বক্সিং নয়। ভক্তদের চাপ বাঁচিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। শনিবার জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জে দেবের ছবিটি তুলেছেন সন্দীপ পাল।
আবার ঠেলাঠেলি কেন, কাকা?
তুফানগঞ্জে তখন যেন তুফানই উঠেছে। সামনে দেব। অভিনেতা তথা তৃণমূল প্রার্থী। পুলিশের চ্যালেঞ্জ ছিল, পাগলুর নায়ককে দেখতে আসা উত্তাল জনতার ভিড় সামলানো। হিমসিম খান তাঁরা। থতমত তৃণমূল নেতৃত্বও। মিনিট বিশেকের মধ্যেই তাঁরা সভা শেষ করে দিলেন। কিন্তু তাতে জনতার বয়েই গিয়েছে। তারা তখন দেবের কাছে পৌঁছতে চান। হুড়োহুড়িতে মঞ্চের সামনের বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙে যায়। মাইক হাতে নিয়ে দেব একবার হাত জোড় করে অনুরোধ করেন পিছিয়ে যেতে। কিন্তু ততক্ষণে সামনে লোক ভিড় করে থাকায় দেবই ঢাকা পড়ে গিয়েছেন। পিছনের লোক উত্তেজিত হয়ে চেয়ার ছুড়ছে। তখনই ফের মাইক হাতে বিরক্ত দেবের বক্তব্য, “আবার ঠেলাঠেলি করছেন কেন, কাকা।”
কোচবিহারের তুফানগঞ্জে তৃণমূল প্রার্থী রেণুকা সিংহের
প্রচারসভায় মিমি ও দেব। সোমবার। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত দেবের রোড-শো, প্রচারকে ঘিরে এমনই বিশৃঙ্খলা এবং উন্মাদনা চলল উত্তরবঙ্গে। জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জে হেলিপ্যাডে এত লোক থিকথিক করছিল, প্রথমবার দেবের হেলিকপ্টার নামতেই পারেনি। পুলিশ গিয়ে লোক সরিয়ে দিলে হেলিকপ্টার নামে। কিন্তু যেই না নামা, চারপাশ থেকে পুলিশের বাধা টপকে ছুটে আসে হাজার হাজার মানুষ। এমনই অবস্থা হয়, হেলিকপ্টার থেকে নামতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে উল্টে পড়ে গেলেন খোদ পাইলট। তখন বিকেল পৌনে চারটে। চৈত্র সংক্রান্তির খর রোদ অগ্রাহ্য করে ‘দেব-দর্শনে’র জন্য যেন গাজনের মেলাই বসেছিল স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের মাঠে তৈরি করা অস্থায়ী হেলিপ্যাডে।
হেলিকপ্টারে ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। বিশৃঙ্খলা, ঠেলাঠেলিতে তাঁকে অসহায় দেখায়। বেশ কয়েকজন পড়ে গিয়ে চোট পান। ক্ষুব্ধ মন্ত্রীকে দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ধমক দিতেও শোনা যায়। কিন্তু তাতেও তেমন কাজ হয়নি। রোড-শো শুরু হতেই ফের একই দৃশ্য। ভিড়ে আটকে যায় রোড-শোর হুডখোলা জিপ। সবাই চান দেবকে একবার ছুঁতে। খবর পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেবকে রাজগঞ্জে হেলিপ্যাডে ফিরিয়ে নিয়ে যান।
দেব এ দিন পরেছিলেন কালো ট্রাউজার, সাদা টি শার্ট। চোখে রোদচশমা। কোচবিহারের তুফানগঞ্জ, জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ এবং শিলিগুড়ি লাগোয়া মাটিগাড়ায় এ দিন তৃণমূলের ভোট প্রচারে দেবের সঙ্গে ছিলেন অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীও। দুই তারকার প্রথম সভা ছিল তুফানগঞ্জে। সেখানে বিশৃঙ্খলার জেরে মহিলা ও শিশু-সহ বেশ কয়েক জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবলি খাতুন এবং তপতী বর্মন নামে দুই মহিলাকে তুফানগঞ্জ মহকুমাকে ভর্তি করানো হয়, দু’জনকেই অবশ্য প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিন দিন আগে কোচবিহারের রাসমেলা মাঠে মিঠুন চক্রবর্তীর সভা থেকে ফেরার সময় ভিড়ের জেরে অসুস্থ হয়ে কার্তিক রায় নাম এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল। পরপর এমন ঘটনায় তারকাদের সভা সামলানোর জন্য সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে না কেন সে প্রশ্নও উঠেছে। পুলিশ অবশ্য মানতে চায়নি দেবের সভায় পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা ব্যর্থ হয়েছে বলে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল বলে বড় সমস্যা হয়নি।”
মাটিগাড়ায় তৃণমূলের প্রচারে দেব ও মিমি। রয়েছেন
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
শিলিগুড়ি লাগোয়া মাটিগাড়ার মায়াদেবী ক্লাবের মাঠের সভায় অবশ্য তেমন বিশৃঙ্খলা হয়নি। নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টা দু’য়েক পরে সেখানে দেব যখন সভামঞ্চে পৌঁছলেন তখন সন্ধে। দেব আর মিমি পৌঁছতেই শুরু হয় ভিড়ের উন্মাদনা। মন্ত্রী গৌতমবাবুও কয়েক মিনিটের মধ্যেই বক্তৃতা শেষ করে দেন। দর্শকদের মধ্যে তখন, শুধুই ‘দেব, দেব’ চিৎকার। উন্মাদনা দেখে দেবের দিকে মাইক এগিয়ে দেন মন্ত্রী। দু’হাত মুখের কাছে এনে, দর্শকদের ‘চুমু’ ছুঁড়ে কর্ডলেস মাইক নিয়ে দেব বলেন, “ভাইচুং কিন্তু আমার বন্ধু। ওঁর থেকে ভাল প্রার্থী শিলিগুড়ি পেত না। বন্ধুকে প্লিজ আশীর্বাদ করবেন।”
শিলিগুড়ির সভায় অল্পবয়সীদের ভিড়ও ছিল। দেবের কথায়, “তোমরা কিন্তু বাবা-মাকে ভাইচুংকে ভোট দিতে বোলো।” গত দু’বছরে রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন উদ্যোগেরও বর্ণনা দেন ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী।
দেব বলেন, “তৃণমূলকে বেশি করে জেতালে, দিল্লি থেকে রাজ্যের জন্য অনেক কাজ আদায় করে আনা যাবে।” তারপরেই দেবের সংযোজন, “ইয়ার্কি মারছি না বস্, সত্যি বলছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy