প্রণাম: প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে শ্রদ্ধা বাম নেতা বিমান বসুর। মঙ্গলবার কলকাতায় প্রদেশ কংগ্রেসের দফতরে। ছবি: পিটিআই।
নেতাজি ইন্ডোরে ভিড়ে ঠাসা পঞ্চায়েতিরাজ সম্মেলন ছিল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে তাঁর শেষ বড় কর্মসূচি। আর ঠিক এক মাস পরে সেই নেতাজি ইন্ডোরেই আবার কংগ্রেসের পঞ্চায়েতিরাজ সম্মেলন আসন্ন। ঘটনাচক্র এমনই যে, তার প্রস্তুতি চলাকালীন প্রদেশ কংগ্রেস দফতর বিধান ভবনে ফের দেখা গেল প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে! এ বারও ভিড়ে ঠাসা কংগ্রেসের মঞ্চ। প্রিয়বাবুকে শুধু ঢুকতে হল কর্মীদের কাঁধে চেপে। কফিনবন্দি হয়ে।
প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী তেরঙা পতাকায় ঢেকে দিলেন ‘প্রিয়দা’র মরদেহ। বিধান ভবনে রাত জেগে মনোজ চক্রবর্তী, আখরুজ্জামান, অনুপম ঘোষদের তৈরি মঞ্চের পিছনে জ্বলজ্বল করছে সাতের দশকের সেই স্লোগান— ‘আমার প্রিয়, তোমার প্রিয়, সবার প্রিয়, যুগ যুগ জিও’! কফিনে মালা দিতে এসে প্রায় ভেঙে পড়লেন বর্ষীয়ান নেতা সোমেন মিত্র। প্রায় পাশে পাশেই রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। বামফ্রন্টের বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম, ক্ষিতি গোস্বামী, হাফিজ আলম সৈরানি বা বিজেপি-র শমীক ভট্টাচার্য, জয়প্রকাশ মজুমদার, এক কালের দাপুটে ছাত্র নেতা অসীম (কাকা) চট্টোপাধ্যায়— ভিন্ দলের ভিন্ন মতের অনেকেই হাজির মালা হাতে। প্রিয়বাবুর টানেই এসেছিলেন তাঁর এক সময়ের সঙ্গী কুমুদ ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন: মতান্তর হয়েছে, মনান্তর হয়নি, লিখলেন মমতা
অস্থায়ী মঞ্চে মরদেহের পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে তাঁর স্ত্রী দীপা দাশমুন্সি ও ছেলে প্রিয়দীপ (মিছিল)। পাশে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। ভিড়ের মাঝেই দীপা বলছিলেন, ‘‘৯ বছর ধরে কথা বন্ধ। প্রতিনিয়ত আমরা অপেক্ষা করেছি, হয়তো উনি ভাল হয়ে উঠবেন। এই বছরগুলোয় বহু মানুষ দেখতে গিয়েছেন, অনেকে যাননি। বহু মানুষ খোঁজ নিয়েছেন, অনেকে নেননি। প্রিয়দা’র হাত ধরে যাঁরা রাজনীতিতে এসেছিলেন, তাঁদের অনেকেরই আচরণ পাল্টে যেতে দেখেছি।’’ নির্ধারিত সূচির বাইরে গিয়ে বিধান ভবন থেকে মরদেহ হাইকোর্টে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হওয়ার সময় ভিড়ে রুদ্ধ হচ্ছিল পথ। শোক সামলে দীপাকেই বলতে হল, ‘‘শান্তিতে আপনাদের দাদাকে যেতে দিন। আপনাদের মতো আমিও আমার নেতাকে হারিয়েছি। একটু শৃঙ্খলা রাখুন!’’
হাইকোর্টে বার অ্যাসোসিয়েশন, বেশ কিছু বিধায়ক ও ক্রীড়াবিদের শ্রদ্ধা নিয়ে প্রিয়বাবুর মরদেহ গিয়েছিল রানি ভবানী রোডের বাড়িতে। সেখান থেকে আবার দমদম বিমানবন্দর। বেহালা ফ্লাইং ক্লাবে রাজ্য সরকারের দেওয়া হেলিকপ্টার তৈরি ছিল কফিন নিয়ে রায়গঞ্জ উ়ড়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু অধীরবাবু বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের দেওয়া কপ্টার ছোট। তাতে একটু সমস্যা হচ্ছে।’’ কংগ্রেসের ব্যবস্থাপনায় এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় বিমানবন্দরে চলে এসেছিল ২০ আসনের বড় চপার। তাতেই কফিনের সঙ্গে রায়গঞ্জ রওনা দেন দীপা, প্রিয়দীপ, অধীর, মান্নান ও আরও কিছু বিধায়ক। আর বেহালা থেকে রাজ্যের দেওয়া কপ্টারে কংগ্রেসের তিন বিধায়ক এবং প্রিয়বাবুর এক সময়ের ব্যক্তিগত সচিব। কলকাতা ও আশেপাশের জেলার কংগ্রেস কর্মীরা বিমানবন্দরেই ফুল আর আবেগে শেষ বিদায় জানিয়েছেন তাঁদের ‘প্রিয়’ নেতাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy