রাজ্যের চা শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে সপ্তম ত্রিপাক্ষিক বৈঠকেও কোনও সমাধান সূত্র মিলল না। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে শাসক দলের মন্ত্রী, শ্রমিক সংগঠনের নেতারা একযোগে বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলির তোপের মুখেও পড়লেন। চেঁচামেচি, হট্টগোল হল। মজুরি চুক্তির দাবিতে তৃণমূল চা শ্রমিক সংগঠন বাইরে কিছুক্ষণ বিক্ষোভও দেখায়। সোমবার শিলিগুড়ি উত্তরকন্যায় প্রায় ছ’ ঘন্টা চলা ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের পর ঠিক হল, আজ, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে ফের বৈঠক হবে। ২৩টি চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথমঞ্চের আহ্বায়ক জিয়াউল আলম বলেন, “এদিনের বৈঠকে নজিরবিহীনভাবে শ্রমমন্ত্রী কথাবার্তা বলেছেন। উনি একসময় আমাদের কথা শুনতেই চাইছিলেন না। বৈঠকে বলেছেন, চুক্তি করলে ভাল। নইলে করবেন না। এমন কথাবার্তা মধ্যস্থতাকারী হিসাবে মন্ত্রীর শোভা পায় না।” তিনি জানান, ষষ্ঠ বৈঠকের সাড়ে চার মাস পর তিনটি দিন বদল করে বৈঠক হল। সেখানে একতরফাভাবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল।
যৌথ মঞ্চের বহু নেতারাই অভিযোগ, শ্রম দফতর এবং শ্রমমন্ত্রীর কাজ শ্রমিক-মালিকদের মধ্যে মধ্যস্থতা করানো হলেও শাসক দলের নেতানেত্রীরা তো বটেই, মন্ত্রীও ‘জোর গলায়’ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন বৈঠকে। তাঁদের মন্তব্য, “মনে হচ্ছিল, রাজ্য সরকার মালিকপক্ষের হয়ে কাজ করছে। মালিকেরা চুপচাপ বসে ছিলেন। একযোগে বিরোধিতা করা হয়েছে। আর লোক দেখাতে বাইরে বিক্ষোভ করা হচ্ছিল। এমনকি, বৈঠক শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই শিলিগুড়ি কার্নিভ্যালের কথা বলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী চলে যান। এতে উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিকদের প্রতি ওঁর কতটা দায়িত্ব, তা স্পষ্ট হয়ে গেল।” আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সম্পাদক তেজকুমার টোপ্পো বলেন, “চাপ দিয়ে চুক্তি করানোর চেষ্টা হয়েছিল।” আরএসপি-র শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি বিনয় চক্রবর্তী, এনইউপিডব্লুউ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মনি ডার্নাল বলেন, “মন্ত্রী শুধু নয়, একসময় শাসক দলের সংগঠনের নেতাদের কথা শুনে বোঝা যাচ্ছিল না, ওঁরা শ্রমিকদের লোক না মালিকপক্ষের।”
শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক অবশ্য বলেন, “এই ধরণের বৈঠকে নানা মত আসবেই। সেখানে নিয়ে কথা হয়েছে। শ্রমিক পক্ষ মালিকপক্ষ বক্তব্য রেখেছেন। আজ, ফের বৈঠক হবে। আমাদের আশা, চুক্তি হয়ে যাবে।” আর মালিকপক্ষের সম্মিলিত সংগঠন সিসিপিএ-র অতিরিক্ত সেক্রেটারি জেনারেল অরিজিত্ রাহা বলেন, “আমরা সরকার, শ্রমিকদের কথা শুনছি। সরকার আজ বৈঠকে কোনও কিছু বললে আমরা আমাদের মত জানাব।” আর তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী দোলা সেন বলেন, “সরকার শ্রমিক স্বার্থেই কাজ করছে। কিছু সংগঠন চিত্কার চেঁচামেচি করে সরকারের প্রক্রিয়া ভেস্তে দিতে চায়।”
সোমবার সরকার পক্ষ প্রস্তাব দেয়, ন্যূনতম মজুরি চা বাগানে লাগু করা হবে। তার জন্য সরকারি পর্যায়ে কাজও শুরু হয়েছে। যার একটি চিঠির প্রতিলিপিও বৈঠকে দেওয়া হয়। তত দিনের জন্য তিন বছরের চুক্তি করা হোক। ন্যূনতম মজুরি চালু হলে চুক্তি খারিজ হয়ে যাবে। কিন্তু যৌথমঞ্চের বক্তব্য, “আমরা নূন্যতম মজুরিই চাই। তা করতে সময় লাগতে পারে। সরকার কমিটি গড়ে নির্দিষ্ট সময় জানিয়ে দিক। তত দিন অন্য চুক্তির দরকার নেই। যা বকেয়া রয়েছে, তা মালিকপক্ষ মিটিয়ে দিক। তিন বছরের জন্য চুক্তি হলে মালিকপক্ষ ওই সময়ের মধ্যে কোনও কথা শুনবে না। পরবর্তীতে আদালতেও যেতে পারে।” সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের শ্রমিক সংগঠনের নেতা বাসুদেব বসু ও অভিজিত্ মজুমদার বলেন, “আমরা ন্যূনতম মজুরির দাবি ছাড়ব না।”
বর্তমানে সমতলের চা শ্রমিকেরা ৯৫ টাকা এবং পাহাড়ে (গতবারের আলাদা চুক্তি অনুযায়ী) ৯০ টাকা করে হাজিরা পান। গত মার্চেই চুক্তি শেষ হয়েছে। এ দিন ঠিক হয়েছে, পাহাড়, সমতল সব মিলিয়ে একটিই চুক্তি হবে। সেখানে তিন বছরের প্রথম বারে পাহাড়ের ক্ষেত্রে ৫ টাকা করে বেশি থাকবে। তৃণমূল চা শ্রমিক সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি অলোক চক্রবর্তী বলেন, “সরকার ন্যূনতম মজুরি চালু করবেই। ততদিন একটা চুক্তি থাক। তবে তা কোনওভাবেই গতবারের বৃদ্ধির ৪০ শতাংশের নীচে নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy