সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বলবৎ করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তার পর থেকেই নিজেদের ভারতের নাগরিক প্রমাণে কালঘাম ছুটছে সীমান্তবর্তী এলাকার অনেকের। কারণ, একটা বড় অংশের কাছেই নেই সঠিক পরিচয়পত্র! জন্মের শংসাপত্র না থাকায় সিএএ শংসাপত্র জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন নদিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকার বহু নাগরিক। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই জালচক্রের কারবার সাজিয়ে বসেছেন কয়েক জন ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সরকারি কর্মীও। সম্প্রতি নদিয়ার বগুলা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সরকারি আধিকারিক-সহ তিন কর্মীকে গ্রেফতার করায় পর্দাফাঁস হয় ওই জালচক্রের। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে গোটা চক্রের কীর্তিকলাপ। পুলিশ সূত্রে খবর, সময়ের নিরিখে শংসাপত্র যত পুরনো হত, তত বেশি মূল্য চোকাতে হত গ্রাহককে! গোটা ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারাও।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জাল শংসাপত্র তৈরির অভিযোগে বগুলা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্যামাপ্রসাদ বিশ্বাস, বিকাশ ঘোষ, গোপাল ঘোষ এবং তনয় মণ্ডল নামে চার জনকে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, নিজেদের সরকারি নথি ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট পোর্টালে প্রবেশ করতেন প্রতারকেরা। তবে তার আগে গ্রাহকদের সঙ্গে শংসাপত্র বানানোর ব্যাপারে দাম নিয়ে দর কষাকষি চলত। অভিযোগ, পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধি এবং পঞ্চায়েত কর্মীদের কাজে লাগিয়ে এই দর কষাকষির কাজ চালাতেন প্রতারকেরা।
কী ভাবে শংসাপত্রের দাম ঠিক হত? সূত্রের খবর, গত পাঁচ বছরের মধ্যে জন্মের শংসাপত্র বানাতে হলে গ্রাহকদের গুনতে হত তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা। শংসাপত্রের বয়স পাঁচ বছরের বেশি হলেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ত টাকার অঙ্ক। ১৫ বছর কিংবা তার পুরনো শংসাপত্রের জন্য নির্দিষ্ট কোনও দর ছিল না। ইচ্ছামতো দর হাঁকতেন অসাধু চক্রের সদস্যরা, এমনটাই দাবি পুলিশ সূত্রে। এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার জন্মের জাল শংসাপত্র সরবরাহ করেছে এই চক্র।
শুধু প্রতারকেরা নন, পুলিশের আতশকাচের নীচে রয়েছেন জাল শংসাপত্রপ্রাপকেরাও। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু প্রাপককে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তবে তাঁরা ভারতে অবৈধবাসী কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। শুধু নদিয়া, না কি এই চক্রের জাল রাজ্যের অন্যান্য জায়গাতেও ছড়িয়ে রয়েছে, তা-ও রয়েছে পুলিশের নজরে।
আরও পড়ুন:
এ প্রসঙ্গে বগুলা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুস্মিতা বিশ্বাস বর্মন বলেন, ‘‘সরকারি কর্মীরা কী ভাবে, কী করেছেন তার দায় আমাদের নয়। পুলিশ তাদের কাজ করবে।’’ হাঁসখালি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিল্পী বিশ্বাস বলেন, ‘‘মোট ৪৮৮৮টি ভুয়ো জন্মের শংসাপত্র তৈরি করা হয়েছে। যা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। এই বিপুল শিশু জন্মের যে সার্টিফিকেট তৈরি হয়েছে, তা সম্পূর্ণ জাল। সরকারি নথিতে ছাড়া ব্লক জুড়েও এত শিশু জন্মায়নি।’’ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরও বলেন, ‘‘আশাকর্মী, হেল্থ সেন্টার, এমনকি বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালে নথিতেও এত শিশুর জন্মের নথি পাওয়া যায়নি।’’ গ্রেফতারির কথা স্বীকার করেছেন রানাঘাটের পুলিশ সুপার সানি রাজ। তিনি জানান, প্রত্যেককেই জাল শংসাপত্র তৈরির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত, তা জানার চেষ্টা চলছে।