Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

পুত্রশোকে শেষ শ্বাস

ছেলের মৃত্যুর চার দিনের মাথায় মারা গেলেন মা। প্রতিবাদী ছেলেকে পিটিয়ে মারার শোক সামলাতে না পেরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ।

পবিত্রদেবীর দেহ ঘিরে কান্না। নিজস্ব চিত্র

পবিত্রদেবীর দেহ ঘিরে কান্না। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৭ ১২:৩৬
Share: Save:

ছেলের মৃত্যুর চার দিনের মাথায় মারা গেলেন মা। প্রতিবাদী ছেলেকে পিটিয়ে মারার শোক সামলাতে না পেরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ।

গত বৃহস্পতিবার কোচবিহারের পাটছড়া গ্রামে তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী বছর ৪৮ এর সুভাষ রায় কে পার্টি অফিসের ভিতর পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে শাসকদলেরই এক নেতা ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ দিন ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন সুভাষবাবুর মা পবিত্র রায় (৭০)। বড় ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়েই আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। সোমবার ভোর চারটে নাগাদ মৃত্যু হয় পবিত্রদেবীর। তাঁর ছোট ছেলে মাণিকবাবু বলেন, ‘‘দাদার মৃত্যু মেনে নিতে পারলেন না মা। পরপর দু’জন চলে গেলেন। কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না আমরা। আমাদের গোটা পরিবারটাকেই শেষ করে দিল ওরা।’’ কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকেন সুভাষবাবুর ছেলে বাবলা। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাঁর কথায় “এ ভাবে ঠাকুমাও চলে যাবে, ভাবিনি। একজন নয় , দু’জনকে খুন করা হল।”

রায় পরিবারের সদস্যরা জানান, দিন কয়েকের মধ্যে অসুস্থ পবিত্রদেবীকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল সুভাষবাবুর। তার জন্য ঘটনার দিন সকালেই এক পড়শির কাছে কিছু টাকা ধার নিয়েছিলেন তিনি। তবে সেই টাকা নিয়ে আর বাড়ি ফেরা হয়নি। অভিযোগ, পাটছড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি কালীশঙ্কর রায় সদলবলে একটি চায়ের দোকান থেকে তুলে নিয়ে যায় সুভাষবাবুকে। পার্টি অফিসের ভিতরে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে খুন করা হয় তাঁকে।

প্রথমে পবিত্রদেবীকে সেই খবর জানতে দেননি পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু ধীরে ধীরে সব বুঝতে পারেন তিনি। এরপরেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সুভাষবাবুর কাকা রাজেন্দ্রবাবু বলেন, “অসুস্থ শরীরে সন্তান হারানোর শোক আর সামলাতে পারেননি।” পরিবারের সদস্যরাই জানান, বড় ছেলে সুভাষের প্রতি মায়ের টান ছিল একটু বেশি ছিল। ভরসাও ছিল। তাঁর ওই ছেলে গ্রামের মানুষের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াতেন। তাতে খুশি হতেন বৃদ্ধা।

নিজে শাসক দলের কর্মী হয়েও দলের নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সুভাষবাবু। একশো দিনের কাজে দুর্নীতি রুখতে গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে মামলা করেছিলেন কালীশঙ্করের বিরুদ্ধে। ইন্দিরা আবাসনের ঘর তৈরির টাকা থেকে কমিশন নেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। তাঁর আত্মীয় রবীন্দ্রনাথ রায় বলেন, “ছেলের প্রতিবাদী ভুমিকায় গর্বিত হতেন মা। তা বাড়তি শক্তি যোগাতো সুভাষবাবুকে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Woman dies killed murder beaten to death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE