সাঁইথিয়ার তিলপাড়া বাস স্ট্যান্ডের সেই বট গাছ।
যিনি বলেছিলেন, একটি গাছ একটি প্রাণ, তিনি নির্ঘাৎ তিলপাড়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে বটগাছটা দেখেনি। সাঁইথিয়ার বনগ্রাম পঞ্চায়েতের তিলপাড়ায় এই বটের আশ্রয়ে বেঁচে আছে কত প্রজাতির সাপ, পাখি, কাঠবেড়ালি, কেউ হিসেব রাখে না।
গ্রামের বাসিন্দা রাখালরাজ কুণ্ডু, মিঠু শীলরা জানালেন, তাঁরা ছেলেবেলা থেকেই দেখে আসছেন ওই গাছে বাসা বেঁধেছে টিয়া, শালিক, ময়না, পায়রা, কাঠবেড়ালি। কোটরের মধ্যে খরিষ, কেউটে, আলানের মতো বিষধর সাপও। বংশ পরম্পরায় চলে আসছে সহাবস্থান। ‘‘এই গ্রামের লোকেরা কখনওই ওদের কিছু বলে না। অন্য জায়গা থেকে কেউ সাপ বা পাখি ধরতে আসলেও আমরা বাধা দিই,’’ বললেন এক গ্রামবাসী। বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকার ব্যবসায়ী তরুণ বড়ুই, বাপি দেবনাথরা জানালেন, ‘‘নজর এড়িয়ে কেউ পাখি ধরে ফেললে আমরা সেই পাখি আবার ছেড়ে দিই।’’
গ্রামে যখন বিদ্যুৎ আসেনি, তখন গ্রীষ্মের দুপুরে আরাম পেতে বটের ছায়ারই শরণ নিতে হত, জানালেন প্রবীণরা। দুর্গাপুজো-সহ নানা রকম দেবদেবীর পুজো, কীর্তন, গ্রামের প্রায় সব অনুষ্ঠানই এই গাছের নীচেই হয়। বাসিন্দারা জানালেন, অনেকে ভক্তি করে গাছটিকে। সেই সম্ভ্রম আর ভয়ে কেউ গাছে ওঠে না।
বসবাসকারীরা।
একে ‘কুসংস্কার’ বলে একেবারে উড়িয়ে দিতে রাজি নন সাঁইথিয়া অভেদানন্দ কলেজের প্রাণী-বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান দেবকীরঞ্জন প্রামাণিক। তিনি বলেন, ‘‘ওই গ্রামের মানুষ প্রকারান্তরে বিজ্ঞানকে বাঁচিয়ে রাখছেন। ওই বটগাছকে কেন্দ্র করে এক ‘ইকোসিস্টেম’ বা বাস্তুতন্ত্র তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে গাছ, মানুষ, পশুপাখির মধ্যে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।’’
অন্য গাছের চেয়ে বট গাছে পাতা থাকে বেশি। তাই সালোক-সংশ্লেষের সময় অন্য গাছের চাইতে বাতাস থেকে বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন ফিরিয়ে দেয়। একটি প্রমাণ বয়সের বটগাছ দৈনিক গড়ে ৫০-৭০ গ্যালন জলীয় বাষ্প ছাড়ে। যা স্থানীয় এলাকার আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে। মূল গাছ এবং গাছের ঝুরির শিকড় অনেকটা ছড়িয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকার মাটি আঁকড়ে রাখে। ভূমিক্ষয় রোধ করে। ‘‘নদী তীরে যে সব জায়গায় বট গাছ আছে, সেখানকার ভূমিক্ষয় তুলনায় অনেক কম,’’ বলেন দেবকীরঞ্জনবাবু।
সম্প্রতি রাজ্যে ‘অরণ্যসপ্তাহ’ পালন করা হল। বন দফতর থেকে সরবরাহ করা হয়েছিল প্রচুর চারা — শিশু, শাল, সেগুন, ইউক্যালিপটাস, সোনাঝুরি, আম, কাঁঠাল। বটের চারা দেওয়া হয়নি। কিন্ত কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বীরভূম জেলা বন দফতরের এক আধিকারিক জানালেন ‘‘আসলে ওই সব গাছগুলির চাহিদা বেশি। কেউ বট লাগাতে চান না।’’
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy