Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

তিরুপতি থেকে মহাবালেশ্বর, উত্‌সবে বদলে গিয়েছে শহর

চেনা রাস্তা হঠাত্‌ গন্তব্য বদলে কোথাও মহাবালেশ্বর, কোথাও বা তিরুপতি মন্দিরের দিকে চলে গিয়েছে। টিনটিন, মিকি মাউসরা রাস্তার পাশে ঘোরাফেরা করছে। বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটে রয়েছে কাগজের নৌকা, লাট্টু, ঘুড়ি-লাটাই। কালীপুজোর কয়েকদিন ধূপগুড়ি যেন রূপকথার শহর হয়ে উঠেছে।

বালুরঘাটে একটি ক্লাবের মণ্ডপ।

বালুরঘাটে একটি ক্লাবের মণ্ডপ।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৪ ০২:১১
Share: Save:

চেনা রাস্তা হঠাত্‌ গন্তব্য বদলে কোথাও মহাবালেশ্বর, কোথাও বা তিরুপতি মন্দিরের দিকে চলে গিয়েছে। টিনটিন, মিকি মাউসরা রাস্তার পাশে ঘোরাফেরা করছে। বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটে রয়েছে কাগজের নৌকা, লাট্টু, ঘুড়ি-লাটাই। কালীপুজোর কয়েকদিন ধূপগুড়ি যেন রূপকথার শহর হয়ে উঠেছে।

এসটিএস ক্লাবের পুজো মণ্ডপকে নৈহাটির শিল্পীরা ফুটিয়ে তুলেছেন অবিকল মহারাষ্ট্রের মহাবালেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের আদলে। মণ্ডপটি প্রায় ৯০ ফুট উঁচু। চওড়ায় অন্তত ১১০ ফুট। মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে ঢের আগে। অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে। মণ্ডপ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফাইবার ও ক্যানভাস কাপড়। মণ্ডপের বাইরে কংক্রিটের ঢালাই করা হয়েছে। অনেকটা মন্দিরের চাঁতালের কায়দায়। সেখানে থাকবে একটি বড় ফোয়ারা। যেটি গানের বিভিন্ন তালে ভঙ্গি বদলাবে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, মণ্ডপ দেখে মণিমুক্তা খচিত কংক্রিটের বলে মনে হবে। কালীপ্রতিমা তৈরি করেছেন চন্দননগরের শিল্পীরা। থিমের সঙ্গে সাজুয্য রেখে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবে মারাঠি লোকনৃত্যের আয়োজন।

শুধু কি মণ্ডপের চমক! চমকে দেওয়ার মতো আলোর রোশনাইও রয়েছে বলে পুজো উদ্যোক্তারা দাবি করেছেন। মণ্ডপে পৌঁছতে হবে ৭টি আলোর তোরণ দিয়ে। আলোতে দেখা যাবে মহাভারতের নানা কাহিনি। রাস্তার পাশে হেঁটে বেড়াবে টিনটিন, মিকি মাউস-রা। জাকজমকের সঙ্গে বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর কথাও জানিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা। সম্পাদক অনিরুদ্ধ দাশগুপ্ত বলেন, “দীপাবলি উত্‌সবে বন্ধ রেডব্যাঙ্ক চা বাগানের একশো শ্রমিক এবং পুরসভা এলাকার দু’শো দুঃস্থ বাসিন্দাকে কম্বল দেওয়া হবে।”


চাঁচলে শোলার মুকুট
তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পীরা।


মালদহের সাহাপুরে রসিলাদহে প্রদীপ বানাচ্ছেন
কুমোরপাড়ার রণজিত্‌ পাল। তা দেখতে ভিড় করেছে খুদেরা।

এসটিএস ক্লাবের মণ্ডপ ছেড়ে কিছুটা এগিয়ে পিচ রাস্তা মিশে গিয়েছে প্রকাণ্ড এক গুহায়। বৈরাতীগুড়ি সর্বজনীনের এবারের পুজোর থিম ‘ভূ-গর্ভের বিস্ময়।’ অন্ধ্রপ্রদেশে খুঁজে পাওয়া আর্য যুগের বোরা গুহার আদলে তৈরি প্রায় পাঁচ হাজার বর্গ ফুট আয়তনের মণ্ডপ। শুধু বাইরের আদল-ই নয়, ভিতরে দেখতে পাওয়া যাবে গুহাবাসীদেরও। ৩০টি মডেল দিয়ে সাজানিয়ে তোলা হয়েছে গুহাবাসী আর্যদের চালচিত্র। পুজো কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা কৌস্তভ ভৌমিক জানান, “আকর্ষণ শুধু মণ্ডপে নয়, প্রতমিমা প্রায় ২০ হাত উঁচু হচ্ছে। রাস্তা জুড়ে থাকবে এলইডি আলোয় সাজানো অগ্নিকুণ্ডু। এটাকে চমক বলতে পারেন।”

সূর্য ডুবতেই চেনা শহরটা আলোর রঙে বদলে যাচ্ছে, পাল্টে যাচ্ছে দ্রুত। শহরের থানা রোডে অন্ধকার চিরে দেখা যাবে ৭০ ফুট উঁচু তিরুপতি মন্দির। মণ্ডপ নয় কিন্তু। শান্তি সঙ্ঘের পুজো মণ্ডপে যাওয়ার আলোর তোরণ। এই তোরণের পরে আরও ৬টি তোরণ দিয়ে পৌঁছতে হবে জাপানের বৌদ্ধ বিহারের আদলে বাঁশের তৈরি মণ্ডপে। প্রায় ৫০ ফুট উঁচু এবং ৪৮ ফুট চওড়া ওই মণ্ডপের প্রতিমাতেও অভিনবত্ব রয়েছে বলে উদ্যোক্তারা দাবি করেছেন। প্রতিমা তৈরি করেছেন কৃষ্ণনগরের শিল্পীরা। ক্লাব সম্পাদক রতন চন্দ জানান, আলোয় দেখা যাবে আরও নানা অভিনব বিষয়।

কংক্রিটের নানা মন্দির, ভবনের থিমের মাঝে রয়েছে শৈশব ফিরে পাওয়ার কয়েক মুহূর্তের সুযোগও। ইয়ং অ্যাসোসিয়েশনের মণ্ডপের থিম ‘হারানো শৈশব।’ প্লাস্টার অব প্যারিসে তৈরি মণ্ডপ জুড়ে রয়েছে ফেলে আসা শৈশবের স্মৃতি জাগিয়ে দিতে পারে এমনই সব সম্ভার। কাগজের নৌকা ভাসানো, ঘুড়ি, লাটাই, লাট্টু, তির ধনুক, লুকোচুরি- গোল্লাছুট খেলার মডেল। শৈশবের এই সব অনুষঙ্গ কী করে বর্তমান প্রজন্মের থেকে হারিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে বাবা-মায়েদের সচেতন করার থিম মণ্ডপে থাকবে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। ক্লাব কর্তা চন্দন সাহা বলেন, “শিশুদের স্বাধীনতা ফেরাতে তাঁদের ওই উদ্যোগ। এর পরেও রয়েছে এভারগ্রিন, নেতাজি পাড়া স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর চমক।”

অমিত মোহান্ত, বাপি মজুমদার, মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

অন্য বিষয়গুলি:

theme kali puja biswajit bhattacharya dhupguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE