ঘর নেই, কর্মী নেই, টাকা নেই। অথচ জেলায় রাস্তা, সেতু সহ নানান উন্নয়ন মূলক কাজের দাবিতে রোজই সরব হচ্ছেন বাসিন্দারা। কিন্তু, সে জন্য কোনও টাকা বরাদ্দ তো দূরে থাক, জেলা পরিষদের দৈনন্দিন খরচ চালানোর জন্যেও টাকা মিলছে না। জেলা গঠনের প্রায় সাতমাস পরেও এভাবেই চলছে আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদ।
গত বছর অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে গঠিত হয় আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদ। অন্য দল ভাঙিয়ে নিজেদের দলে টেনে এনে জেলা পরিষদ নিজেদের দখলে আনার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরূদ্ধে। শহরের বাবুপাড়া লাগোয়া এলাকায় জেলা পরিষদের পুরোনো ভবনটিকে সাজিয়ে গুছিয়ে নতুন জেলা পরিষদ দফতর তৈরি হয়। মাত্র পাঁচটি ঘর রয়েছে সেখানে। জেলা পরিষদের সমস্ত কর্মাধ্যক্ষ ও কর্মীদের জন্য কম পক্ষে আরও ১১টি ঘর প্রয়োজন। সেই ঘর গুলি কোথায় আর কবে তৈরি হবে এবং প্রয়োজনীয় টাকার জোগান কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন কর্তারা। আরও একটি বড় সমস্যা হল কর্মীর অভাব। পঞ্চায়েত সমিতির কাজ কর্ম চালাতেই যেখানে কমপক্ষে ১৫ জন কর্মীর দরকার, সেখানে আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের কর্মী সংখ্যা মাত্র ছয়। ডিস্ট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে এখনও নিয়োগ না হওয়ায়, টাকা এলেও কোনও কাজ চালু করা যে অসম্ভব তা মেনে নিয়েছেন তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি অতুল সুব্বা। তাঁর কথায়, “ডিস্ট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া আমাদের পক্ষে কোনও কাজের দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব নয়। জেলা পরিষদের পরিকাঠামো গড়ে তোলাটা এখন মূল কাজ।”
জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, গত আর্থিক বছরে কেন্দ্র ও রাজ্যের দেওয়া অর্থের ৪৯ শতাংশ আলিপুরদুয়ার জেলার জন্য বরাদ্দ করা হয়। কিন্ত এই টাকা আপাতত রয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের হাতেই। আলিপুরদুয়ার জেলায় যে কাজ চলছে তার দেখভালও করছে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ। অবশিষ্ট কত টাকা এই জেলার জন্য বরাদ্দ রয়েছে সে অঙ্ক জানা নেই নবগঠিত আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের কারও। এমনকী, জেলা পরিষদের অধীনে যে হাট গুলি রয়েছে সেখানকার খাজনাও এখনও আদায় করছে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ। অতুল বাবু বলেন,“জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের কাছে থাকা আমাদের অংশের টাকা কবে পাব তা জানতে গিয়েছিলাম। আশা করি সেই টাকা খুব শীঘ্রই আমাদের হাতে আসবে।”আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের বিরোধী দল নেত্রী শুক্লা ব্রহ্ম ঘোষ বলেন, “নামে মাত্র জেলা পরিষদ। টাকা নেই। কর্মী নেই। এ ভাবে কত দিন চলবে জানি না। উন্নয়ন পুরোপুরি থমকে। জেলা শাসকও এর সদুত্তর দিতে পারছেন না।”
এদিকে জেলা পরিষদ ভাগ হওয়ার পর গোটা আলিপুরদুয়ার জেলার উন্নয়ন থমকে যাওয়ায় দিশাহারা ছ’টি পঞ্চায়েত সমিতি। আলিপুরদুয়ার ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রিঙ্কু তরফদারের কথায়, “গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে কয়েকটি টিউবওয়েলের জন্য জেলা পরিষদের কাছে টাকা চাওয়া হলেও অর্থ নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।” আলিপুরদুয়ার ১ নম্বর ব্লকের সভাপতি সুজয় সিংহ রায়ের কথায়, জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ থেকে যা অর্থ পাওয়ার তা পেয়েছি। এখন নতুন জেলা পরিষদ কোনও উন্নয়ন মূলক কাজেই টাকা দিচ্ছে না। এ ভাবে চলতে পারে না।” কবে জেলা পরিষদের কাজ শুরু হবে সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আলিপুরদুয়ার জেলা শাসক আ্যালিজ ভেজের ফোন বেজে গিয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা শাসক পৃথা সরকার অবশ্য জেলার বাইরে রয়েছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy