সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র (বাঁ দিকে) এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের কাছে পৌঁছে দিতেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’। শুক্রবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে সুজয়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে পেশ করা ইডির চার্জশিটে এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে। ইডির নথিতে অভিষেকের নাম থাকার বিষয়টি চার্জশিট পেশের এক দিন আগে, অর্থাৎ বৃহস্পতিবারই জানিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন।
১২৬ পাতার মূল চার্জশিটের ৭৫ নম্বর পাতায় বলা হয়েছে, তৎকালীন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি অভিষেকের আর্থিক বিষয় দেখভাল করতেন সুজয়কৃষ্ণ। ইডির চার্জশিটের ওই অংশে এ-ও বলা হয়েছে, অভিষেকের বার্তা নিয়ে মানিকের দফতরে যেতেন সুজয়কৃষ্ণ। ৩২৫ জন চাকরিপ্রার্থীকে ২০১৪ সালের টেটে উত্তীর্ণ করার জন্য তাঁদের যাবতীয় তথ্য মানিককে সুজয়কৃষ্ণ পাঠিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে ইডির চার্জশিটে।
চার্জশিটের ৭৫ নম্বর পাতার সাত নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে, মানিকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে গিয়েছেন সুজয়কৃষ্ণ। নির্দিষ্ট একটি ফোন নম্বর থেকে ২০১২ এবং ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড মানিককে পাঠাতেন তিনি। সুজয়কৃষ্ণে ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তি ছিলেন, এমনটা দাবি করে চার্জশিটে বলা হয়েছে, কোনও রাজনৈতিক পদে না থাকলেও, রাজ্যের শিক্ষা দফতর কিংবা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে যুক্ত না থাকা সত্ত্বেও মানিকের দফতরে অবাধ যাতায়াত ছিল সুজয়কৃষ্ণের। আর এই প্রভাবের কারণেই বহু চাকরিপ্রার্থী তাঁদের অ্যাডমিট কার্ড-সহ অন্যান্য নথি তাঁকে পাঠাতেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই চার্জশিটে। এ-ও উল্লেখ করা হয়েছে যে, চাকরিপ্রার্থীদের বাছাই করা এবং নিয়োগ করার বিষয়ে কথা বলতে ঘন ঘন মানিকের দফতরে যেতেন সুজয়কৃষ্ণ।
সুজয়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে তদন্তের একটি রিপোর্ট দিল্লিতে পাঠায় ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর পদমর্যাদার এক অফিসারের সই-করা সেই নথির ৩১ নম্বর পাতায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নামের উল্লেখ রয়েছে বলে ইডি সূত্রে জানা যায়। তবে ওই নথির ভিত্তিতে অভিষেক সম্পর্কে কোনও পদক্ষেপ করা হবে, তা নয়। পুরো বিষয়টিই এখনও ‘তদন্তসাপেক্ষ’ বলে ইডির এক আধিকারিক জানান।
গ্রেফতারির দু’মাসের মাথায় নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত সুজয়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে তদন্তকারী সংস্থা ইডি। ইডি সূত্রে খবর, শুক্রবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে সুজয়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে ১২৬ পাতার মূল চার্জশিট জমা পড়েছে। মোট চার্জশিট অবশ্য সাত হাজার ৬০০ পাতার। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, চার্জশিটে ‘এসডি কনসালটেন্সি’ এবং ‘ওয়েলথ উইজেড’ নামের দু’টি সংস্থার নাম রয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতিতে সুজয়কৃষ্ণের সঙ্গে প্রায় ২০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, চার্জশিটে এমনটা উল্লেখ রয়েছে বলে ইডি সূত্রের খবর।
গত ৩০ মে প্রায় ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কে গ্রেফতার করে ইডি দাবি করেছিল, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের সঙ্গে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সেতুবন্ধনের কাজ করেছিলেন সুজয়। মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। ২০১৮ সাল থেকে এই দুর্নীতিতে ‘কাকু’ জড়িত বলে দাবি করে ইডি। জেলে থাকাকালীন সম্প্রতি সুজয়ের স্ত্রীর মৃত্যু হয়। সে কারণে বেশ কিছু দিন প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি। গত ১৭ জুলাই জেলে ফিরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তার পর থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার তাঁর আইনজীবী সেলিম রহমান আদালতে সুজয়ের হৃদ্যন্ত্রে সমস্যার কথা জানিয়ে জামিনের আবেদন করেন। আদালতে জানানো হয়েছে, ‘কালীঘাটের কাকু’র ধমনীতে তিনটি ‘ব্লকেজ’ ধরা পড়েছে। ‘বাইপাস সার্জারি’ করা হতে পারে। এর পর তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখতে চেয়েছিলেন বিচারক। বিকেলে সেই রিপোর্ট জমা দিয়ে আরও এক বার জামিনের আবেদন করা হয়। কিন্তু জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তাপস মণ্ডল সিবিআইয়ের কাছে দাবি করেছিলেন, অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় কুন্তল নাকি আশ্বাস দিয়ে বলতেন, ‘‘কালীঘাটের কাকুর সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’ ইডি সূত্রে জানা যায়, পরে গোপাল দলপতি এবং তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, কুন্তলের ওই কালীঘাটের ‘কাকু’ রাজ্যের এক প্রভাবশালী শীর্ষ নেতার সংস্থার চিফ এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও)। তার পর থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ‘আতশকাচের তলায়’ আসেন সুজয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy