বাগডোগরা কলেজে গণ্ডগোল চলছে পুলিশের সামনেই। রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
কোথাও বিরোধীদের রুখতে বিভিন্ন মোড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ‘পিকেটিং’ চলল। কোথাও বিরোধীদের দেখে বেঞ্চি তুলে তেড়ে গেলেন ছাত্র নেতারা। অভিযোগ, ইট, পাথর ছোড়া থেকে রাস্তায় ফেলে মারধর, সবই চলল পুলিশের সামনেই।
শিলিগুড়ির কলেজগুলির ছাত্র সংসদ ভোটের মনোনয়ন তোলার প্রথম দিনে এই সব অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ, সব ক্ষেত্রেই পুলিশ নীরব দর্শক ছিল। ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও, শাসক-বিরোধী সব দলের হয়েই ‘বহিরাগত’রা কলেজের সামনে জড়ো হলেও পুলিশকে পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই শিলিগুড়ির ডাবগ্রামে মহিলা কলেজ চত্বরের ‘দখল’ নেয় টিএমসিপির নেতা-কর্মীরা। কলেজের মূল গেট থেকে শুরু করে লাগোয়া মোড়েও টিএমসিপি নেত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সংগঠনের সমর্থক ছাড়া অন্য কোনও ছাত্রীকে দেখলেই তেড়ে যেতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। দুপুর ১২টা নাগাদ মনোনয়ন পত্র তোলা শুরু হওয়ার কিছু পরে ডিএসও-র এক সমর্থক মনোনয়ন পত্র তুলতে কলেজে ঢুকতে যেতেই তাকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে টিএমসিপির বিরুদ্ধে। ঘটনার খবর পেয়ে শিলিগুড়ি থানার আইসি বিকাশকান্তি দে ঘটনাস্থলে যান। আনা হয় বাড়তি পুলিশ বাহিনী। বাড়ানো হয় মহিলা পুলিশের সংখ্যাও। তাতেও কোনও ফল মেলেনি বলে অভিযোগ।
দুপুর দেড়টার পরে এসএফআই সমর্থকরা একটি গাড়িতে চেপে কলেজের সামনে পৌঁছতেই টিএমসিপি কর্মীরা তাঁদের গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ। এসএফআই-এর বিদায়ী সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা রায়-সহ দুই ছাত্রীকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সে সময় মহিলা পুলিশ থাকলেও, তাঁরা একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে অভিযোগ। এসএফআইয়ের এক সমর্থক পাশের শুকনো নর্দমাতেও পড়ে যান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ পাল, টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি নির্ণয় রায় এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর আপ্ত সহায়ক অমিত দত্তও। অভিযোগ, এর পরে কলেজের আশেপাশে জড়ো হওয়া এসএফআই সমর্থকদের পুলিশের সামনেই নির্ণয় সহ অন্যরা মারধর করে। রাস্তার পাশে থাকা একটি বেঞ্চি তুলে বাম সমর্থকদের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায় নির্ণয়কে। তাড়া খেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে বাম সমর্থকরা চলে গেলে, পুলিশ সক্রিয় বলে বিরোধীদের দাবি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অবশ্য দাবি করেছেন, “আমাদের মারধর করছিল এসএফআই’য়ের ছাত্রীরা। নিজেকে বাঁচাতে আমাদের ছাত্রীরা আত্মরক্ষা করছিল মাত্র। জখম ছাত্রীকে চিকিত্সা করাতে হয়েছে।”
গণ্ডগোলে টিএমসিপি নেতা নির্ণয় রায়।
মনোনয়নপত্র তোলার পরে জখম এসএফআই কর্মীদের অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে কলেজ থেকে বের করে আনা হয়। তিন ছাত্রীকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অন্য দিকে, শিলিগুড়ির ভক্তিনগরের সূর্য সেন কলেজ এবং সেবক রোডের মুন্সি প্রেমচাঁদ কলেজে টিএমসিপি-র বাধায় বিরোধী সংগঠনের কেউ মনোনয়ন তুলতেই পারেনি বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে সেবক রোডে পায়েল সিনেমাহল মোড় এবং ৩১-ডি জাতীয় সড়কে প্রায় দু’ঘন্টা অবরোধ করে এসএফআই। সংগঠনের জেলা সম্পাদক সৌরভ দাসের অভিযোগ, “পুলিশের সামনে সব হয়।”
পুলিশের সামনেই মনোনয়ন পত্র ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাগডোগরায় কালীপদ ঘোষ তরাই কলেজেও। কলেজের ভিতরে থাকা পুলিশের সামনেই এবিভিপি কর্মীদের থেকে ২টি মনোয়ন পত্র নিয়ে ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের সামনেই চলে হুমকি-পাল্টা হুমকি। পরে অবশ্য পুলিশ গিয়ে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে বাইরে বার করে দেন। নকশালবাড়ি কলেজেও চার সংগঠনই মনোনয়ন তুলেছে বলে দাবি করেছে।
মঙ্গলবারের মতো আজ বুধবারেও মনোনয়ন পত্র তোলার প্রক্রিয়া চলবে। সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার দাবি করেছেন, বুধবারেও তাঁদের ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা মনোনয়ন পত্র তুলতে বাধা পেলে শিলিগুড়ি জুড়ে আন্দোলন হবে। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “সব কলেজের গেটের সামনেই পুলিশ দাঁড়িয়ে শাসক দলের নেতাদের সন্ত্রাস দেখেছে।” সন্ত্রাসের অভিযোগ অস্বীকার করলেও, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল নেতারাও। জেলা তৃণমূল নেতা কৃষ্ণবাবুর অভিযোগ, “মহিলা কলেজে এসএফআই আমাদের মেয়েদের উপরে হামলা চালিয়েছে। মহিলা পুলিশ থাকলেও, তারা দর্শক ছিল। পুরুষ পুলিশকর্মীরা মেয়েদের উপরে লাঠি চালিয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি।”
বিরোধী থেকে শাসক ভিন্ন সুরে হলেও, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও, শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন অবশ্য দাবি করেছেন, শান্তিপূর্ণ ভাবেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রথম দিন কেটেছে। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও অস্বীকার করে সিপি বলেন, “সর্বত্রই পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করেছে। যদিও কোথাও ভুল হয়ে থাকে, তবে খতিয়ে দেখা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy