Advertisement
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিলিগুড়িতে স্বচ্ছ অভিযানের ডাক বিজেপির

চলতি বছরের স্বাধীনতা দিবসের দিন প্রধানমন্ত্রী ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপর থেকেই সারা দেশ জুড়েই এই অভিযানের প্রচার শুরু করেন বিজেপি নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ভারত অভিযানে রাজ্যের তৃণমূল সরকার সহযোগিতা করছে না বলে রাজ্য বিজেপি নেতারা একাধিকবার অভিযোগও তুলেছেন।

শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে বক্তৃতা করছেন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে বক্তৃতা করছেন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫২
Share: Save:

চলতি বছরের স্বাধীনতা দিবসের দিন প্রধানমন্ত্রী ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপর থেকেই সারা দেশ জুড়েই এই অভিযানের প্রচার শুরু করেন বিজেপি নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ভারত অভিযানে রাজ্যের তৃণমূল সরকার সহযোগিতা করছে না বলে রাজ্য বিজেপি নেতারা একাধিকবার অভিযোগও তুলেছেন। এবারে পুরভোট এবং আগামী বিধানসভা ভোটেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভাবে ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানের স্লোগান কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি।

শুক্রবার শিলিগুড়িতে বাঘাযতীন পার্কে বিজেপি-র ‘সংঘর্ষ সংকল্প’ সভায় বিজেপি-তে যোগ দেন শাসক দল তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বামেদের স্থানীয় অনেক নেতা। সভায় বিজেপি-র কেন্দ্রীয় ও রাজ্য কমিটির প্রতিনিধিরা ঘোষণা করেন, আসন্ন শিলিগুড়ি পুরসভার ভোটে জয় নিশ্চিত করে স্বচ্ছ অভিযানের সূচনা হবে। তাঁদের দাবি, ‘স্বচ্ছ শিলিগুড়ি’ গড়ে যে অভিযানের সূচনা হবে তা ক্রমান্বয়ে ‘স্বচ্ছ কলকাতা’ তৈরির পরে ‘স্বচ্ছ বাংলা’ গড়বে।

বিজেপি-র কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহের ঘোষণা, “রাজ্য বিধানসভা দখলের ‘প্রথম পদক্ষেপ’ হল শিলিগুড়ি পুরসভা ভোটে জেতা। অনান্য দলগুলি শিলিগুড়ি পুরবোর্ডের কী হাল করেছেন তা বাসিন্দারা জানেন। আমার বিশ্বাস, শিলিগুড়ির সাধারণ বাসিন্দারা এবারে বিজেপির উপরেই ভরসা রাখবেন। কারণ একমাত্র আমরাই পরিকল্পিত ভাবে উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। শিলিগুড়ির ভোটে জেতার পরে, কলকাতা সহ রাজ্যের অনান্য পুরভোট রয়েছে। তার পরে আমাদের লক্ষ্য রাজ্য বিধানসভা ভোট।”

তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সারদা কাণ্ড থেকে শুরু করে এসজেডিএ-র আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ‘স্বচ্ছ বাংলা’ গড়ার জন্য বাসিন্দাদের কাছে আর্জি জানাতে এ দিনের সভায় উপস্থিত নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। এই স্লোগানের কারণ ব্যাখ্যা করে রাহুলবাবুর অভিযোগ, “এর আগে রাজ্যে যত সরকার এসেছিল, তার কোনটাই তৃণমূলের মতো আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল না। তাই বাংলা থেকে তৃণমূলকে সরিয়ে স্বচ্ছ বাংলা গড়তে হবে। যার শুরু হবে শিলিগুড়ি থেকেই।”

এক মঞ্চে। শিলিগুড়ির সভায় সিদ্ধার্থনাথ সিংহের (মাঝে) সঙ্গে সুরেন্দ্র
সিংহ অহলুওয়ালিয়া (বাঁ দিকে) এবং রাহুল সিংহ। নিজস্ব চিত্র।

বিজেপি সূত্রে জানানো হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার দলের জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে পুরভোটের আগে ‘টিম’ তৈরি করে প্রচার শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক। একই পদ্ধতি কলকাতা পুরসভার ক্ষেত্রেও অনুসরণ করতে হবে বলে তিনি রাজ্য নেতাদের জানিয়েছেন। দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার নির্দেশে পুরভোটে প্রচার চালানোরর নির্দেশ দিয়েছেন। এ দিনের সভায় বিভিন্ন দল থেকে নেতা-কর্মীদের বিজেপিতে যোগদানের বিষয়টিও সাংসদ অহলুওয়ালিয়াই দেখভাল করেছেন বলে জানা গিয়েছে। দলের খবর, আগামী সপ্তাহ থেকেই স্বচ্ছ বাংলা অভিযানের নানা হোর্ডিং লাগিয়ে প্রচার শুরু হবে।

এ দিনের সভার প্রধান বক্তা বিজেপির কেন্দ্রীয় সচিব তথা রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিদ্ধার্থনাথ সিংহের বক্তব্যের আগেই যোগদান পর্ব হয়। বক্তৃতায় সিদ্ধার্থনাথ বলেন, “যুব এবং মহিলা নেতারা কোনও দলে যোগ দেওয়া মানে, সেই দলের উপর মানুষের আস্থা গড়ে ওঠা। আর যুব এবং মহিলা নেতারা যে দল ছেড়ে আসে সেই দল যে অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।” এ দিন দলে যোগদানকারী সকলকে শিলিগুড়ির পুরসভা ভোটে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিদ্ধার্থনাথ।

দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া নিজেই এ দিনের দল বদলের তদারকি করেছেন। বিজেপি সূত্রের খবর, দলে যোগ দিতে ইচ্ছুকদের ‘ইন্টারভিউ’ও নিয়েছেন সাংসদ। এ দিন মঞ্চ থেকে নিজেই দলবদল প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করেছেন সাংসদ। অহলুওয়ালিয়া বলেন, “যারা সংগঠনের কাজ করতে পারবেন তাদেরই দলে নেওয়া হয়েছে।” এ দিন তৃণমূল এবং কংগ্রেসের থেকে যোগ দেওয়া যুব নেতাদের নিয়ে মঞ্চে একসঙ্গে ছবিও তুলেছেন অহলুওয়ালিয়া। দেহসৌষ্ঠবের বিশ্বস্তরের প্রতিযোগিতায় চাম্পিয়ান অশোক চক্রবর্তীও এ দিন বাঘাযতীন পার্কের মঞ্চ থেকে দলে যোগ দিয়েছেন। এ দিনের অনুষ্ঠানে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী, দলের জেলা সভাপতি রথীন বসুরা বক্তব্য রাখেন।

দলের বিদায়ী ডেপুটি মেয়র থেকে শুরু করে যুব নেতা-নেত্রীরা দল ছেড়ে গেলেও সংগঠনে কোনও ক্ষতি হবে না বলে দাবি করেছেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার। তিনি এ দিন দাবি করেছেন, “যাঁরা অকৃতজ্ঞ, তাঁরাই দল ছেড়ে গিয়েছে। দলের তরফে ওঁদের যোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল।” আর উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকতেই পারে। তবে দীপঙ্কর দলের কোনও দায়িত্বে ছিল না। তাই এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

swachh bharat siddhartanath singh bjp clean india
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE