অতিথি বেশ অশান্তই। তবু মার্চ-এপ্রিলে তার পথ চেয়ে থাকে তাপিত বাংলা। এ বারেও হাপিত্যেশ শুরু হয়েছে সেই কালবৈশাখীর জন্য।
সকালটা শুরু হচ্ছে মেঘলা আকাশ দিয়ে। কিন্তু বেলা বাড়তেই মেঘ ঠেলে সূর্য যখন মুখ বাড়াচ্ছে, তখন ঘেমেনেয়ে একশা। তাপমাত্রা যে খুব একটা বাড়ছে, তা নয়। কিন্তু আকাশ জুড়ে থাকা মেঘের জন্য আর্দ্রতা উঠে যাচ্ছে ৯০ শতাংশের উপরে। এবং সেটাই যত নষ্টের গোড়া বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।
সাধারণত মার্চে দু’টি, এপ্রিলে চারটি আর মে মাসে কমপক্ষে তিনটি কালবৈশাখী হওয়ার কথা দক্ষিণবঙ্গে। কিন্তু মার্চের কালবৈশাখী প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। ঝাড়খণ্ডের লাগোয়া জেলাগুলিতে শনিবার খুব হাল্কা একটা কালবৈশাখী হয়েছিল। কিন্তু ঝড় দিলেও বৃষ্টি হয়েছে নামমাত্র। রবিবার উপগ্রহ-চিত্রে মেঘের দর্শন মিললেও যে-মেঘ কালবৈশাখী ঘনিয়ে আনে, তা দেখা যায়নি।
এক আবহবিদ জানাচ্ছেন, তাপমাত্রা যত বাড়ে, ততই বাড়ে কালবৈশাখীর সম্ভাবনা। তার জন্য মূলত দু’টি প্রাকৃতিক অবস্থার প্রয়োজন। ঝাড়খণ্ড আর সন্নিহিত অঞ্চলে লাগামছাড়া তাপমাত্রা এবং বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ বলয়।
বিশেষজ্ঞদের কথায়, ছোটনাগপুর মালভূমি এলাকা হল কালবৈশাখীর রান্নাঘর। সেখানে তাপমাত্রা যত বাড়বে, ততই গরম হবে ভূপৃষ্ঠ। মাটি থেকে বিকিরিত তাপ বাতাসকে গরম করে দেয়। বাতাস যত গরম হয়, ততই তা উঠতে থাকে উপরের দিকে। ঝাড়খণ্ড ও দক্ষিণবঙ্গে আবহাওয়ার এই অবস্থায় বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয় উচ্চচাপ বলয়, যা জলীয় বাষ্পকে ঠেলে নিয়ে যায় বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে। জলীয় বাষ্প সেই গরম বাতাসের সংস্পর্শে এলে উল্লম্ব মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়। তার পরে জলীয় বাষ্পপূর্ণ উল্লম্ব মেঘপুঞ্জ ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে এগিয়ে আসে দক্ষিণবঙ্গের দিকে। এক সময় তা জলীয় বাষ্প ধারণের ক্ষমতা হারিয়ে ভেঙে পড়ে। তা থেকেই জন্ম নেয় কালবৈশাখী।
কিন্তু এ বার তাপমাত্রা এখনও পর্যন্ত মাত্রা ছাড়ায়নি। রবিবার কলকাতা এবং সন্নিহিত এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি সময়ের স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রার থেকে যা দু’ডিগ্রি কম। কেন? আবহবিদেরা বলছেন, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে হঠাৎ পরিবর্তন এসেছে দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রায়। পরিমণ্ডলে প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকে পড়েছে। সেটাই সর্বোচ্চ তাপমাত্রাকে বাড়তে দিচ্ছে না।
বীরভূমে শনিবার তাপমাত্রা উঠে গিয়েছিল ৩৮ ডিগ্রির কাছাকাছি। তাতে অল্প দৈর্ঘ্যের উল্লম্ব মেঘ তৈরি হয়েছিল। বিকেলে ঝড়বৃষ্টিও হয়। প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের বিচারে সেটা কালবৈশাখী হলেও তাতে জোর ছিল না বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।
এই অবস্থায় পরিমণ্ডলের জলীয় বাতাস শুষে নিয়ে তাপমাত্রা কবে চড়চড়িয়ে বাড়ে, সেই অপেক্ষাতেই রয়েছে দক্ষিণবঙ্গ। কেননা তাপমাত্রার বাড়বৃদ্ধিই কালবৈশাখী আনতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy