Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ভর্তির ফি নিয়ে উত্তাল কালিয়াচকের স্কুল

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ফি বেশি নেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার বিকেলে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল মালদহের কালিয়াচক থানার আকন্দবেরিয়া এসসি হাইস্কুল চত্বর। গ্রামবাসীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ প্রথমে লাঠি চালায়। পরে পুলিশ শূন্যে অন্তত ১০ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে বলে গ্রামবাসীদের দাবি। ভরা স্কুলে এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ছাত্রছাত্রীরা।

প্রতিবাদী গ্রামবাসীদের ছত্রভঙ্গ করতে শূন্যে গুলি চালাচ্ছে পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র।

প্রতিবাদী গ্রামবাসীদের ছত্রভঙ্গ করতে শূন্যে গুলি চালাচ্ছে পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র।

পীযূষ সাহা
আকন্দবেরিয়া (কালিয়াচক) শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ০২:৩৭
Share: Save:

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ফি বেশি নেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার বিকেলে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল মালদহের কালিয়াচক থানার আকন্দবেরিয়া এসসি হাইস্কুল চত্বর। গ্রামবাসীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ প্রথমে লাঠি চালায়। পরে পুলিশ শূন্যে অন্তত ১০ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে বলে গ্রামবাসীদের দাবি। ভরা স্কুলে এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ছাত্রছাত্রীরা।

ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার। সে দিন ভর্তির ফি কমানোর দাবিতে গ্রামবাসীরা প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান তথা সিপিআই নেতা সহ কয়েক জনকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার সেই ঘটনার প্রতিবাদে স্কুলে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান সহ ৮ জন। স্কুলে তখন ইউনিটের পরীক্ষা চলছে। যাঁরা স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন তাঁদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের বচসা বেধে যায় বেলা আড়াইটে নাগাদ। এ দিন স্কুলের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। ছিল পুলিশের একটি জিপও। এরই মধ্যে আচমকা শুরু হয়ে যায় ইটবৃষ্টি। স্কুলের জানলা, দরজা ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। অভিযোগের তির গ্রামবাসী এবং ছাত্রদের একাংশের দিকে। উঁচু ক্লাসের ওই ছাত্রেরা এ দিন গ্রামবাসীদের সঙ্গে এসে স্কুলের বাইরে পুলিশকে আক্রমণ করে বলে প্রশাসনের দাবি। তখন স্কুল বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাও ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। প্রধান শিক্ষক সহ একাধিক শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে গ্রামবাসীদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে। ঘটনায় ৬ জন পুলিশকর্মী জখম হন। পুলিশের লাঠিতে ৩ ছাত্র জখমও হয়েছে।

স্কুলে হামলা এবং পুলিশকর্মীদের মারধরের অভিযোগে আকন্দবেরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিআইয়ের চন্দন মণ্ডল, সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্য সুফল মণ্ডল, গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য খগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, বিএসপি নেতা নিখিলচন্দ্র মণ্ডল ও সনাতন মণ্ডলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এই ঘটনায় উত্তেজিত গ্রামবাসীরা রাত ৭টা পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মণ চৌধুরী সহ ২৫ জন শিক্ষককে স্কুলে আটকে রাখে। রাত আটটা নাগাদ মালদহ থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী এবং র্যাফ পৌঁছে শিক্ষকদের উদ্ধার করে।

জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের ভিত্তিতেই ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের পুলিশ খুঁজছে।” শূন্যে গুলি চালানোর কথা তিনি স্বীকার করেননি। তাঁর বক্তব্য, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঠিক কী কী পদক্ষেপ করা হয়, তার রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।”

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে এই স্কুলে বিজ্ঞানবিভাগের জন্য ৮০০ টাকা, ফিজিক্যাল এডুকেশনের জন্য ৭০০ টাকা ও কলা বিভাগে জন্য ৫০০ টাকা ফি ধার্য করা হয়েছে। প্রায় ২০০ ছাত্রছাত্রী সেই ফি দিয়ে ভর্তিও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ফি বেশি নেওয়া হচ্ছে অভিযোগে এলাকায় অসন্তোষ দানা বাঁধছিল কয়েকদিন ধরেই। স্থানীয় বাসিন্দা তুষারকান্তি মন্ডল, সহদেব মন্ডলদের অভিযোগ, আশেপাশের অন্য স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে এর থেকে অনেক কম টাকা ফি নিয়ে ছাত্র ভর্তি করা হয়েছে। সে কারণেই কেন বেশি ফি নেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে স্মারকলিপি দিতে যাওয়া হয়েছিল।

লক্ষ্মণবাবুর অবশ্য দাবি, কারও সঙ্গে অভব্য আচরণ করা হয়নি। তিনি বলেন, “প্রধানের নেতৃত্বে ৮ জন এ দিন ঘরে ঢুকে আমাকে মারতে থাকেন। ভাঙচুর করা হয়। শিক্ষকদেরও মারধর করা হয়েছে।” শিক্ষিকা ববিতা মন্ডল, তাপসী বসাকরা জানান, প্রাণ বাঁচাতে টেবিলের নীচে লুকিয়ে ছিলেন তাঁরা। কেউ আলমারির পিছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়েন। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও তখন আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে শুরু করে। অনেকে ক্লাস ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়।

তবে আকন্দবেরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিআই প্রধান চন্দন মন্ডলের দাবি, তাঁরা কাউকে মারধর করেননি। তাঁর দাবি, “ফি কমানোর দাবি নিয়ে আমরা কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলাম। তখনই বাইরে গোলমাল শুরু হয়। পুলিশের যদি সংযত থাকত এমন ঘটনা ঘটত না।”

অন্য বিষয়গুলি:

pijush saha kaliachak akandaberia sc highschool
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE