সুকৃতি নদীর ধার ঘেঁষে এভাবেই তৈরি হচ্ছে নতুন পর্যটন কেন্দ্রটি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
একদিকে আকাশ ছুঁয়ে রয়েছে একের পর এক ছোট-বড় ভুটান পাহাড়। আরেক পাশে এ রাজ্যের সীমানায় থাকা ছোট ছোট পাহাড়, জঙ্গল আর বিস্তৃত চা বাগিচা। মাঝ দিয়ে কুলকুল করে বইয়ে চলেছে ডুয়ার্সের অতি পরিচিত সুকৃতি নদী। পাশেই বিরাট এলাকা জুড়ে রয়েছে নদীর চর, আর গাছ গাছড়া। পরিষ্কার আকাশে দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘারও। ভারত-ভুটান সীমান্তের একেবারে ২০০ মিটারের মধ্যে ডুয়ার্সের এই চামূর্চিতেই গড়ে উঠছে ডুয়ার্সের প্রথম অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম স্পট। পাহাড়, নদী বা পাথুরে রাস্তাকে ঘিরে রোমাঞ্চই শুধু নয়, থাকবে পুরোদস্তুর থাকার রাতে থাকার ব্যবস্থা। হবে ক্যাম্পিং সাইটও, ওয়াচ টাওয়ারও।
রাজ্য পর্যটন দফতরের উদ্যোগে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে জোরকদমে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে, আগামী মাস ছয়েকে এলাকাটি পর্যটকদের জন্য পুরোপুরি খুলে দেওয়া হবে। রাজ্য পর্যটন দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা (নর্থ) সুনীল অগ্রবাল বলেন, “ডুয়ার্স কলিং’ নাম দিয়ে নতুন নতুন এলাকায় পরিকাঠামো কাজ চলছে। এর মধ্যে চামুর্চি অন্যতম। এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে পর্যটকেরা দারুণ উপভোগ করতে পারবেন। পরবর্তীতে, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের সমস্ত রকমের ব্যবস্থা হবে।”
ধূপগুড়ি ব্লকের ওই এলাকাটির ৩ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে ভুটানের সামচি। আর তার আরেক পাশেই ভুটানের বিখ্যাত ডলেমাইট উত্তোলন এবং প্রক্রিয়াকরণ কারখানা। এই সামচিতেই রয়েছে ভারত-ভুটান গেট। ভুটানের থিম্পু, পারো বা পুনাখার মত এলাকায় যেতে না পারলে এই এলাকায় ঘুরে অনেকেই ভুটানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করে থাকেন। সেই দিকটি মাথায় রেখেই পর্যটন দফতর প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, পর্যটন দফতরের প্রায় ১ কোটি দিয়ে প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। গোটা কাজটি করছে খোদ জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের পর্যটন বিভাগ এ ছাড়া সীমান্ত উন্নয়ন তহবিল, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের মাধ্যমেও এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হচ্ছে।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের এক প্রতিনিধি দল কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখে এসেছেন। জলপাইগুড়ির মহকুমা শাসক (সদর) সীমা হালদার বলেন, “ভুটানে না ঢুকেও চামুর্চির প্রকল্পটি থেকে পর্যটকেরা ভুটানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সেই সঙ্গে রিসোর্ট, রেঁস্তোরার ব্যবস্থা হচ্ছে। নদীর পাশে বিরাট এলাকা জুড়ে ল্যান্ডস্কেপিং-এর কাজ চলছে। নদী, পাহাড়কে সামনে রেখে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের ব্যবস্থা করা হবে।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, প্রথম পর্যায়ে রাস্তা, খোলা এবং ছাউনি দেওয়া বসার ব্যবস্থা, এক ছাদের তলায় সাতটি ডবল বেড রুম, একটি বড় ডরমেটরি, রেঁস্তোরা এবং ওয়াচ টাওয়ারের কাজ শেষ পর্যায়ে। পরের পর্যায়ে সুকৃতি নদীর পারে ক্যাম্পিং সাইট করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ট্রেকিং, রক ক্লাইম্বিং, কোয়াড বাইকিং (পাথরু এবরো থেবরো রাস্তা বা মরুভূমিতে ব্যবহার করা ছোট বাইক) করার ব্যবস্থার কথা ভাবা হয়েছে।
পর্যটন দফতরের অফিসারেরা জানান, দার্জিলিং এবং সিকিমে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ডুয়ার্সে এখনও সেভাবে তা হয়নি। সরকারিভাবে চামূর্চিকে ঘিরে সেই পরিকল্পনাই নেওয়া হয়েছে। আর ভুটানে না গিয়েও সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশকে উপভোগ করার বাড়তি আকর্ষণ থাকছে। আর তা ছাড়া থাকছে সামচি এবং ভুটান পাহানের ডলোমাইট কারখানা। বিন্দু ঝালং-এর মত অনুমতি পেলে সেখানেও পর্যটকদের ঘোরানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। চামুর্চিকে ঘিরেও একাধিক ঘোরার জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে চামুর্চি মহাকাল অন্যতম। প্রতি বছর অগুনতি মানুষ এখানে আসেন। এ ছাড়া লাগোয়া একাধিক চা বাগান-কারখানায় ঘোরা ছাড়াও ডায়না নদীকে ঘিরে ট্রেকিং-এর ব্যবস্থাও রয়েছে।
ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, ওই এলাকাকর তিন কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে ডুয়াসের্র বিখ্যাত মিউজিক্যাল কেভ বা গুহা। কথিত আছে, গুহার গায়ে পাথর দিয়ে আঘাত করে মিউজিক্যাল টোন শোনা যায়। এর পাশে গারুচিরা, কালাপানি এবং রোহিতির জঙ্গল রয়েছে। হাতির পাল, চিতাবাঘ, বাইসন প্রায়ই সেখানে দেখা যায়। সেই দিক থেকে নতুন প্রকল্পটি ডুয়ার্সের পর্যটন মানচিত্রে আরেকটি পালক বাড়াতে চলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy