অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় ছদ্মবেশে বধূ। নিজস্ব চিত্র।
সবেমাত্র শেষ হয়েছে ভাষণ। মঞ্চ থেকে নেমে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আচমকা কর্মী-সমর্থকদের ভিতর থেকে চিৎকার। হাত নেড়ে অভিষেকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন এক ‘বৃদ্ধা’। তৃণমূল সাংসদের কাছে আসার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বেশি দূর এগোতে পারলেন না। তার আগেই আটকে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। কিছু ক্ষণ টানাপড়েনের পর খোদ অভিষেকের হস্তক্ষেপ। ওই ‘বৃদ্ধা’কে ডেকে নিলেন তাঁর কাছে। একান্তে দু’জনে বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলার পর ‘বৃদ্ধা’ বাইরে বেরোতেই যা ঘটল, তা সিনেমাকেও হার মানাবে!
বাইরে বেরিয়ে মেকআপ সরিয়ে ‘বৃদ্ধা’ জানালেন, তাঁর নাম প্রিয়ঙ্কা গোস্বামী। তিনি তৃণমূলেরই কর্মী। ছদ্মবেশে সভায় এসেছেন। তা না হলে হয়তো তাঁকে সভায় ঢুকতেই দেওয়া হত না! দলের এক নেতার বিরুদ্ধে অভিষেকের কাছে অভিযোগ জানাতেই তিনি সভায় এসেছেন বলে জানান প্রিয়ঙ্কা। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের নেত্রী নারী শক্তির প্রতীক। সেই জায়গায় তাঁর দলের এক জন নেতা কী করে এতটা দুর্নীতিগ্রস্ত হতে পারে! আমি চাই, আশিস দে-কে দল থেকে বহিষ্কার করা হোক। আমি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিস্তারিত জানিয়েছি। আমি ছদ্মবেশে না এলে আমাকে সভায় প্রবেশ করতে দেওয়া হত না। সেই জন্য বৃদ্ধার বেশে এসেছি।’’
বুধবার বাঁকুড়ার ওন্দায় সভা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। সেই সভাতেই গিয়েছিলেন প্রিয়ঙ্কা। চুলে সাদা রং, মুখে মেকআপ। শাড়িতে দলের ব্যাজ লাগিয়ে দর্শকাসনেই বসে ছিলেন। অভিষেকের ভাষণ শেষ হওয়ার পরেই প্রিয়ঙ্কা ছুটে যান অভিষেকের দিকে। নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে বাধা দিলে তাঁর চিৎকার-চেঁচামেচির মধ্যে হস্তক্ষেপ করেন অভিষেক। প্রিয়ঙ্কাকে ডেকে তাঁর সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথা বলে সেখান থেকে বেরিয়ে যান তৃণমূল সাংসদ। অভিষেকের সঙ্গে কথা বলার পর সংবাদমাধ্যমের সামনে তৃণমূলের ওন্দা ব্লকের প্রাক্তন সহ-সভাপতি আশিসের বিরুদ্ধে সরব হন প্রিয়ঙ্কা।
প্রিয়ঙ্কা ওন্দার রামসাগরের বাসিন্দা। তাঁর অভিযোগ, অতিমারিকালে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি দেওয়ার নাম করে তাঁর কাছ থেকে ৯৫ হাজার টাকা নেন আশিস। ওই সংস্থার হয়ে কিছু দিন কাজও করেন প্রিয়াঙ্কা। পরে তিনি জানতে পারেন সংস্থাটি ভুয়ো। এর পরেই আশিসের কাছে টাকা ফেরত চান প্রিয়াঙ্কা। আশিস টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করায় ওন্দা থানারও দ্বারস্থ হন। প্রিয়ঙ্কার অভিযোগ, তার পরেই তাঁর রামসাগর গ্রামের দোকানে হামলা চালানো হয় আশিসের মদতে। প্রিয়াঙ্কা জানান, বিষয়টি আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে। অভিষেককে তিনি এই ঘটনার কথা জানাতে সভায় এসেছিলেন।
যদিও প্রিয়ঙ্কার অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন আশিস। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনা দু’বছর আগের। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। আমার বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। হামলার অভিযোগও সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিজেপির মদতে ওই মহিলা এমন কাণ্ড করেছেন।’’
তৃণমূলের ওন্দা ব্লক সভাপতি উত্তম বিট এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ঘটনাটা নিয়ে তদন্ত চলছে। এই অবস্থায় নতুন করে ওই মহিলার অভিনয় করে সভায় আসার কোনও অর্থ হয় না।’’
এই ঘটনায় বিজেপির কোনও যোগ নেই দাবি করেছেন ওন্দার বিজেপি বিধায়ক অমরনাথ শাখা। তিনি বলেন, ‘‘প্রিয়ঙ্কা গোস্বামীর অভিযোগ সম্পূর্ণ সত্য। তাঁর সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বরাবরই তৃণমূলের কর্মী। অন্য দিকে, অভিযুক্ত আশিস দে এক সময় আমাদের দল করত। দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে তাঁকে তাড়ানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy