Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

আক্রমণাত্মক গুরুঙ্গ, ভাইচুঙের ভরসা জনপ্রিয়তা

এক জন দিল্লি থেকেই ফিরেই ফের প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ারি দিলেন। অন্য জন সাত সকালে দার্জিলিঙের ম্যালে মহাকাল বাবার মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়ে পাহাড়ে শুরু করলেন প্রচার।

পুজো দিয়ে দার্জিলিঙে ভোট প্রচার শুরু করলেন ভাইচুং ভুটিয়া। বুধবার সাত সকালেই ম্যালের মহাকাল মন্দিরে পৌঁছে যান দার্জিলিং কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। ভাইচুংয়ের কথায়, “দার্জিলিং আমার ভালবাসার জায়গা। যত ঘুরছি, ততই এটা বুঝছি।” ছবি: রবিন রাই।

পুজো দিয়ে দার্জিলিঙে ভোট প্রচার শুরু করলেন ভাইচুং ভুটিয়া। বুধবার সাত সকালেই ম্যালের মহাকাল মন্দিরে পৌঁছে যান দার্জিলিং কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। ভাইচুংয়ের কথায়, “দার্জিলিং আমার ভালবাসার জায়গা। যত ঘুরছি, ততই এটা বুঝছি।” ছবি: রবিন রাই।

কিশোর সাহা ও রেজা প্রধান
শিলিগুড়ি ও দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৪ ০১:৪৮
Share: Save:

এক জন দিল্লি থেকেই ফিরেই ফের প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ারি দিলেন। অন্য জন সাত সকালে দার্জিলিঙের ম্যালে মহাকাল বাবার মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়ে পাহাড়ে শুরু করলেন প্রচার।

অবশ্য আরও এক জন আছেন। তিনি পাহাড়ের সব কটি বুথে যাতে কলীয় কর্মীরা প্রচারে নামেন তা নিশ্চিত করতে দিনভর বৈঠকে ব্যস্ত থাকলেন। বুধবার সারাদিন এমনই ছবি দেখা গেল দার্জিলিঙে।

প্রথম জন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গ। বলা বাহুল্য, দ্বিতীয় ও তৃতীয় জন যথাক্রমে ভাইচুং ভুটিয়া ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব।

মাস দুয়েক আগেও মোর্চা-তৃণমূল নেতারা এক মঞ্চে থাকলেও আসন্ন লোকসভা ভোটে যে কেউ কাউকে ‘এক ইঞ্চি জমি’ ছাড়তে রাজি নন সেই বার্তাই দেওয়ার চেষ্টা করলেন দু’পক্ষ। মোর্চা সভাপতি দিল্লি থেকে ফিরেই দাবি করলেন, দার্জিলিং কেন্দ্রে অতীতে সিপিএম প্রার্থীকে যে ভাবে পর্যুদস্ত করা হয়েছিল, সেই হাল করা হবে তৃণমূল প্রার্থীরও।

গুরুঙ্গের দাবি, “পাহাড়ের তিন মহকুমা থেকে তৃণমূল ১৫ হাজারের বেশি ভোট পেলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।” সেই সঙ্গে গুরুঙ্গের এ দিনের ঘোষণা, আজ, বৃহস্পতিবার দার্জিলিং আসনে বিজেপি প্রার্থীর নাম জানানো হবে। কে প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে অবশ্য কোনও কথা বলতে রাজি হননি মোর্চা সভাপতি। তবে মোর্চার অন্দরের খবর, বিজেপির প্রথম সারির কোনও শীর্ষ নেতা রাজি না হলে পাহাড়ের কাউকে বিজেপির প্রতীকে দাঁড় করানো হতে পারে।

তৃণমূল অবশ্য মোর্চার দাবি কিংবা হুঁশিয়ারিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। বরং তৃণমূল প্রার্থী মোর্চার জনসমর্থনে ভাগ বসাতে যে সবরকম চেষ্টা করবেন তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এ দিন সকালে ভাইচুং প্রথমে পাহাড়ের মহাকাল মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন। প্রায় আধ ঘণ্টা মন্দিরে থাকার পরে ভাইচুং যান তাকভর এলাকায়। সেখানে থাকেন ধর্মগুরু কর্মা ওয়াংচুক। তাঁর কাছে গিয়ে আশীর্বাদ নেন তিনি। পাহাড়ে ধর্মগুরু কর্মা ওয়াংচুকের কাছে নিয়মিত যেতেন জিএনএলএফ প্রধান সুবাস ঘিসিঙ্গ। মোর্চা সভাপতি গুরুঙ্গও ধর্মগুরুর প্রতি অসম্ভব শ্রদ্ধাশীল। তৃণমূল প্রার্থীও সেই ধর্মগুরুর আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে ভোট-যুদ্ধের যাত্রা শুরু করায় দলের পাহাড়ের নেতা-কর্মীরা অনেকেই আশায় বুক বেঁধেছেন।

সেই সঙ্গে পথেঘাটে থেমে পথচলতি মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময়, টুকটাক কথাবার্তা বলে মন জয়ের চেষ্টা করেছেন প্রাক্তন ফুটবল অধিনায়ক। ভাইচুংয়ের কথায়, “ভোটের ময়দান আমার অচেনা হতে পারে। কিন্তু দার্জিলিং তো আমার চিরচেনা জায়গা। ভালবাসার জায়গা। দিদি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) যে উন্নয়নের জোয়ার এনেছেন পাহাড়ে তা বন্ধ হতে দিতে চান না পাহাড়বাসী, এটাও বুঝতে পারছি।”

আমজনতাকে মুগ্ধ করার ‘ম্যাজিক’ খ্যাতনামা ফুটবলারের থাকারই কথা। তা বলে পাহাড়ে মোর্চার মতো শক্তপোক্ত সংগঠনের মোকাবিলা করার কৌশল রচনায় দক্ষতা তো রাতারাতি তৈরি হবে না ভাইচুংয়ের। সে জন্যই উত্তরবঙ্গের অন্য সমস্ত জায়গা ছেড়ে পুরোপুরি দার্জিলিঙে মনোনিবেশ করেছেন তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। কাকভোরে উঠে শিলিগুড়ি থেকে পৌঁছে গিয়েছেন দার্জিলিঙে। কার্শিয়াঙেও গিয়ে বৈঠক করেছেন। কোথায়, কটা বুথ অফিস খুলেছে, বাকিগুলো কবে খুলবে তা বিশদে খোঁজ নিয়েছেন। ৬৭৯টি বুথে যেন নিয়মিত কর্মীদের যাতায়াত করতেই হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন। দার্জিলিং পাহাড়ের জন্য একটা আলাদা নির্বাচনী ইস্তেহার তৈরির খসড়া করেছেন। তাতে দার্জিলিঙে কর ছাড়ের সুযোগ দেওয়ার দাবিটি প্রথম সারিতে রয়েছে।

গৌতমবাবু বলেন, “পাহাড়ের মানুষের আবেগ-ভালবাসাকে মর্যাদা দেন মুখ্যমন্ত্রী। সে জন্যই বারেবারে পাহাড়ে ছুটে আসেন। আমরা পাহাড়ের জন্য আলাদা নির্বাচনী ইস্তেহার তৈরি করেছি।” এর পরেই গৌতমবাবু মোর্চা প্রধান গুরুঙ্গের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “পাহাড়ে শান্তি ফিরেছে। উন্নয়ন হচ্ছে। মানুষ খুশি। যাঁরা পাহাড়ের মানুষকে শুধুই দুঃখে রাখতে চান, বন্ধ, অবরোধ করে যন্ত্রণা দিতে চান, তাঁদের মানুষ এবার ছুঁড়ে ফেলে দেবেন।”

এমতাবস্থায়, পাহাড়ের মোর্চা বিরোধী দল জিএনএলএফ, গোর্খা লিগ, সিপিআরএমের ভূমিকা নিয়েও নানা কৌতুহল রয়েছে। তবে গোর্খা লিগের পক্ষ থেকে নির্দল প্রার্থী মহেন্দ্র পি লামাকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সিপিআরএম এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। জিএনএলএফ প্রধান সুবাস ঘিসিঙ্গও দলীয় সতীর্থদের সঙ্গে আলোচনা করলেও চূড়ান্ত কোনও অবস্থান ঘোষণা করেননি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE