Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

রাজনীতির বিভাজন স্পষ্ট স্মরণসভায়

দুই প্রতিবাদীর স্মরণসভায় লাগল রাজনীতির রং। খাদ্যমন্ত্রীর দায়ের করা মানহানির মামলায় আদালতে হাজিরা না দেওয়ায় শনিবারই সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী বরুণ বিশ্বাসের দিদি প্রমীলা রায়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বরুণ বিশ্বাসের দিদি প্রমীলা রায়। নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বরুণ বিশ্বাসের দিদি প্রমীলা রায়। নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

দুই প্রতিবাদীর স্মরণসভায় লাগল রাজনীতির রং।

খাদ্যমন্ত্রীর দায়ের করা মানহানির মামলায় আদালতে হাজিরা না দেওয়ায় শনিবারই সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী বরুণ বিশ্বাসের দিদি প্রমীলা রায়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। আর রবিবার নিহত শিক্ষক বরুণের স্মরণসভায় হাজির থাকলেন হাতে গোনা কুড়ি-পঁচিশ জন। তৃণমূলের কেউ আসেননি। তবে বিজেপি নেতৃত্ব মঞ্চে হাজির ছিলেন, বক্তৃতাও করেছেন।

এ দিনই বামনগাছিতে আর এক নিহত প্রতিবাদী সৌরভ চৌধুরীর স্মরণসভাতেও তৃণমূলের কেউ আসেননি। ছিলেন বিজেপির নেতানেত্রীরাই।

বরুণের স্মরণসভা নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়ে দিয়েছেন, এখন থেকে তৃণমূলের কোনও কর্মী-সমর্থক বরুণের স্মরণসভায় যাবেন না। কারণ হিসাবে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বরুণের পরিবারের লোকজন উল্টোপাল্টা বলছেন। যা আমাদের কর্মীদের ভাবাবেগে আঘাত দিচ্ছে।’’ বামনগাছির অনুষ্ঠান নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই স্মরণসভা বিজেপি হাইজ্যাক করে নিয়েছে। তবে আমরা পরিবারটির পাশে আছি। কিন্তু যেখানে বিজেপি-কংগ্রেস-সিপিএমের নেতারা থাকবেন, সেই মঞ্চে আমরা যাব না।’’

এক বছর আগে খুন হয়েছিল ছেলে। লকেট চট্টোপাধ্যায় ও শমীক ভট্টাচার্যের সামনে কান্নায়
ভেঙে পড়লেন নিহত সৌরভ চৌধুরীর মা। রয়েছেন সৌরভের বাবা ও ভাইও। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

যার উত্তরে বামনগাছিতে বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সব কিছু রাজনীতির চোখ দিয়ে দেখা উচিত নয়।’’ শমীকবাবু ছাড়াও বামনগাছিতে এসেছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়রা। শমীকবাবুর কথায়, ‘‘সৌরভের বাবা-মা এখানে দলের নেতৃত্ব স্থানীয়। তাঁদের আমন্ত্রণেই এসেছি।’’ সুটিয়ায় শমীকবাবু বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে সাম্প্রতিক সময়ে খুন-ধর্ষণ-রাহাজানির ঘটনায় শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে। যদিও কেউই প্রত্যক্ষ ভাবে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারছেন না।’’ আরও এক ধাপ এগিয়ে, এ-ও বলেছেন, বরুণের দিদি সাহায্য চাইলে দলীয় ভাবে তাঁরা পাশে দাঁড়াবেন।

কিন্তু কেন সাধারণ ভিড়টা চোখে পড়ল না বরুণের স্মরণসভায়? ইতিমধ্যে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে সুটিয়া প্রতিবাদী মঞ্চের, যাদের ডাকে রবিবার স্মরণসভা ছিল। বরুণের পরিবারের কেউ আসেননি সেখানে। এই বিভাজন স্থানীয় মানুষজনের একটা বড় অংশই ভাল চোখে দেখছেন না। অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জনপ্রিয় যুবকটির মৃত্যু নিয়ে রাজনীতিও পছন্দ করছেন না তাঁরা। তা ছাড়া, শাসক দলের বিরুদ্ধে বরুণের পরিবার যে ভাবে খোলাখুলি অভিযোগ করা শুরু করেছেন, তাতে অনেকে আতঙ্কিত। এলাকায় তৃণমূলের প্রভাব প্রশ্নাতীত। এই অবস্থায় শাসক দলই যেখানে দূরত্ব বাড়াচ্ছে অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে, সেখানে বাড়তি ঘনিষ্ঠতা দেখাতে ইতস্তত বোধ করছেন ছা-পোষা মানুষজন।

প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘আমরাও চাই প্রকৃত খুনিরা সাজা পাক। কিন্তু মঞ্চের অনেকেই তৃণমূলের নেতা-কর্মী। খাদ্যমন্ত্রীর ব্যাপারে বরুণের পরিবারের অবস্থান তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।’’

আর প্রমীলাদেবীর কথায়, ‘‘বরুণকে ভাঙিয়ে ওঁরা প্রচুর টাকা লুঠ করছেন। আজ মানুষকে দেখাতে স্মরণসভার নামে নাটক করছেন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE