সংস্থার ডিরেক্টরের সঙ্গে একটি জরুরি মিটিং থাকায় ওই বৈঠকে যাওয়া হয়নি। তবে, বিদ্যুতের দাম না কমানো পর্যন্ত কারখানা খোলা সম্ভব নয়। ওরা আইনি ব্যবস্থা নিলে নিক! আমাদের কিছু করার নেই।”
এ দিনের মিছিলে সামিল হয়েছিলেন ওই কারখানার বহু মহিলা শ্রমিকও। মেটাল হ্যান্ডালিংয়ে কাজ করা ভারতী দাস, জ্যোৎস্না বাউরি বলছিলেন, “কারখানায় কাজ নেওয়ার পরে কৃষিকাজ তো ভুলেই গিয়েছি। ১৪ বছর মেটালের কাজ করছি। তাতেই সংসার চলত। এ বার কী হবে? সরকার কারখানা খোলার ব্যবস্থা করুক। সেই দাবি নিয়েই এসেছি।” তিন ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে চরম দুর্ভাবনায় পড়েছেন কারখানার প্রোডাকশন বিভাগের কর্মী শেখ মুক্তার। তাঁর কথায়, “কাজ নেই। দোকান ধারে মালপত্র দিতে চাইছে না। চেয়েচিন্তে একবেলা জুটছে। কারখানা না খুললে কী হবে, জানি না।”
এ দিনও কোনও আশার আলো না মেলায় চোখে কান্না নিয়েই বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন তাঁরা। তিন দলের শ্রমিক নেতাদের দাবি, যত দিন কারখানা না খোলে, রাজ্য সরকার ত্রাণের ব্যবস্থা করুক। মহকুমাশাসক বলেন, “বন্ধ কারখানার কর্মীদের জন্য এমন কোনও ব্যবস্থার কথা আমাদের জানা নেই। তবে, স্থানীয় স্তরে ১০০ দিনের কাজের আওতায় ওই শ্রমিকদের জন্য কিছু করা যায় কি না, তা ওই গ্রামের প্রধানকে দেখতে বলা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy