ছবি: সংগৃহীত।
চার কোনা হাতে ধরে বিধানসভার মধ্যেই টাঙিয়ে ফেলা হয়েছে মশারি। তার মধ্যে ঢুকে শুয়ে পড়েছেন কেউ কেউ! বিধানসভা কক্ষে ঢুকে পড়েছে পেল্লায় মশাও! তবে নকল।
ডেঙ্গি নিয়ে সরকারকে চেপে ধরতে বৃহস্পতিবার এ ভাবেই হইচই বাধাল বিরোধীরা। ডেঙ্গি মহামারীর আকার নিয়েছে এবং তার মোকাবিলায় সরকাক পর্যাপ্ত পদক্ষেপ করছে না, এই অভিযোগ এনে এ দিন মুলতবি প্রস্তাব এনেছিল বিরোধী কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। কিন্তু মুলতবি প্রস্তাব পাঠ করার আগেই ডেঙ্গি নিয়ে বিবৃতি দিতে ওঠেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তখনই ওয়েলে নেমে মশারি খাটিয়ে, মশার প্রতিকৃতি নিয়ে, স্লোগান দিয়ে সভা অচল করার চেষ্টা চালিয়েছেন বিরোধী বিধায়কেরা। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ডেঙ্গি নিয়ে আলোচনার অনুমতি না দেওয়ায় এ দিন অধিবেশনের বাকি কার্যসূচি বয়কটও করেছেন তাঁরা। ডেঙ্গি-প্রতিবাদ জারি থাকবে আজ, শুক্রবারও। দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে বিজেপি অবশ্য ডেঙ্গি-প্রতিবাদে যোগ দেয়নি।
প্রবল হট্টগোলের মধ্যেও মন্ত্রী চন্দ্রিমা অবশ্য বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ডেঙ্গি নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলছে। তার শুনানি রয়েছে আজ, শুক্রবারই। তাই এ বছর ১৫ নভেম্বরের আগে পর্যন্ত ডেঙ্গি নিয়ে যে তথ্য আদালতে হলফনামায় দেওয়া হয়েছিল, সরকারের তরফে সেটাই এ দিন বিধানসভায় পেশ করেছেন তিনি। সেই অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। বেসরকারি হাসপাতালে মারা গিয়েছেন ২২ জন, যেগুলি আবার খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রীর যুক্তি, ‘বিচারাধীন’ বিষয়ে বিধানসভায় কিছু বলা যায় না। তাই আদালতে দেওয়া তথ্যই তিনি জানাচ্ছেন।
হইচইয়ের মধ্যে মন্ত্রীর বিবৃতি শেষ হওয়া মাত্রই বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বিষয়টি নিয়ে আলোচনা দাবি করেন। বিধানসভার কার্যবিধির ৩১৯ নম্বর ধারার প্রতিলিপি দ্রুত তাঁরা পৌঁছে দেন স্পিকারের টেবিলে। যে ধারা অনুযায়ী, কোনও বিষয়ে মন্ত্রীর বিবৃতির পরেও আলোচনা করা যায়। যদিও তাতে ভোটাভুটির সুযোগ থাকে না। স্পিকার অবশ্য বলেন, ‘‘মন্ত্রী যখন বলছিলেন, তখন আপনারা কতখানি শুনতে পেয়েছেন জানি না। আমি অন্তত শুনতে পাইনি!’’ মন্ত্রীর বিবৃতি দেখে পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান।
বিরোধীদের প্রবল প্রতিবাদের মধ্যেই শেষ হয় প্রথমার্ধের অধিবেশন। ডেঙ্গি নিয়ে আলোচনার অনুমতি না পাওয়ায় দ্বিতীয়ার্ধে বিল নিয়ে আলোচনায় বিরোধীরা আর অংশগ্রহণ করতে ঢোকেননি। বিরতির সময়ে কার্য উপদেষ্টা (বি এ) কমিটির বৈঠকে কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তী, সিপিএমের মানস মুখোপাধ্যায়েরা ফের বিষয়টি তোলেন। স্পিকার আবার জানান, মন্ত্রীর বিবৃতি তিনি শুনতে পাননি। বিবৃতি পড়ে দেখে পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন, এ ব্যাপারে আর আলোচনার অবকাশ আছে কি না। বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক মনোজবাবু তখন জানিয়ে দেন, ডেঙ্গি নিয়ে আলোচনার সুযোগ না পেলে তাঁরাও সভা অচল করবেন!
অধিবেশন শুরু হলে আজ সকাল থেকেও ডেঙ্গি নিয়ে হইচই করার পরিকল্পনা আছে বিরোধীদের। কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্রের প্রশ্ন আছে, গত অগস্ট থেকে এখনও পর্যন্ত কত জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। সেই প্রশ্ন শেষ পর্যন্ত উঠলে তার সূত্র ধরেও প্রতিবাদে ঢুকে যেতে পারে বিরোধীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy