মিটার রিডারদের উপরে কখনও কখনও কড়া নজরদারি। কখনও বা পুরনো এজেন্সি বাতিল করে নতুন পেশাদার সংস্থা নিয়োগ। কখনও আবার হুটহাট ‘স্পট বিলিং’।
কোন গ্রাহক ঠিক কত বিদ্যুৎ খরচ করছেন, তার ঠিক হিসেব পাওয়ার জন্য হরেক কিসিমের ব্যবস্থা নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। কিন্তু তাতে অবস্থার সামান্য কিছু উন্নতি হলেও ক্ষতির বহর বিশেষ কমছে না। তাই মিটার রিডিংয়ের জন্য এ বার নতুন প্রযুক্তির দ্বারস্থ বিদ্যুৎ সংস্থা। অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের সাহায্যে মিটার পড়ে নিখুঁত হিসেব কষা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে ঠিক হিসেব মিলবে কী ভাবে?
বণ্টন সংস্থার এক কর্তা জানান, অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহক এবং মিটার রিডারদের মধ্যে অশুভ আঁতাঁতের জন্য লোকসান বাড়ে। হাতে-কলমে মিটার রিডিংয়ের ক্ষেত্রে কাগজে কাটাকুটির সুযোগ থাকে। অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করলে সেই কারচুপির সম্ভাবনা কমবে। কারণ, নির্দিষ্ট করে বললে সাহায্যটা নেওয়া হচ্ছে আসলে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ক্যামেরার। ছবি মিথ্যে কথা বলবে না। মিটার রিডিংয়ের দায়িত্বে থাকবেন এজেন্সির লোকজনই। তাঁদের হাতে থাকবে বিশেষ ভাবে তৈরি অ্যান্ড্রয়েড ফোন। তাতে শুধু ছবিই তোলা যাবে। ফোন করা, মেসেজ পাঠানোর মতো অন্য কোনও কাজ তাতে হবে না। গ্রাহকের বাড়িতে গিয়ে সেই অ্যান্ড্রয়েড ফোনে তাঁর মিটারের ছবি তুলে মেন সার্ভারে পাঠিয়ে দেবেন এজেন্সির লোকেরা। অর্থাৎ এটাও এক রকম ‘স্পট রিডিং’-ই। মিটার নম্বর, কনজিউমার নম্বর এবং গ্রাহক কত বিদ্যুৎ খরচ করেছেন— সব তথ্য ধরা থাকবে ওই ছবিতেই। তার ভিত্তিতেই তৈরি হবে গ্রাহকের বিল। ফলে রিডিং নিয়ে আর বিতর্কের কোনও অবকাশ থাকবে না। এই ব্যবস্থা পুরো চালু হলে কাগজে-কলমে মিটার রিডিংয়ের বন্দোবস্তটাই কার্যত তুলে দেওয়া হবে।
ওই সব অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস প্রযুক্তিও থাকবে। জিপিএস থাকলে কোন কর্মী কবে কোথায় কখন কার মিটারের ছবি নিচ্ছেন, সব তথ্যই থাকবে বিদ্যুৎকর্তাদের হাতের মুঠোয়। বণ্টন সংস্থার কর্তৃপক্ষের আশা, এতে মিটার রিডিং এবং বিল তৈরির ব্যবস্থা অনেক আঁটোসাঁটো হবে।
পুজোর পরেই এই ব্যবস্থা চালু করে দিতে চায় বণ্টন সংস্থা। এই ব্যাপারে আগ্রহী এজেন্সি বা সংস্থার কাছ থেকে দরপত্র চাওয়া হয়েছে।। বিদ্যুৎ সূত্রের খবর, ৮-৯টি সংস্থা দরপত্র জমা দিয়েছে। যে-সংস্থা দায়িত্ব পাবে, কর্মীদের জন্য বিশেষ অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যবস্থা করতে হবে তাদেরই। তবে বণ্টন সংস্থাই প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার দেবে।
এতে খরচ তো অনেকটাই। নতুন প্রযুক্তির প্রয়োজন হচ্ছে কেন?
রাজ্যের এক বিদ্যুৎকর্তার কথায়, মিটার রিডিংয়ে স্বচ্ছতা আনার জন্য বিভিন্ন সময়ে নানান ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেই ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। ফাঁকফোকর খুঁজে নিয়ে কারচুপিও চলছে সমানে। এক শ্রেণির মিটার রিডার টাকার বিনিময়ে কম বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে বলে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেন। রিডিং নিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকেও অনেক অভিযোগ আসে। এমনও দেখা গিয়েছে, আদৌ রিডিং না-নিয়ে মাসের পর মাস গড় বিল পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরিণামে লোকসানের বহর বাড়ছে সংস্থার। তাই নতুন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে।
রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, আয় বাড়ানোর জন্য মাসুল বৃদ্ধিই একমাত্র রাস্তা হতে পারে না। ‘‘বিদ্যুৎ পরিষেবা দিতে গিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে-লোকসান হয়, আমরা তা কমিয়ে আনতে চাইছি। মিটার রিডিং নেওয়ার পদ্ধতি আরও স্বচ্ছ করতে পারলে ক্ষতির বহর অনেকটাই কমানো যাবে। তাই নতুন প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে,’’ বললেন শোভনদেববাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy