বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যকে ঘটনার কথা শোনাচ্ছেন এক কর্মী।—নিজস্ব চিত্র
রহিম শেখের খুনের ঘটনায় লিখিত অভিযোগে সরাসরি তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলামের বিরুদ্ধেই গুরুতর অভিযোগ করল নিহতের পরিবার। তাঁদের দাবি, দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী তথা জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ ওই কর্মাধ্যক্ষের উস্কানিতেই ওই খুনের ঘটনা ঘটেছে। জাফারুল অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, ওই খুনের ঘটনায় রাজনীতির কোনও যোগ নেই। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযোগপত্রে নাম থাকলেও এখনও পর্যন্ত পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ভাবেনি।
বিজেপির অভিযোগ, সাম্প্রতিক লোকসভা ভোটের পরে এলাকায় প্রভাব বাড়ায় তৃণমূল নানা ভাবে তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিয়ে আসছিলই। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে অগ্রাহ্য করেই বিজয় মিছিলের নামে এলাকায় বিরোধীদের উপরে সন্ত্রাস শুরু হয় বলে অভিযোগ। এমনকী, এলাকার বহু সিপিএম সমর্থক বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে প্রায় দিনই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁদের বাড়িতে ঢুকে লুঠপাট ও ভাঙচুর চালান বলেও অভিযোগ। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও কোনও ফল মেলেনি। স্থানীয় পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের কাজই হোক কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষেত্রে সরকারি অনুদান সব কিছু থেকেই বঞ্চিত রাখা হচ্ছিল গ্রামের জনা কুড়ি পরিবারকে। তাঁদের দাবি, এই পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি শিবিরে আশ্রয় নেওয়ায় এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব আরও রুষ্ট হয়। রবিবার গ্রামে গিয়ে দেখা গেল একটি পুকুরে ফেলে রাখা হয়েছে ছোট্ট একটি ঘুমটি দোকান। বিজেপিকে সমর্থন করায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই ওই কাণ্ডটি করেছে বলে অভিযোগ করলেন বাসিন্দাদের একাংশ। ওই দোকানটি একটি প্রতীক মাত্র। শনিবার রহিম শেখের মৃত্যুই এলাকার বিজেপি সমর্থকদের উপরে তৃণমূলের আক্রোশের চূড়ান্ত নমুনা বলে বর্ণনা করেছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব।
গত পঞ্চায়েত ভোটে অভিযুক্ত জাফারুলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে ছিলেন প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএমের অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায়। গোটা ইলামবাজার ব্লকে ওই একটি মাত্র আসনেই ভোট হয়েছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, জাফারুলের নেতৃত্বে তৃণমূল সন্ত্রাস চালিয়েই কাউকে মনোনয়ন জমা করতে দেয়নি। এ দিন অন্নপূর্ণা বলছিলেন, “জাফারুলের অগোচরে ওই খুন হয়নি বলেই মনে করছি। তৃণমূল গোটা রাজ্য জুড়েই সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। ইলামবাজার তার ব্যতিক্রম নয়। আমার পঞ্চায়েতের নতুনগ্রামে সিপিএম জিতেছে জেনে লোকসভা ভোটের ফল বেরনোর তৃণমূল ওই এলাকায় যা নয় তা করেছে। পুরুষ-মহিলা কাউকে রেহাই দিচ্ছে না। পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করলে এ ভাবে রহিম শেখদের মরতে হত না।” সমস্ত অভিযোগই যদিও অস্বীকার করেছেন অনুব্রত ঘনিষ্ঠ ওই নেতা। জাফারুল বলেন, “নিছক গ্রাম্য বিবাদের জেরেই ওই খুন।” পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি দাবি করেন, ব্লকের ১৩৭টি বুথের মধ্যে মাত্র ২১টিতে কোথাও সিপিএম কোথাও বিজেপি এগিয়ে। খোদ কানুর গ্রামে মোট ৯৫০ ভোটারের মধ্যে তৃণমূল ৪১৪, সিপিএম ৩৬২, কংগ্রেস ১৪টি এবং বিজেপি মাত্র ১২টি ভোট পেয়েছে। তাঁর দাবি, “বিজেপির এই ভোটপ্রাপ্তি আমাদের মাথাব্যাথার কারণ নয়। ওই গ্রামে আমাদের আক্রমণ করতে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।” নিহতের পরিবার অবশ্য তাঁর ওই দাবিকে উড়িয়েই দিচ্ছেন। এলাকায় বিজেপির সংগঠন মাথা চাড়া দিতেই সমর্থকদের মনে ভয় ঢোকাতে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy