তৃণমূল নেতা আশিস দে-কে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন ওন্দার বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা গোস্বামী। —নিজস্ব চিত্র।
দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল নেতা আশিস দে-র বিরুদ্ধে সাত দিনের মধ্যে দলের তরফে পদক্ষেপ করা না হলে তিনি অনশন করবেন। এমনই হুমকি দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় বৃদ্ধার ছদ্মবেশে হাজির হওয়া অভিযোগকারিণী প্রিয়াঙ্কা গোস্বামী। তাঁর দাবি, এ বিষয়ে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের মৌখিক আশ্বাস সত্ত্বেও সুরাহা হয়নি। উল্টে ব্লক কমিটিতে পদোন্নতি হয়েছে আশিসের। এ নিয়ে জেলা তৃণমূলের দাবি, নাটক করছেন প্রিয়াঙ্কা। অন্য দিকে, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে’ পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব।
বাঁকুড়ার ওন্দায় ১২ এপ্রিল অভিষেকের জনসভায় বৃদ্ধা সেজে হাজির হয়েছিলেন ওই ব্লকের রামসাগর এলাকার মাঝবয়সি বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা। নিজেকে তৃণমূলকর্মী হিসাবে পরিচয় দেওয়া প্রিয়াঙ্কার দাবি ছিল, ব্লক নেতা আশিস দে দুর্নীতিগ্রস্ত। তাই তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হোক। ওই সভায় অভিষেকের ভাষণ শেষ হতেই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন তিনি। মঞ্চ থেকে নামার সময় সে দিকে দৃষ্টি পড়েছিল অভিষেকেরও। তড়িঘড়ি নিরাপত্তারক্ষীদের মাধ্যমে ওই বৃদ্ধাকে মঞ্চের পিছনে থাকা ভিআইপি বিশ্রামকক্ষে ডেকে পাঠান অভিষেক। তাঁর কাছে আশিসের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা শুনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য পুলিশ সুপার ও দলীয় নেতৃত্বকে নির্দেশ দেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড। পরে ওই ‘বৃদ্ধা’র আসল পরিচয় জানা যায়।
প্রিয়াঙ্কার অভিযোগ, ওই ঘটনার সাত দিন পরেও অভিযুক্ত নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি তৃণমূল। বরং তাঁকে দলে আরও বড় পদ দেওয়া হয়েছে। তাতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রিয়াঙ্কা। আশিসের বিরুদ্ধে তৃণমূল দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অনশনের হুমকিও দিয়েছেন তিনি। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘আশিস দে-র বিরুদ্ধে দলীয় ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর সাত দিন পেরিয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে ওন্দা ব্লক তৃণমূলের কমিটি ঘোষণা করা হলে আশিস দে-কে ব্লকের সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়। আমি নিজে তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। আর আশিস দে আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা। তাঁকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হোক। আজ থেকে সাত দিনের মধ্যে আশিস দে-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আমি অনশন শুরু করব।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘বছর দুই আগে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় চাকরি দেওয়ার নাম করে এলাকার মহিলাদের কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করেছিলেন আশিস দে। কিছু দিনের মধ্যেই আমরা বুঝতে পারি, সংস্থাটি ভুয়ো। এর পর টাকা ফেরত চাইলেও দেননি। শেষ পর্যন্ত আমি থানার দ্বারস্থ হলে আমার দোকানে চড়াও হয়ে ভাঙচুর, মারধর করে আশিস দে-র অনুগামীরা। সে সময় আমি দলের ব্লক ও জেলা নেতৃত্বকে বিষয়টি জানাই। তার পরেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ১২ এপ্রিলের সভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছিলাম। তার পরেও তৃণমূল কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমি হতাশ।’’
যদিও প্রিয়াঙ্কার অভিযোগ মানতে নারাজ অভিযুক্ত আশিস। এর নেপথ্যে বিজেপির হাত রয়েছে বলেও দাবি তাঁর। আশিস বলেন, ‘‘ঘটনাটি বহু পুরনো। বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দেওয়া টাকার একটা বড় অংশ ফেরত পেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা-সহ অনেকেই। আমার কাছে তার তথ্যপ্রমাণও রয়েছে। এখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিজেপি ওই মহিলাকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করাচ্ছে।’’
প্রিয়াঙ্কার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সহ-সম্পাদক ভবানী মোদক। তিনি বলেন, ‘‘প্রিয়াঙ্কা গোস্বামী কোনও দিনই তৃণমূলে ছিলেন না। এখন নাটক করছেন। তিনি আন্দোলন করতেই পারেন। তবে আশিস দে-কে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে কি না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয় নেতৃত্ব।’’ তবে এই তরজায় প্রিয়াঙ্কার পাশে থাকার কথা বলেছে বিজেপি। দলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিল্বেশ্বর সিংহের দাবি, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানানোর পরেও অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কারণ ওই দুর্নীতিতে তৃণমূলের অনেক নেতাই জড়িত। প্রিয়াঙ্কা গোস্বামী দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামলে তাঁর পাশে থাকবে বিজেপি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy