প্রতীকী ছবি।
পরিচ্ছন্ন বাংলা গড়ার কর্মসূচিতে সোমবারই সরকারি উদ্যোগে সাফাই অভিযান হয়েছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেই রাতেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরের প্যাসেজে ঘুমিয়ে থাকা এক বৃদ্ধার কপালে সাপ কামড়াল। ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধার নাম জাকিয়া বিবি। তাঁর স্বামী ওই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অন্য রোগীর আত্মীয়েরা ওই মহিলাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। তাঁকে হাসপাতালের মহিলা বিভাগে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার কিছু ক্ষণের মধ্যে সাপে কাটা ওই রোগীকে অ্যান্টি ভেনাম ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় তাঁর স্যালাইন চলছে। তিনি কখনও বসছেন, কখনও আবার শুয়ে পড়ছেন। জাকিয়া বিবির কথায়, ‘‘সাপে কেটেছে বলে ডাক্তাররা আমাকে জেগে থাকতে বলেছেন।’’
হাসপাতাল চত্বরেই তাঁর মাকে সাপ কামড়ানোর খবর পেয়েই ভোরে হাসপাতালে চলে আসেন ওই মহিলার বড় মেয়ে জুসমা বিবি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ভাবতেই পারছি না হাসপাতালের বাইরে সাপ ঘোরাফেরা করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাবধান হওয়া উচিত। না হলে আরও বড় বিপদ ঘটতে পারে।’’
আরও পড়ুন: অযথা ডেঙ্গি-আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে, ক্ষিপ্ত মমতা
মালদহ মেডিক্যালের সুপার অমিত দাঁ জানান, হাসপাতালে কালই সাফাই হয়েছে। কিন্তু, হাসপাতালের বাইরে নিকাশি নালা থেকে শুরু করে বাইরের এলাকা অপরিষ্কার থাকছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বাইরের দিকটা পরিষ্কার করার দায়িত্ব পুরসভার। কিন্তু পুরসভাকে বারবার চিঠি দেওয়া হলেও সাফাই নিয়মিত হচ্ছে না। এ ছাড়া আমরা রোগীদের পরিবারের লোকজনদের হাসপাতাল চত্বরে থাকা গেস্ট হাউজে থাকতে বলি। কিন্তু অনেকেই বাইরে ঘুমিয়ে থাকেন। সাপে কাটা ওই মহিলার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তিনি ভাল আছেন।’’ ইংরেজবাজার পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল সরকারের দাবি, নিয়মিত হাসপাতাল চত্বরের বাইরের দিক সাফাই হয়।
কালিয়াচকের আলিপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের শেরশাহি মহেশপুর গ্রামের ৬৫ বছরের বাসিন্দা সুকুরুদ্দিন মোমিন বুকের ব্যথা নিয়ে গত ৬ দিন ধরে মালদহ মেডিক্যালে চিকিত্সাধীন। তাঁরই স্ত্রী জাকিয়া বিবি। তাঁদের তিন ছেলে, তিন মেয়ে। ছেলেমেয়েরা এলেও স্বামী হাসপাতালে ভর্তি থাকায় জাকিয়া বিবি এ ক’দিন ধরে এখানেই স্বামীর সেবা-শুশ্রুষা করছেন। রাতে হাসপাতাল চত্বরে থাকা অতিথি আবাসের ডরমিটরি ঘরে থাকছিলেন।
জাকিয়া বিবি বলেন, ‘‘সোমবারও রাতে হাসপাতালের ওই অতিথি আবাসে থাকতে থাকতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ডরমিটরি ফাঁকা না থাকায় ঘুরে চলে আসি। এর পর দেখি এমারজেন্সির গেটের পাশে থাকা চাতালে অনেকেই প্লাস্টিক পেতে ঘুমিয়ে রয়েছে। মঙ্গলবারই স্বামীকে ছুটি দিয়ে দেওয়ার কথা। তাই এক রাত এমারজেন্সির সামনের ওই চাতালেই কাটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু তা যে কাল হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি।’’
কী হয়েছিল ঠিক?
তখন রাত তিনটে। ওই বৃদ্ধার কথায়, ‘‘আমরা প্রায় ১৫-১৬ জন তখন গভীর ঘুমে। সে সময়ই আচমকা পাশেরই কয়েক জন চিত্কার করে ওঠেন। আমিও উঠে বসে পড়ি। কিন্তু কোনও কিছু বোঝার আগেই কালো রঙের ছোট একটি সাপ আমার কপালে ছোবল দেয়। কপাল থেকে রক্তও বের হয়। আমার চিৎকারে পাশে থাকা লোকজনই কোলে তুলে নিয়ে জরুরি বিভাগে যান।’’
এই ঘটনায় হাসপাতালের চিকিত্সক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy