নথিপত্র দেখছেন আধিকারিকেরা। নিজস্ব চিত্র।
সোমবার বেলা দেড়টা। ডায়মন্ড হারবার পারুলিয়া মোড়ের কাছে মরিয়ম নার্সিংহোমের হালহকিকত দেখতে হাজির হল স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি দল। ঢোকার মুখে গেটের সামনে নার্সিংহোমের নামের কয়েকটি হোর্ডিং আগেভাগেই খুলে ফেলা হয়েছিল।
ঝাঁ চকচকে রং করা নার্সিংহোমে ভিতরে ঢুকতেই স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকের আঁতকে ওঠার অবস্থা। রোগী থাকার ঘরের মধ্যে ডাঁই করে ফেলে রাখা হয়েছে আবর্জনা। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে নথিপত্র পরীক্ষা করেন আধিকারিকেরা। সময়ে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে যান, ভর্তি থাকা দু’জন রোগীকে এখনই যেন ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এরপরেই গাড়ি ছুটল আরও একটি নার্সিংহোমের দিকে। ডায়মন্ড হারবার বাসস্ট্যান্ডের পাশে জমিরুদ্দিন নার্সিংহোম। তিন তলা ভবনে প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় নার্সিংহোমের কাজ চলে। গেটে ঢুকে কিছুটা এগিয়ে একটা বন্ধ ঘর খোলা হল। ঘরের পাতা রয়েছে খান দ’শেক বেড। ময়লার আস্তরণ পড়ে রয়েছে প্রতিটি বেডে। অন্ধকারে ঘরে ঢোকার মুখেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা তেড়ে এল স্বাস্থ্যকর্তাদের দিকে। ঘরে ঢুকতেই পারলেন না কেউ। দোতলায় একটি ঘরে গিয়ে দেখা গেল, জনা পনেরো প্রসূতি ভর্তি রয়েছে। বদ্ধ ঘরে ভ্যাপসা গন্ধ। পাশেই রয়েছে আলো আঁধারিতে ঘেরা অপারেশন থিয়েটার। তারও কোনও পরিকাঠামো নেই।
ওই নার্সিংহোমেও প্রায় আধ ঘণ্টা তল্লাশি চালান আধিকারিকেরা। ভর্তি থাকা রোগীদের জেলা হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে বেরিয়ে যান সেখান থেকে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দু’টি নার্সিংহোমের মধ্যে মরিয়ম নার্সিংহোমের মাস ছ’য়েক লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ হয়নি। এ ছাড়া, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা, অপারেশন থিয়েটারের পরিকাঠামো নেই। দু’টি নার্সিংহোমেই ২৪ ঘণ্টার মেডিক্যাল অফিসার নেই। আবর্জনা ফেলা, চিকিৎসার বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা নেই, লেবার রুম অপরিচ্ছন্ন।
শিশু পাচার কাণ্ড সামনে আসার পর থেকে জেলায় জেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা নার্সিংহোমগুলির পরিকাঠামো খতিয়ে দেখার নির্দেশ এসেছে। সেই মতোই নানা জায়গায় শুরু হয়েছে খানা-তল্লাশি। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু নার্সিংহোমে অব্যবস্থা দেখে সে সব সিল করে দিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকে।
এ দিন তল্লাশি অভিযানে ছিলেন, ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার সহকারী মুখ্য আধিকারিক নন্দদুলাল মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘দু’টি নার্সিংহোমের কাগজপত্রে গোলমাল আছে। পরিকাঠামোর নানা ত্রুটি রয়েছে। ওদেরকে একমাস বন্ধ রেখে সমস্ত নথি তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ এমন অভিযান আপাতত লাগাতার চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy