সাংবাদিক সম্মেলনে ভাইচুং ভুটিয়া। ছবি: সন্দীপ পাল।
রাজ্যের অন্য কোথাও ‘শিলিগুড়ি মডেল’ কাজ করেনি। অথচ বারেবারেই তা শিলিগুড়িতে সফল হচ্ছে কী ভাবে! এই প্রশ্নে নিজের দলের একাংশ ও বিজেপির কয়েকজনের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করলেন তৃণমূলের পরাজিত প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া। শনিবার নিজের নির্বাচনী এজেন্ট প্রতুল চক্রবর্তীকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি সেই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যের অন্য জায়গায় এই অশোক মডেল কাজ করেনি। অথচ পুর ভোট থেকে মহকুমা পরিষদ নির্বাচন এবং বিধানসভা নির্বাচনে শিলিগুড়িতে অশোক মডেল কাজ করছে কেন সেটা দেখা দরকার। শিলিগুড়ি মডেল শুধু এখানেই বারেবারে কাজ করছে কেন দেটা দেখতে হবে। অন্য জায়গায় এই মডেল কাজ করছে না। এর পিছনে বিজেপি এবং তৃণমূলেরও একাংশের হাত রয়েছে বলে সন্দেহ হচ্ছে। এটা খতিয়ে দেখা দরকার। আমি দলনেত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’’ শুধু তাই নয়, ভাইচুংয়ের সন্দেহের তালিকায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের স্ত্রী শুক্লা দেবী যে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সেখানে পুরভোটের চেয়ে ব্যবধান কী ভাবে কমেছে সেই প্রসঙ্গও রয়েছে।
ঘটনা হল, গৌতমবাবুর স্ত্রী ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে গত পুরভোটে জেতেন ৯৪৬ ভোটে। সেখানে ভাইচুং ২৬১ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। ১ বছরের মধ্যে বিধানসবা বোট হচ্ছে, তা হলে ব্যবধান কমবে কেন সেটাই ভাইচুং বুঝতে পারছেন না। কিন্তু, তৃণমূলের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাদের একাংশ জানান, পুরভোটের সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের ফারাক রয়েছে। পুর ভোটে ওয়ার্ডের বাসিন্দারা স্থানীয় প্রার্থী, ব্যক্তিগত যোগাযোগকেও প্রাধান্য দেন।। সেই নিরিখে ওই ওয়ার্ডের বাইচুংয়ের এগিয়ে তাকার ব্যবধান ঠিকই আছে বলে ওয়ার্ড কমিটির কয়েকজন নেতার দাবি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, ‘‘ভাইচুং তাঁর মতামত জানিয়েছে। তা নিয়ে আমি কোনও কিছু বলতে চাই না।’’
এখানেই শেষ নয়, ভাইচুং দলের জেলা সভাপতি রঞ্জন সরকার, বিরোধী দলনেতা নান্টু পাল-সহ তাদের দখলে থাকা আরও ৬টি ওয়ার্ডের ভোটের ফল তুলে ধরে বলেন, ‘‘এই সমস্ত ওয়ার্ডে আমরা পুরসভাতে যে ভোট পেয়েছিলাম দলের সেই প্রাপ্য ভোট এই নির্বাচনে ধরে রাখতে পারা যায়নি। কেন তা ধরে রাখা যায়নি তা নিয়ে চিন্তিত। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদেরও ভাবা উচিত। তাঁরাও নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন।’’
বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য তাদের সম্পর্কে ভাইচুংয়ের সন্দেহ ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন। বিজেপি’র দার্জিলিং জেলা সভাপতি অরুণ প্রসাদ সরকার বলেন, ‘‘ভাইচুং যা বলছেন তা ঠিক নয়। আমরা সিপিএম, কংগ্রেসের সঙ্গে নেই। আমাদের দখলে দুটি ওয়ার্ড রয়েছে। তার মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চিকিৎসার জন্য বাইরে থাকায় সমস্যা হয়েছে। ৮ নম্বর ওয়ার্ড বাণিজ্যিক এলাকা। সেখানে অশোকবাবুর দিকে পাল্লা ভারী ভেবে হয়তো অনেকে তাঁকে ভোট দিয়েছেন।’’
শিলিগুড়ির ৩৩ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১ টি ওয়ার্ড তৃণমূলের। তার মধ্যে দলের নেতাদের অধীনে থাকা ৯, ১১, ১২, ১৭, ২০, ২৩, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল পুরসভার প্রাপ্য ভোট ধরে রাখতে পারেনি। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নান্টু পাল। ১১ নম্বরে তাঁর স্ত্রী কাউন্সিলর। তিনি বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে এবং ১১ নম্বরে এই বিধানসভা ভোটে আমরা এগিয়ে রয়েছি। ওয়ার্ড দুটো আগে তৃণমূলের ছিল না। আমরাই লড়াই করে কংগ্রেস এবং সিপিএমের থেকে ওয়ার্ড দুটো দখল করেছি সেটা মনে রাখতে হবে।’’ ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জেলা সভাপতি রঞ্জনবাবু। তার ওয়ার্ডে ভাইচুং ৬৪৩ ভোটে পিছিয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কেন এই ওয়ার্ডে আমরা পিছিয়ে গেলাম তা নিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। বোঝার চেষ্টা করছি। এটা ঠিকই অশোক মডেল শিলিগুড়িতেই শুধু কাজ করছে। কেন সেটা নিশ্চয়ই দেখতে হবে।’’
শিলিগুড়ি পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল বলেন, ‘‘আমাদের প্রার্থী হেরে যাওয়া নিয়ে আমিও হতবাক। আমরা সকলেই আশা করেছিলাম তিনি জিতবেন। কেন এমন হল বুঝতে পারছি না।’’ ৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রদীপ গোয়েল এবং প্রশান্ত চক্রবর্তীরাও জানান, তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করছেন। ভাইচুংয়ের দাবি, একমাত্র তাদের দখলে থাকা ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে পুর নির্বাচনে তারা যে ভোট পেয়েছিলেন বিধানসভায় তা বেড়েছে। ভাইচুংয়ের কথায়, ‘‘যেখানে আমাদের কাউন্সিলর নেই তেমন ২৩ টি ওয়ার্ডে তৃণমূল ভাল ফল করেছে। অথচ আমাদের দখলে থাকা ওই সাতটি ওয়ার্ডে কেন ফল খারাপ হল তা দেখতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy