ভাঙচুরের পরে। শনিবার মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে এবার শাসক দলের পার্টি অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল মালদহের মানিকচকে।
শুক্রবার রাতে মানিকচকে যুব তৃণমূলের ব্লক পার্টি অফিসে দলীয় নেতা কর্মীরা আলোচনা করছিলেন। সে সময় তৃণমূলেরই কয়েকজন নেতা-কর্মী অফিসে ঢুকে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। ব্লক যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতিকে মারধরেরও অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় যুব তৃণমূলের তরফে দলেরই কয়েকজন নেতা কর্মীর নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত দু’পক্ষই তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের অনুগামী বলে পরিচিত। অনুগামীদের মধ্যে গোলমালের জেরে পার্টি অফিস ভাঙচুর এবং তা নিয়ে পুলিশে অভিযোগ হওয়ার ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক দল। জেলা নেতারা অবশ্য অস্বস্তি এড়াতে বিষয়টিকে ব্যক্তিগত বলে দাবি করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মানিকচকে ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসের সামনেই রয়েছে দলের যুব তৃণমূলের পার্টি অফিস। শুক্রবার রাতে যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি নিমাই মণ্ডল ও তাঁর দুই সহযোগী এই কার্যালয়ে বসেছিলেন। সেই সময়ে স্থানীয় ব্লক তৃণমূল কর্মী বাপি সিংহ ও রাজু মণ্ডল একদল কর্মীকে নিয়ে পার্টি অফিসে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত বাপি এবং রাজু এলাকার তৃণমূল নেতা জামাল খানের অনুগামী বলে পরিচিত। এলাকার রাজনীতিতে ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি নিমাইবাবু এবং জামাল খানের অবস্থান ভিন্ন মেরুতে বলেই দলের একাংশ নেতা দাবি করেছেন। তার প্রেক্ষিতেই যুব তৃণমূল অফিসে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
যুব তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, হামলাকারীরা অফিসে ঢুকেই ভাঙচুর শুরু করে। এর প্রতিবাদ করায় নিমাইবাবু সহ ২ কর্মীকে ব্যাপক মারধর করা হয়। তাঁদের চিৎকার শুনে পড়শিরা ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। জখম যুব নেতাদের মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। এই ঘটনায় তৃণমূল কর্মী নিমাই, বাপি ও রাজু সহ বেশ কয়েকজনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে রাজু মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একটা গোলমাল হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
তাঁরই দুই অনুগামীর মধ্যে বিবাদের জেরে এই ঘটনা বলে অভিযোগ উঠলেও রাজ্যের মন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক সাবিত্রী মিত্রের দাবি, “গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কোনও বিষয় নেই। কী কারণে এমন ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখছি। থানায় অভিযোগ হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে দেখবে।” দলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন। জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি অম্লান ভাদুড়ি বলেন, “কী ঘটেছে পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।”
জেলা নেতারা গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাইলেও ব্লক যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি নিমাই মণ্ডল বলেন, “জামাল খানের অনুগামী বাপি ও রাজুর নেতৃত্বে পার্টি অফিসে ভাঙচুর হয়েছে। প্রতিবাদ করায় আমাদের মারধর করা হয়। সম্প্রতি জামালের বেশ কিছু অনুগামী আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। সে কারণে ক্ষুব্ধ হয়েই জামাল আমার উপর হামলা করিয়েছে।” অন্যদিকে, ব্লক তৃণমূল নেতা জামাল খান এই অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা দাবি করে বলেন, “আমরা একই দলের। আমরা সব এক সঙ্গে কাজ করি। তবে ব্যক্তিগত ঝামেলার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে বলে শুনেছি। দলের কোনও বিষয় নেই।”
গত ১৯ জানুয়ারি মালদহের কালিয়াচকে তৃণমূলের একটি ব্লক কার্যালয় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। দলের একাংশ নেতা কর্মীদের অনুমান, ওই ঘটনার পিছনেও গোষ্ঠী কোন্দল রয়েছে। শাসক দলের কোন্দলের জেরে এলাকার আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিজেপির জেলা সভাপতি শিবেন্দু শেখর রায় বলেন, “এতদিন আড়ালে আবডালে শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলছিল। এখন দলটির আগল খুলে গিয়েছে। শাসক দলের এমন গোলমালের জেরে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy