Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
রাতেই কর্মী তাড়িয়ে গেটে তালা

প্রতিবাদে পথ অবরোধ বিষ্ণুপুরে

রাতের ডিউটিতে আসা কর্মীদের মাঝরাতেই বের করে দিয়ে গেটে তালা মেরে ‘লক-আউট’ নোটিস ঝুলিয়ে দিল কারখানা কর্তৃপক্ষ। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থানার দ্বারিকা গ্রামের ফেরো অ্যালয় কারখানায় সোমবার রাতের ওই ঘটনায় এক ধাক্কায় কাজ হারালেন অন্তত ৮০০ শ্রমিক। কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে একযোগে পথে নামল তৃণমূল, সিপিএম এবং বিজেপি।

কারখানার গেটে লক-আউট নোটিস।—নিজস্ব চিত্র

কারখানার গেটে লক-আউট নোটিস।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫১
Share: Save:

রাতের ডিউটিতে আসা কর্মীদের মাঝরাতেই বের করে দিয়ে গেটে তালা মেরে ‘লক-আউট’ নোটিস ঝুলিয়ে দিল কারখানা কর্তৃপক্ষ। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থানার দ্বারিকা গ্রামের ফেরো অ্যালয় কারখানায় সোমবার রাতের ওই ঘটনায় এক ধাক্কায় কাজ হারালেন অন্তত ৮০০ শ্রমিক। কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে একযোগে পথে নামল তৃণমূল, সিপিএম এবং বিজেপি।

মঙ্গলবার সকালে ঘটনার কথা জানাজানি হতেই কারখানা গেটের সামনে ভিড় জমান কর্মী ও শ্রমিকেরা। প্রথমে শুরু হয় গেটে অবস্থান। পরে তৃণমূল, সিপিএম এবং বিজেপির শ্রমিক সংগঠনগুলি কর্মচারীদের নিয়ে নেমে পড়ে রাস্তায়। কারখানার সামনের বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রোড অবরোধ শুরু হওয়ায় তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তার দুই প্রান্তে আটকে পড়ে দ্বারকেশ্বর নদ থেকে বালি নিয়ে আসা ও যাওয়ার লরি-ট্রাক। এ ছাড়াও বিষ্ণুপুর, সোনামুখী ও পাত্রসায়র রুটের বহু বাস দুপুর পর্যন্ত জট না কাটায় সেখানে আটকে যায়। বহুক্ষণ অপেক্ষা করেও উপায়ান্তর না দেখে শেষে হেঁটেই বিষ্ণুপুরের দিকে ফিরতে দেখা যায় যাত্রীদের। শেষ পর্যন্ত বিকেলে অবরোধ ওঠে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০০০ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের এক শিল্পগোষ্ঠী দ্বারিকা ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ সেন্টারে ‘শ্রী বাসবী ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামে এই ফেরো অ্যালয় কারখানাটি তৈরি করেছিল। সংস্থার ভাইস-প্রেসিডেন্ট এন এস রাজু বিষ্ণুপুরে থেকে কারখানার কাজ দেখাশোনা করতেন। কর্মীদের দাবি, বেশ কিছুদিন হল তাঁকে কারখানায় বা বিষ্ণুপুরে দেখা যাচ্ছিল না। কারখানার ম্যানেজার (পার্সোনেল) ভাস্কর রাও-সহ কারখানার অন্য কোনও অফিসারকেও দিন সাতেক ধরে তাঁরা দেখেননি বলে কর্মীরা জানিয়েছেন। কারখানায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৮০০ জন কর্মী-শ্রমিক। গত দুই-তিন মাস ধরে বেতন নিয়মিত হচ্ছিল না। কর্মীদের মনে আশঙ্কা ছড়িয়েছিল তখন থেকেই। সম্প্রতি কারখানায় নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যাও বাড়িয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। এ দিনের অবরোধে সামিল ওই কারখানার নাইট শিফ্টের শ্রমিক শেখ লাল বলেন, “সোমবার রাত ১২টা নাগাদ হঠাৎই নিরাপত্তারক্ষী পাঠিয়ে কারখানা থেকে জোর করে আমাদের বের করে দেওয়া হল। ঠান্ডার মধ্যে বাকি রাতটা আমাদের পথেই কাটাতে হয়েছে।” এই মুহূর্তে কারখানার ভিতরে এখন রয়েছেন একশোরও বেশি নিরাপত্তারক্ষী। তাঁরা কর্মী-শ্রমিকদের কোনও ভাবেই ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না। আটকে দেওয়া হয়েছে সংবাদমাধ্যমকেও।

লক-আউট নোটিসে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ করার জন্য মূলত শ্রমিকদেরই দায়ী করেছেন। নোটিসে লেখা হয়েছে: ১) কর্মী-শ্রমিকেরা কারখানার নিয়মনীতি মেনে কাজ করছেন না এবং তুচ্ছ কারণেও কাজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন। ২) কারখানার মালপত্র সরাতে শ্রমিকেরা বাধা দিচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মাফিক শিফ্ট মেনে কাজও করছেন না। ৩) বেশ কয়েক বছর ধরে কারখানায় বিপুল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। ৪) এই কারখানা রুগ্ণ ও তা বিআইএফআর-এর (বোর্ড ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিকনস্ট্রাকশন) অধীনে রয়েছে। ৫) মূল কাঁচামালের (ক্রোম ওর) চাহিদামতো জোগান নেই। ৬) বিষ্ণুপুরে কারখানা চালানোর বিদ্যুৎ খরচ দুর্গাপুর বা আসানসোল শিল্পাঞ্চলের তুলনায় বেশি।

এ দিন ফোনে অনেক চেষ্টা করেও সংস্থার ওই ভাইস-প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি কর্মীরা। তাঁদের ক্ষোভ আরও বেড়েছে, লক-আউটের নোটিসে ঝোলানো কারণগুলি দেখে। শ্রমিকদের দাবি, আসলে পরিকল্পনা মাফিক কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। এবং শ্রমিকেরা যাতে প্রতিবাদ না করতে পারেন, সে জন্য সম্প্রতি নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা অনেকটা বাড়ানো হয়েছিল। “সেই রক্ষীদের দিয়েই জোর করে কারখানা থেকে আমাদের বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হল!”sssssক্ষোভে ফেটে পড়ে বললেন অবরোধে সামিল একাধিক কর্মী-শ্রমিক। তাঁদের অভিযোগ, কাঁচামাল (ওড়িশার মাটি) পাওয়া যাচ্ছে না, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ইত্যাদি অজুহাত দেখিয়ে দু’মাস বেতন দেননি কারখানা কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত চক্রান্ত করে কারখানাই বন্ধ করে দেওয়া হল।

শ্রমিকদের আরও ক্ষোভ, একটা বড় কারখানা এ ভাবে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও স্থানীয় প্রশাসন তেমন গা করছে না। কেন প্রশাসন হস্তক্ষেপ করল না, সে প্রশ্নের জবাবে বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত প্রথমে বলেন, “এটা কারখানার অভ্যন্তরীণ সমস্যা। প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি।” পরিস্থিতি অন্য দিকে যাচ্ছে, আঁচ করে অবশ্য পরের দিকে প্রশাসন হস্তক্ষেপ করে। রাতে বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানান, সমস্যা মেটাতে শ্রম কমিশনারকে তিনি বৈঠক ডাকতে বলেছেন। বিষ্ণুপুরের সহকারী শ্রম কমিশনার সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে এই লক-আউট ঘোষণা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষকে কারখানা বন্ধ করার আগে সরকারের কাছে আবেদন করতে হত। সে-সব মানা হয়নি। কারখানা খোলার জন্য বৃহস্পতিবার ত্রিপাক্ষিক (কর্তৃপক্ষ ,কর্মী ও শ্রমিক সংগঠন) বৈঠক ডেকেছি।” তিনি জানান, অফিসে কোনও কর্তারই দেখা মেলায় বৈঠকের চিঠি রক্ষীদের হাতেই দেওয়া হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

lock out bishnupur ferro alloy factorie
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy