আদালতের নির্দেশে রাজ্য সরকার আশ্বাস দিয়েছিল, স্টিং অপারেশনের হোতা ম্যাথু স্যামুয়েলের বিরুদ্ধে কোনও ক়ড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তা সত্ত্বেও কলকাতা পুলিশ নারদ নিউজের কর্ণধার ম্যাথুর দিল্লির ফ্ল্যাটে হানা দিয়েছে বলে হাইকোর্টে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চে শুক্রবার এই অভিযোগ করেন ম্যাথুর আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, আপাতত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলে রাজ্য সরকার যে-আশ্বাস দিয়েছিল, নারদ-মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত তা বজায় রাখা উচিত।
এ দিন দুপুরে ডিভিশন বেঞ্চ এই কথা জানানোর পরে, বিকেলেও দিল্লির গ্রিন পার্কে ম্যাথুর অফিসে হানা দেয় কলকাতা পুলিশ। সেখান থেকে ল্যাপটপ ও নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে অরুণাভবাবু সন্ধ্যায় অভিযোগ করেন। তাঁর বক্তব্য, এটা আদালতের নির্দেশ অবমাননার সামিল। ওই কৌঁসুলি জানান, ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁর মক্কেলকে মুচিপাড়া থানায় হাজিরা দিতে হবে বলে নোটিস দিয়ে এসেছে পুলিশ।
অরুণাভবাবু ডিভিশন বেঞ্চে অভিযোগ জানান, মুচিপাড়া থানার কয়েক জন অফিসার এ দিন তাঁর মক্কেল ম্যাথুর দিল্লির ফ্ল্যাটে হানা দেন। আবাসনের দারোয়ানকে তাঁরা জিজ্ঞাসা করেন, ওই ফ্ল্যাট কেনার টাকা ম্যাথু কোথা থেকে পেয়েছেন। দারোয়ান জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। দিল্লি থেকে ম্যাথু জানান, পুলিশ দিল্লিতে তাঁর পুরনো ফ্ল্যাটে হানা দিয়েছিল। সেক্টর ৯-এ দ্বারকার যে-বাড়িতে ম্যাথু ছিলেন, পুলিশ সেখানে যায়নি। ম্যাথু বলেন, ‘‘কলকাতার পুলিশ আমার খোঁজে দিল্লিতে এসেছে শুনে আমি সব কাজ ফেলে বাড়িতেই ছিলাম। কিন্তু আমার কাছে কেউ আসেননি। আমার পুরনো ফ্ল্যাটে সেক্টর ১০-এ। সেখানে হানার কথা আবাসনের দারোয়ান ফোন করে আমার স্ত্রীকে জানান।’’
ম্যাথু ফ্ল্যাট কেনার টাকা কোথা থেকে পেয়েছেন, নারদ-মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত কলকাতা পুলিশ সেই প্রশ্ন করতে পারে কি না, আদালতে জানতে চান অরুণাভবাবু। তাঁর অভিযোগ, সংবাদমাধ্যম রাষ্ট্র বা তার প্রতিনিধিদের দুর্নীতি নিয়ে কোনও অভিযোগের খবর তুলে ধরলেই পুলিশ ইদানীং সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রুজু করছে বা করার চেষ্টা করছে।
অরুণাভবাবু জানান, কিছু দিন আগে লালবাজার থেকে নোটিস দিয়ে ম্যাথুকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। আদালতে তা জানানোর পরে রাজ্যের তরফে তখনকার অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র আশ্বাস দেন, নারদ-মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত ম্যাথুর বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
কলকাতা পুলিশ এ দিন ম্যাথুর দিল্লির ফ্ল্যাটে গিয়েছিল কেন?
কলকাতা পুলিশের তরফে এ দিন জানানো হয়েছে, ব্যাঙ্কশাল আদালতের নির্দেশে তাদের একটি দল দিল্লিতে ম্যাথুর ফ্ল্যাটে ও অফিসে হানা দেয়। কলকাতার যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) বিশাল গর্গ জানান, একটি মামলার তদন্তে নেমে ম্যাথুর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। সেই কারণেই এই হানা।
লালবাজার সূত্রের খবর, পাঁচ কোটি টাকা চেয়ে বিহারের এক প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সেই হুমকির তদন্তেই এ দিন দিল্লি গিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। হুমকির সেই ঘটনায় কলকাতা পুলিশ কয়েক দিন আগে সাংবাদিকদের ডেকে একটি ছবি দেখিয়েছিল। সেটি ম্যাথুরই ছবি বলে পুলিশের একাংশের দাবি।
অরুণাভবাবুর অভিযোগ, ম্যাথু স্টিং অপারেশনের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক দলের বেশ কিছু নেতা ও নেত্রীর টাকা নেওয়ার ছবি প্রকাশ করার পরে কলকাতা পুলিশ মরিয়া হয়ে যেনতেন প্রকারে তাঁকে হয়রান করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy