Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Chinsurah

কৃষিতে ভিত্তির সঙ্গে শিল্পেও গেরুয়া নজর, হলদির পরে হুগলি নদীর তীরে নরেন্দ্র মোদী

শিল্পনগরী হলদিয়ার পরে হুগলি শিল্পাঞ্চলে মোদীর সমাবেশ করে বিজেপি বুঝিয়ে দিতে চায় কৃষির সঙ্গে সঙ্গে শিল্পকেও গুরুত্ব দিচ্ছে গেরুয়া শিবির।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৫:১৯
Share: Save:

গঙ্গাতীরের নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে হলদি নদীর তীরে রাজ্যে প্রথম জনসভাটি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বার গন্তব্য হুগলি নদীর পাড়। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সফরে এসে মোদী জনসভা করবেন হুগলির চুঁচুড়া বিধানসভা এলাকায়। শনিবারই সেই সফরের সবুজ সঙ্কেত মিলেছে। আর তার পর থেকেই রাজ্য বিজেপি নেতারা বড় মাঠ খুঁজতে শুরু করেছেন। এখনও পর্যন্ত যা ঠিক হয়েছে তাতে চুঁচুড়া আদালত সংলগ্ন মাঠেই হতে পারে জনসভা।

প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থান হিসেবে এই মাঠ পছন্দ হুগলি জেলার বিজেপি নেতাদেরও। চুঁচুড়া আদালতের কাছে পর পর চারটি মাঠ রয়েছে। এর মধ্যে একটির নাম প্রেমনগর, একটি রূপনগর মাঠ। এই দু’টি মাঠে সভা করা সম্ভব নয়। কারণ, প্রথমটিতে রাজ্য সরকার একটি স্টেডিয়াম তৈরি করেছে। যার উদ্বোধন বিধানসভা নির্বাচনের আগেই হওয়ার কথা। রূপনগর মাঠেও একটি টেনিস খেলার কোর্ট রয়েছে। সে ক্ষেত্রে মোদীর সভা হতে পারে পাশের দু’টি মাঠ মিলিয়ে। স্থানীয়রা যে দু’টি মাঠকে ফার্স্ট গ্রাউন্ড এবং সেকেন্ড গ্রাউন্ড হিসেবে চেনে। তবে এই মাঠেই যে সভা হবে সেটা চূড়ান্ত নয়। জেলা বিজেপি-র একটা অংশ চাইছে বন্ধ হয়ে থাকা ডানলপ কারখানার পাশের মাঠেই হোক মোদীর সমাবেশ। তবে যে মাঠই চূড়ান্ত হোক দু’টিই কার্যত হুগলি নদীর তীরে।

রাজ্য বিজেপি-সূত্রে খবর, এই স্থান নির্বাচনের পিছনে রয়েছে এক বড় পরিকল্পনা। শিল্পনগরী হলদিয়ার পরে হুগলি শিল্পাঞ্চলে মোদীর সমাবেশ করে বিজেপি বুঝিয়ে দিতে চায় কৃষির সঙ্গে সঙ্গে শিল্পকেও গুরুত্ব দিচ্ছে গেরুয়া শিবির। আর যে এলাকায় মোদীর সভা হতে পারে বলে ঠিক হয়েছে তা নদীর তীরে করার পিছনেও রয়েছে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত। কারণ, নদী পার হলেই নৈহাটি। যেটা উত্তর ২৪ পরগনার শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এই এলাকায় দুই জেলাতেই অনেক কলকারখানা রয়েছে। যার মধ্যে বড় অংশই চটকল।

সভাস্থল পরিদর্শনে বিজেপি নেতারা।

সভাস্থল পরিদর্শনে বিজেপি নেতারা। নিজস্ব চিত্র।

গ্রামবাংলাকে ধরতে ইতিমধ্যেই বিজেপি ‘কৃষক সুরক্ষা অভিযান’ নামে কর্মসূচি শুরু করেছে। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা নিজে সেই কর্মসূচির সূচনা করেন। রাজ্য জুড়ে ‘মুষ্টিভিক্ষা’ থেকে কৃষকদের সঙ্গে ‘সহভোজ’ কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। বিজেপি যে বাংলায় কৃষকদের মন পাওয়া তথা গ্রামীণ এলাকার ভোট নিজেদের ঝুলিতে টানতে চাইছে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন মোদীও। হলদিয়ার সমাবেশ থেকে তিনি ঘোষণা করেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলার কৃষকদের ‘প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি’ প্রকল্পের ‘না পাওয়া’ টাকাও দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। এ বার কৃষকদের পাশাপাশি শিল্প নিয়েও বার্তা দিতে চাইছে বিজেপি। রাজ্য নেতাদের বক্তব্য, সেটা শুরু হতে পারে মোদীর সফরের মধ্য দিয়েই।

হলদিয়ায় সভায় একগুচ্ছ প্রকল্পের সূচনা করে মোদী শিল্প নিয়ে তৃণমূল সরকারকে আক্রমণও করেন। বলেন, ‘‘যদি শুধু হলদিয়া বন্দরের কথাই বলি, এই বন্দর পেট্রো রসায়ন শিল্পে এগিয়ে ছিল। আজ এখানে (পশ্চিমবঙ্গ) যে ব্যবসাবাণিজ্য রয়েছে, যে প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারাও পরিবর্তন চায়, আধুনিকীকরণ চায়।’’ একই সঙ্গে রাজ্য সরকারের উদ্দেশে প্রশ্নও তোলেন, ‘‘গত ১০ বছরে এখানে (পশ্চিমবঙ্গে) কটা শিল্পের উদ্বোধন হয়েছে? ওই বড় ইস্পাত কারখানার কী হল, যেটা শুরুই হতে পারল না?’’হলদিয়ার পরে এ বার হুগলি শিল্পাঞ্চলে আসছেন মোদী। এক সময়ে জেলার গর্ব হিসেবে পরিচিত বন্ধ ডানলপ কারখানার কাছাকাছিই হতে পারে তাঁর সভা। আবার হুগলি মানে সিঙ্গুরও। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব অনেক দিন ধরেই অমিত শাহকে এনে সিঙ্গুরে জনসভা করার উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে এখনও তার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। রাজ্য নেতারা চান, সিঙ্গুরে টাটাকে ফেরানোর চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দিন মোদী ও শাহ। সেই আশ্বাস ২২ ফেব্রুয়ারি হুগলির জনসভা থেকে মিলতেও পারে বলে আশা করছেন রাজ্য বিজেপি-র একাংশ। তাঁরা মনে করাচ্ছেন হলদি নদীর তীরে মোদীর আশ্বাস, ‘‘হলদিয়া আত্মনির্ভর ভারতের কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসবে।’’

২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে সিঙ্গুর যে ফের প্রাধান্য পেতে চলেছে তার ইঙ্গিত আগেই মিলেছে। গত ডিসেম্বর মাসেই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, সিঙ্গুর রেলস্টেশনের কাছে ১১ একর জমিতে তৈরি হবে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। কাজ করবে ক্ষুদ্রশিল্প উন্নয়ন নিগম। ইচ্ছুক লগ্নিকারীদের আহ্বানও জানান মমতা। এই নিয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘সিঙ্গুরে শিল্প হবে শুনলে ঘোড়াতেও হাসবে। দিদিমণির হাত ধরে শিল্প আসবে না। উনি খেলা, মেলা ও পুজোর উদ্বোধন করেছেন। কোনও শিল্পের উদ্বোধন করতে দেখা যায়নি মুখ্যমন্ত্রীকে। যা হবে সেটা বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরেই।’’

তবে রাজ্য বিজেপি-র যা পরিকল্পনা তাতে মোদীর এই সমাবেশ শুধু হুগলি জেলার জন্য হবে না। হুগলি নদীর অন্য তীরে নৈহাটি, ভাটপাড়া, জগদ্দল, ব্যারাকপুর, নোয়াপাড়া-সহ উত্তর ২৪ পরগনার শিল্পাঞ্চলের বিধানসভা কেন্দ্রগুলি থেকেও দলীয় কর্মীদের আনা হবে মোদীর ওই সভায়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy