হরিশ্চন্দ্রপুরের সভায় মহম্মদ সেলিম।
বামফ্রন্ট ক্ষমতায় ফিরলে তৃণমূলের ইট বিক্রি করে প্রতারণার টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম। সোমবার মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে জনসভায় সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য তথা রায়গঞ্জের সিপিএম সাংসদের অভিযোগ, দুর্নীতির টাকায় তৈরি টাকায় দেশে, বিদেশে সম্পত্তি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘তাই সেই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে আইনি প্রক্রিয়ায় নিলাম করে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করবে বামফ্রন্ট।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ক্ষমতায় ফিরলে তৃণমূলের প্রত্যেকটি ইট বিক্রি করে গরিব মানুষদের টাকা ফেরত দেব।’’
এ দিনের সভায় আগাগোড়া তৃণমূল ও বিজেপিকে আক্রমণ করলেও কংগ্রেস সম্পর্কে সেলিম বলেন, ‘‘কংগ্রেসকে বলি যে দলটা তো প্রায় উঠেই গিয়েছে। ফলে একা ওদের সঙ্গে তো আপনারা লড়াই করতে পারবেন না। নির্বাচন এগিয়ে আসছে। ফলে বলছি যে, আসুন আমরা এক সঙ্গে তৃণমূল ও বিজেপির সঙ্গে লড়াই করি।’’
সাংসদের ওই মন্তব্য একই সঙ্গে বিস্মত ও ক্ষুব্ধ জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী তথা উত্তর মালদহের সাংসদ মৌসম বেনজির নুর। তিনি বলেন, ‘‘দল উঠে গিয়ে থাকলে উনি আবার জোট করতে চাইছেন কেন? উনি জোটের পক্ষে সওয়াল করছেন ভালো কথা। জোট হবে কি না তা স্থির করবে হাইকম্যান্ড। কিন্তু কংগ্রেসের মতো দল উঠে গিয়েছে এমন মন্তব্য একজন সাংসদের পক্ষে শোভা পায় না। তবে জোট হোক বা না হোক, আমরা তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।’’
সেলিম এ দিন তৃণমূল সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘‘এ রাজ্যে এখন অপরাধীদের শাসন কায়েম হয়েছে। নবান্নের নির্দেশ ছাড়া পুলিশ এফআইআর নেয় না। চিটফান্ডের পাশাপাশি টেট, এসএসসি পরীক্ষার নামে লুঠ হয়েছে। নারী নির্যাতন তাই বেড়ে চলেছে। আর নায়ক-নায়িকা, বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই তৃণমূল আশ্রয় দেওয়ায় তাঁরাও আর মুখ খুলছেন না।’’
গত বছর ১২ ডিসেম্বর সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর সভায় ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তজমুল হোসেন। তার ঠিক এক মাসের মাথায় ওই গ্রন্থাগার ময়দানে এদিন সিপিএম ওই জনসভার আয়োজন করে। বাম বিধায়ক তজমুল সাহেব তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করার পাশাপাশি এদিনের সভার মূল উদ্দেশ্য যে ছিল ক্ষমতা দেখানো, তা জেলা সিপিএমের নেতারা অকপটেই স্বীকার করেছেন। দুপুর ১২টা থেকেই গোটা হরিশ্চন্দ্রপুর কার্যত বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কর্মীদের মিছিলে অবরুদ্ধ হয়ে পরে। দু’কিলোমিটার হেঁটে সভায় পৌঁছতে হয়। সভায় হেঁটে পৌঁছতে হয় সাংসদকেও। সভাস্থলে তিল ধারণের জায়গা না থাকায় শহরের বিভিন্ন মোড়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় কর্মীদের। মোড়গুলিতে অবশ্য টেলিভিশন রাখা হয়েছিল। তাতেই সাংসদের বক্তৃতা শোনেন তাঁরা। আর ওই জনস্রোত দেখে বামফ্রন্টের দলত্যাগী বিধায়ক তজমুল হোসেনকেও বিঁধতে ছাড়েননি সাংসদ, জেলা সিপিএম সম্পাদক অম্বর মিত্র সহ বিভিন্ন বক্তারা।
তাকে কতটা আক্রমণ করা হচ্ছে, তা নিয়ে অবশ্য এদিন অনুগামীদের কাছে বারেবারেই খোঁজ নিয়েছেন দলত্যাগী বিধায়ক। পরে তিনি বলেন, ‘‘আমি কেন কোন পরিস্থিতিতে দল ছেড়েছি তা হরিশ্চন্দ্রপুরের মানুষ জানেন।’’
সভায় জনস্রোত প্রসঙ্গে ব্লক তৃণমূল সহ সভাপতি রুহুল আমিনের দাবি, ‘‘এখন মাঠে কাজ নেই। তাই বিনে পয়সায় ভুটভুটি, অটোয় চড়ার লোভ অনেকেই সামলাতে পারেননি। এ ছাড়া জনসভায় আমাদের দলেরও বহু কর্মী ছিলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy