পুজোর থিম মিলিয়ে দিয়েছে শহর এবং শহরতলিকে। শহর এবং শহরতলির বিগ বাজেটের বেশ কয়েকটি পুজোর থিমে দেখা যাবে উত্তর ভারতের স্থাপত্যের নির্দশন। শহরে বিগ বাজেটের পুজোগুলির মধ্যে প্রতিবারই দর্শকদের নজরকাড়ার তীব্র প্রতিযোগিতা চলে। গত কয়েকবছর ধরে প্রতিযোগিতার বৃত্তে ঢুকে পড়েছে শহরতলির পুজোগুলিও। ভিড় টানায় শহরকে টেক্কা দিতে ধারে-ভারে কোনও কসুর বাকি রাখতে চাইছে না শহরতলির পুজো উদ্যোক্তোরা। এই তীব্র প্রতিযোগিতার আবহেও থিম কিন্তু শহরের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছে শহরতলিকে। সৌজন্যে অবশ্যই উত্তর ভারত।
শহরের বিগ বাজেটের পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম তরুণ দলের পুজো। বছর পাঁচেক আগে ৫০ পেরিয়েছে এই ক্লাবের পুজো। বেশ কয়েকবার পরপর শারদ সম্মান জেতার নজিরও রয়েছে এই উদ্যোক্তাদের। এ বার তাঁদের পুজো ভাবনায় রয়েছে অভিনবত্ব। দেবী প্রতিমা দেখার জন্য মণ্ডপের ভিতরে ঢোকার প্রয়োজন হবে না। মণ্ডপের মাঝ-বরাবর থাকবে প্রতিমা। দর্শনার্থীরা বাইরে থেকেই প্রতিমা দর্শন করতে পারবেন। প্রায় ৮ লক্ষ টাকা বাজেটে তৈরি মণ্ডপে থাকবে ২০ ফুট উঁচু দুর্গা প্রতিমা। মেদিনীপুরের শিল্পী এসে মণ্ডপ সজ্জা করবেন। প্লাইউড, থামোর্কলের ওপর হোগলাপাতা, পাটকাঠি এবং গামছার ব্যবহার করা হবে মণ্ডপসজ্জায়। মণ্ডপের বাইরেও নানা ধরণের মডেল এবং ছবি সাজানো থাকবে। তরুণ দলের মণ্ডপে থাকবে উত্তর ভারতের স্থাপত্যের ছোঁয়া। উত্তর ভারতের মন্দির এবং বিভিন্ন ধর্মস্থানে যেমন কারুকার্য দেখা যায় তেমনই।
তরুণ দলের পুজো কমিটির সম্পাদক বাবলু রায়চৌধুরী বলেন, “পুজোর মণ্ডপ সজ্জায় অন্য বারের থেকে পরিবর্তন আনতে চাইছি। এবার আমরা দর্শনার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্যের ওপর জোর দিচ্ছি।”
ভিড় টানার নিরিখে শহরের অন্যতম দিশারী ক্লাবের পুজো। গত বছর ৫০ পেরিয়েছে দিশারীর পুজো। বাজেট প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। গত বছরের সুর্বণ জয়ন্তীর রেশ অব্যহত রেখে এবারেও টেক্কা দিতে চাইছেন উদোক্তারা। গতবারের মত এবারেও তাদের প্রতিমায় চমক থাকছে। মণ্ডপের মধ্যেই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছেন নবদ্বীপ থেকে আসা এক শিল্পী। ১৬ ফুট উঁচু এবং ২৪ ফুট চওড়া হবে দেবী মূর্তি। মণ্ডপের বাইরে থাকবে ৫ ফুট থেকে ২৫ ফুটের চারটি মকর। আর মণ্ডপ জুড়ে থাকবে মনীষীদের ছবি। থিম ভাবনাতেও স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতেই এই উদ্যোগ বলে তাঁরা জানালেন। নতুন প্রজন্মের কাছে দেশের সংস্কৃতির একটি ধারণা দিতেই এই ভাবনা বলে ক্লাবের তরফে জানানো হয়েছে। পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক প্রদীপ্ত রায় বলেন, “আমাদের থিমের স্বকীয়তা বজায় থাকবে। কলকাতা থেকে মণ্ডপের বিভিন্ন সাজসজ্জা আসছে।” কাপড়, থামোর্কল এবং প্লাইউডের তৈরি মণ্ডপে বসানো হবে কয়েক লক্ষ পুঁতি। মণ্ডপটি হবে উত্তর ভারতের ঘরানার।
পাতকাটা অগ্রণী সঙ্ঘের মণ্ডপ চট, পাট এবং হোগলাপাতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে। বছর আটেক আগে পুজোর সুর্বণ জয়ন্তীতে আয়োজন বড় হয়। তারপর থেকে পুজোর বাজেট প্রতিবছরই বেড়েছে। এবারের পুজোর বাজেট অন্তত ৭ লক্ষ টাকা বলে জানানো হল। পুজো কমিটির মূখপাত্র শুভজিত্ সরকার বলেন, “এলাকার বাসিন্দারা সকলেই সারাবছর ধরে পুজোর জন্য টাকা জমান। সে কারণেই পুজোর বাজেট জোগাড়ে সমস্যা হয় না।” মন্ডপের ভেতরে হোগলাপাতা, পাট এবং চট দিয়ে নানা নকশা তৈরি হবে। ভিতরে কৃষ্ণলীলার ছবি দেখা যাবে। অগ্রণী সঙ্ঘের মণ্ডপের লাগোয়া পাতকাটা কালচারাল ক্লাবের মণ্ডপ। পুজো কমিটির সভাপতি প্রদীপ রায় জানালেন, রাজস্থানের একটি মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরী হবে। কৃষ্ণনগরের একজন শিল্পীর ভাবনায় মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। একটি বিশেষ ধরণের প্লাস্টিক বোর্ড দিয়ে মণ্ডপ তৈরি হবে। ৬৫ ফুট উঁচু এবং ৬৮ ফুট চওড়া মণ্ডপ তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে ফাইবার গ্লাসেরও। এই পুজো কমিটির মণ্ডপের ভিতরেও থাকবে কৃষ্ণের নানা মূর্তি। পাতকাটা কলোনি জুনিয়ার হাইস্কুলের মাঠে যে মণ্ডপটি তৈরি হবে তার আদল অনেকটাই উত্তর ভারতের ঘরানার হবে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy