Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

বিপদ জেনেও আধপোড়া বাজি কুড়িয়েই উৎসব ওদের

সকলের হাতেই প্লাস্টিকের প্যাকেট। তাতেই ওরা কুড়িয়ে জড়ো করছে আধপোড়া ফুলঝুরি, রংমশাল কিংবা না ফাটা হাউই, চরকি, তুবড়ি।

আধপোড়া বাজি কুড়োতে ব্যস্ত দুই কিশোর। —নিজস্ব চিত্র।

আধপোড়া বাজি কুড়োতে ব্যস্ত দুই কিশোর। —নিজস্ব চিত্র।

আরিফ ইকবাল খান
হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৩১
Share: Save:

দীপাবলির পরদিন। সবে ভোরের আলো ফুটেছে। তত ক্ষণে হলদিয়া উপনগরীর অনেকটাই চষে ফেলেছে এক দল কিশোর। সকলের হাতেই প্লাস্টিকের প্যাকেট। তাতেই ওরা কুড়িয়ে জড়ো করছে আধপোড়া ফুলঝুরি, রংমশাল কিংবা না ফাটা হাউই, চরকি, তুবড়ি।

দুর্গাপুজোর বিসর্জনের পরে নদীতে নেমে প্রতিমার অলঙ্কার, অস্ত্র কুড়োতে দেখা যায় কচিকাঁচার দলকে। এ-ও কতকটা তেমনই। আধপোড়া বাজি কুড়িয়ে ওরা আবার ফাটাবে, কেউ কেউ সেই বাজির মশলা দিয়ে বানাবে নতুন বাজি।

কিন্তু এতে যে বিস্তর বিপদ!

কার্তিক, সুরজিৎ, বিশ্বজিৎ, সঞ্জীব, ভোলা, সমীরদের মতো বছর বারো-চোদ্দোর ওই কিশোরদের সে কথা অজানা নয়। তা-ও কেন বিপদ নিয়ে খেলা?

আরও পড়ুন: শব্দবাজির দাপটে জেরবার সারা রাজ্য

হলদিয়ার ইন্ডিয়ান অয়েল আবাসন, সিপিটি আবাসন, মাখনবাবুর বাজার ঘুরে একেবারে হলদি নদীর ধারে বন্দর আবাসন পর্যন্ত চক্কর শেষে ওই কিশোরের দল জানাল, বাজির অনেক দাম। ইচ্ছে থাকলেও কেনা যায় না। তাই এই আধপোড়া অথবা না পোড়া বাজি পুড়িয়েই আলোর উৎসবে মাতে ওরা।

বিশ্বজিৎ, সঞ্জীবরা বলল, ‘‘ভোররাত থেকে বাজি কুড়োচ্ছি। দেরি হলে সব তো ঝাঁট দিয়ে ফেলে দেবে।’’ এই বাজি কী ভাবে আবার ব্যবহার করবে? সঞ্জীবদের জবাব, ‘‘না ফাটা বাজির বারুদ আর মশলা দিয়ে হাঁড়িবোমা, জলবোমা, তুবড়ি বানাব। আর যেগুলো রোদে রেখে গরম করে ফাটানো যাবে, সেগুলো এমনিই ফাটাব।’’

কালীপুজোর রাতে পূর্ব মেদিনীপুরেই তিন জায়গায় জলবোমা ফেটে জখম হয়েছে তিন জন। আর এই ধরনের আধপোড়া বাজির বিপদ যে আরও বেশি, তা মানছেন বাজি প্রস্তুতকারকরাই। মহিষাদলের বাজি গ্রাম চিঙ্গুরমারির বাজি প্রস্তুতকারক মানস ঘোড়ই বললেন, ‘‘দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, শুধু অ্যাডভেঞ্চারের জন্য এই কাজ খুবই বিপজ্জনক। বারুদ আর মশলা মেশাতে গিয়ে যে কোনও সময় বিস্ফোরণ হতে পারে।’’ হলদিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের রসায়নের অধ্যাপক গৌরীশঙ্কর রায় মহাপাত্রেরও বক্তব্য, ‘‘আধপোড়া বাজির বারুদ পরে পোড়ানোর সময় অনিয়ন্ত্রিত দহনে সালফার থেকে যে গ্যাস বেরোয়, তা ক্ষতিকর। তা ছাড়া বাজি ফেটে পুড়ে যাওয়ার ভয়ও থাকে।’’

কার্তিক, সুরজিৎরা জানাল, ওদেরই কেউ কেউ এই বাজিতে জখম হয়েছে। তাতেও ভয় করে না? কিশোর দলের জবাব, ‘‘ভয় পেলে তো আর মজাটাই থাকবে না।’’

নিষিদ্ধ শব্দবাজি ঠেকাতে অভিযান ধরপাকড়ের অন্ত নেই। কিন্তু তার বাইরেও নেহাত মজা করতে এই যে বাজি-বিপদে মাতে ছেলের দল, সে কথা জানাই নেই পুলিশ-প্রশাসনের। বড়সড় দুর্ঘটনাও ঘটেনি। তাই আড়ালেই বাড়ছে এই আধপোড়া বাজির বিপদ। হলদিয়ার এক পুলিশ আধিকারিক মানছেন, ‘‘এই বিষয়টি সে ভাবে নজরে ছিল না। সচেতনতা বাড়াতে আগামী দিনে অবশ্যই প্রচার চালানো হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Risky Danger Fire Crackers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE