কংগ্রেসের সুপারিশ অগ্রাহ্য করে গত বছর মানস ভুঁইয়া। আর এ বার কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগদানকারী শঙ্কর সিংহ! বিরোধী নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা না করেই বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে। রাজ্যের নানা জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি বা পুরসভার মতো এ বার বিধানসভার কমিটিও শাসক পক্ষ ঘুরপথে ‘দখল’ করতে চাইছে বলে সরব বিরোধীরা। নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ ও তার পদ্ধতি ঘিরে প্রতিবাদ জানিয়ে আজ, শুক্রবার পিএসি-র বৈঠক বয়কট করছেন কংগ্রেস ও বাম বিধায়কেরা।
বিধানসভা সূত্রের খবর, কয়েক দিন আগেই পিএসি-র নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বি়ধায়ক শঙ্করবাবুর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে সই হয়ে গিয়েছে। তার পরে পিএসির প্রথম বৈঠকে আজই আনুষ্ঠানিক ভাবে চেয়ারম্যান নিয়োগের ঘোষণা হওয়ার কথা। কিন্তু কংগ্রেসের সুখবিলাস বর্মা বা সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীদের প্রশ্ন, চেয়ারম্যানের পরামর্শেই সংশ্লিষ্ট সচিবেরা কমিটির বৈঠক ডাকেন। মানসবাবুর ইস্তফার পরে পিএসি-র চেয়ারম্যান পদ শূন্য। তা হলে কার পরামর্শে বৈঠক ডাকা হল? বিরোধীদের অন্ধকারে রেখেই কি চেয়ারম্যান ঠিক হয়ে গেল? নাকি স্পিকারের নির্দেশে বিশেষ বৈঠক ডাকা হল? শঙ্করবাবু অবশ্য বৃহস্পতিবার দিনভর ফোন ধরেননি।
স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি, শঙ্করবাবু কংগ্রেসেরই বিধায়ক। তাঁকে পিএসি-র দায়িত্ব দিতে অসুবিধা কোথায়? ঘটনা হল, তৃণমূল ভবনে শঙ্করবাবু শাসক দলের পতাকা হাতে নেওয়ার পরে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান তাঁর কাছে জবাবদিহি চেয়েছিলেন। কিন্তু দলবদলের জন্য বিধায়ক-পদ খারিজের দাবি জানিয়ে স্পিকারের কাছে চিঠি এখনও জমা পড়েনি। বিরোধীদের অভিযোগ, চিঠি চালাচালির আইনি ফাঁক কাজে লাগিয়ে পিএসি-তে এমন এক জনকে বসানো হচ্ছে, যিনি খাতায়-কলমে কংগ্রেসের বিধায়ক। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ থাকবে শাসক দলের।
সংসদ বা বিধানসভায় বিরোধীদের হাতেই পিএসি-র দায়িত্ব দেওয়া সংসদীয় রীতি। এ রাজ্যে অতীতে বিরোধী দলের তরফে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সৌগত রায়, জ্ঞানসিংহ সোহনপাল, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, আনিসুর রহমানেরা পিএসি-র চেয়ারম্যান হয়েছেন। লোকসভায় এখন কংগ্রেসের সাংসদ-সংখ্যা আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়। তবু সেখানে পিএসি সরকারি দল নিয়ে নেয়নি। অথচ এই রাজ্যে নবান্নে তৃণমূলের দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর পর থেকেই সরকার পক্ষ পিএসি-কে হাতে রাখতে চাইছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। বাম পরিষদীয় নেতা সুজনবাবুর কথায়, ‘‘বিধানসভার কমিটিতেও সরকারি দখলদারি শুরু হল! যাঁরা শঙ্করবাবুকে নদিয়া জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি করলেন, কুপার্স ক্যাম্প পুরসভার ভোটে দায়িত্ব দিলেন, তাঁরাই বিধানসভায় এসে বলছেন উনি তো কংগ্রেসের!’’ প্রধান বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক, কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘পিএসি-র দায়িত্ব বিরোধীদের দিতে সরকারের এত অনীহা কেন? সরকারের আর্থিক বেনিয়ম ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে তারা কি ভীত?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy