Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Tea Worker

রেশনের চালের ভাত, সঙ্গে চা ফুল ভাজা

গাছে যত্ন হয় না বলে শীত পড়তে না পড়তেই চা গাছে নতুন পাতা আসা বন্ধ। পাতা বিক্রি করে সেই টাকা শ্রমিকদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হত। সে টাকা বন্ধ।

সংগ্রহ: চা গাছের ফুল তুলছেন এক শ্রমিক। জলপাইগুড়ির রায়পুর চা বাগানে। নিজস্ব চিত্র।

সংগ্রহ: চা গাছের ফুল তুলছেন এক শ্রমিক। জলপাইগুড়ির রায়পুর চা বাগানে। নিজস্ব চিত্র।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:৫১
Share: Save:

চা বাগানে কাজ নেই, বন্ধ রায়পুরের শ্রমিকদের রোজগারের ঠিকানা এখন দূরদূরান্তের গ্রামের আলু খেত। ভোরবেলায় চা বাগানে ছোট ট্রাক এসে থামে। দলে দলে শ্রমিকরা উঠে চলে যান জলপাইগুড়ি শহর ছাড়িয়ে শোভারহাট, গড়ালবাড়ির বিভিন্ন আলু খেতে। সন্ধেয় গাড়ি ফের শ্রমিকদের নামিয়ে দিয়ে যায় বাগানে। আলু বুনে দৈনিক মজুরি পান চা শ্রমিকেরা। দিন কয়েক পরেই আলু বোনা শেষ হয়ে যাবে, তখন রোজগারের কী হবে? প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বন্ধ চা বাগানে।

গাছে যত্ন হয় না বলে শীত পড়তে না পড়তেই চা গাছে নতুন পাতা আসা বন্ধ। পাতা বিক্রি করে সেই টাকা শ্রমিকদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হত। সে টাকা বন্ধ। অগত্যা কেউ গিয়েছেন আলু খেতে কাজ করতে, কেউ বা আশপাশের হোটেলে, দোকানে। যে শ্রমিকেরা কোথাও কাজ পাননি, তাঁদের ভরসা বাগানের চা গাছ। রায়পুর বাগান জুড়ে চা গাছে অসংখ্য ফুল ফুটেছে। বুধবার দুপুরে সে ফুল তুলছিলেন তিস্তা লাইনের বাসিন্দা প্রমীলা সিংহ এবং মনি ওরাওঁ। প্রমীলা বললেন, “চা ফুল তেলে ভেজে খাই। সঙ্গে পেঁয়াজ দিতে হয়। রেশনের চাল পাই। ভাত আর ফুলভাজা খাই। পাতা তোলা বন্ধ হওয়ার পরে, বাইরে কাজ পাইনি।”

মঙ্গলবার রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক জলপাইগুড়িতে এসে রায়পুর চা বাগান খোলা নিয়ে আশার আলো দেখিয়েছেন। আগামী ১৬ ডিসেম্বর নবান্নে রায়পুর চা বাগান নিয়ে বৈঠক রয়েছে। সে বৈঠকে মালিকপক্ষ না এলে রাজ্য সরকার চা বাগান অধিগ্রহণ করে নতুন মালিকের হাতে দিয়ে খোলার বন্দোবস্ত করবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। সে খবর পৌঁছেছে রায়পুর চা বাগানেও। যদিও বাগানে কোনও উচ্ছ্বাস নেই।

গুদাম লাইনের বাসিন্দা নীলু তিরকি ওরাওঁ এবং তাঁর স্বামী দু’জনেই চা বাগানে কাজ করেন। দু’জনেরই আপাতত কাজ নেই। নীলু বলেন, “দু’দিন আলু খেতে গিয়েছিলাম। প্রতিদিন কাজ পাই না। কোনও দিন শুধু সেদ্ধভাত খেয়ে থাকতে হচ্ছে।” প্রায় সাড়ে ছশো একরের চা বাগান, স্থায়ী অস্থায়ী মিলিয়ে শ্রমিকের সংখ্যা হাজারখানেক। শীতের বেলায় প্রান্তর জুড়ে চা বাগিচার উপরে অস্পষ্ট কুয়াশা লেগে থাকে। চা গাছের পাতা রোগ পোকা লেগে লাল হয়ে গিয়েছে। ওষুধ কিনে ছড়ানো সম্ভব নয় বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের পক্ষে।

বাগান এলাকার তৃণমূলের প্রধানের গলাতেও ক্ষুব্ধ সুর। প্রধান হেমব্রম বলেন, “একশো দিনের কাজও বন্ধ। এই বাগানের চা শ্রমিকদের এখন বাগানে কোনও কাজ নেই। কাজের খোঁজে বাইরে চলে যাচ্ছেন। এর পরে কে, কোথায় চলে যাবেন, আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে হবে কি না, কে জানে!” শাসক দলের এক নেতার কথায়, “বাগানের মতো এই বাগানের শ্রমিকদের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত।”

অন্য বিষয়গুলি:

Tea Worker Jalpaiguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy