Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

নিষেধ উড়িয়ে বালি তোলা চলছে অবাধে

নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে নদীখাতে ট্রাক নামিয়ে বালি-পাথর তোলা হচ্ছে প্রতিদিন। সে ছবি ধরা পড়ছে পুলিশের ক্যামেরাতেও। তারপরেও বালাসন নদী খাত থেকে প্রকাশ্যে বালি-পাথর লুঠ চলছে অবাধে। ট্রাক চালক-খালাসিদের দাবি, তাদের কাছে চিরকুট রয়েছে।

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০১:৫৯
Share: Save:

নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে নদীখাতে ট্রাক নামিয়ে বালি-পাথর তোলা হচ্ছে প্রতিদিন। সে ছবি ধরা পড়ছে পুলিশের ক্যামেরাতেও। তারপরেও বালাসন নদী খাত থেকে প্রকাশ্যে বালি-পাথর লুঠ চলছে অবাধে। ট্রাক চালক-খালাসিদের দাবি, তাদের কাছে চিরকুট রয়েছে। অভিযোগ, একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ট্রাক পিছু টাকা জমা করলেই মিলে যায় চিরকুট। মোটা কাগজে পেন দিয়ে নম্বর লেখা সেই চিরকুট দেখালে অবাধে ট্রাক নেমে যায় নদীখাতে। বালি-পাথর তুলে ফিরতি পথে নজরদারিতে আটকালেও ছাড় পেতে ভরসা সেই চিরকুট। তবে ট্রাক চালকরা সকলেই চিরকুটের প্রাপকদের তালিকায় নাম লেখাননি, তাদের সংগঠনও এমন অবৈধ ব্যবস্থার বিরোধী। চিরকুটের টাকা কোথায় যায়, কারা নেয় তা নিয়ে তদন্ত দাবি করেছেন ট্রাক চালকদের একাংশও। শিলিগুড়ি লাগোয়া মাটিগাড়ার বালাসন সেতু লাগোয়া এলাকায় অভিযোগ এমনই।

হাইকোর্টের গ্রিন ট্রাইবুনাল উত্তরবঙ্গের নদী খাত থেকে বালি-পাথর তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে মাসখানেক আগে দার্জিলিং জেলার ১২টি ঘাট থেকে পুরোনো অনুমতির ভিত্তিতে বালি-পাথর তোলার অনুমতি দেওয়া হয়। তার সুযোগ নিয়েই শুরু হয়েছে চিরকুট ব্যবস্থা। কাদের অনুমতি রয়েছে, কার অনুমতি নেই তা যাচাইও করে দেখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। তার সুযোগেই মাটিগাড়ার বালাসন অবৈধ খাদানের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে বলে দাবি।

প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ এবং সেচ দফতরের একাংশের ভূমিকা নিয়েও। সম্প্রতি বালাসন সেতু লাগোয়া একটি উঁচু মিনার তৈরি করে নজরদারির জন্য ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্যামেরায় নদীখাতের যাবতীয় ছবি সবসময় রেকর্ড হচ্ছে। সেই ছবিতে ট্রাকের নম্বর দেখে অনুমতি রয়েছে কি নেই তা যাচাই করে দেখে পদক্ষেপ করা যেতে পারে বলে দাবি। নজরদারিতে অবৈধ কিছু ধরা পড়লেও যদি ব্যবস্থা না হয় তবে ক্যামেরার বসানোর উদ্দেশ্য কী তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সেচ দফতরের একাংশ। পুলিশের পাল্টা দাবি, সেচ দফতর কেন পদক্ষেপ করছে না?

শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপাচা বলেন, ‘‘এতদিন বালি-পাথর তোলা বন্ধ রাখা হয়েছিল। সম্প্রতি কিছু বিভ্রান্তি হতে পারে। খোঁজ নিয়ে দেখছি। কোথাও অবৈধ কিছু দেখলে সেচ দফতরও আমাদের জানাতে পারে।’’ সেচ দফতরের শিলিগুড়ির নির্বাহী বাস্তুকার সমর সমর সরকার পাল্টা দাব করেছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বালি-পাথর তোলা বন্ধ রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশকে সব জানানো রয়েছে।’’

শনিবার দুপুরে সেতু লাগোয়া নদী-খাত থেকে বালি-পাথর ট্রাকে তোলা হচ্ছে এমন ছবি পেয়েছেন শিলিগুড়ির মহকুমা শাসক পানিক্কর হরিশঙ্কর। তিনি বলেন, ‘‘দিনে-দুপুরে এমন ঘটনা কী ভাবে ঘটছে তা ভেবেই অবাক লাগছে। পুলিশের সঙ্গে কথা বলছি। ক্যামেরায় যদি ছবি উঠে থাকে, তা দেখেও ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’’

বালাসন সেতুর পাশেই নদীখাত থেকে বালি-পাথর ট্রাকে তুলতে দেখা গিয়েছে শনিবার দুপুরে। নতুন বা পুরোনো কোনও ক্ষেত্রেই সেতুর পাশে খাদান তৈরি করা সম্ভব নয়। এক ট্রাক চালকের দাবি, ‘‘নতুন-পুরোনো জানি না। আমাদের কাছে পারমিট রয়েছে।’’ পারমিট মানে মোটা কাগজের সেই চিরকুট। নদী খাতে সরাসরি ট্রাক নিয়ে নামায় পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারিতে পড়তে হবে যে? এ প্রশ্নের উত্তরে শুধু হাসলেন ওই চালক।

অন্য বিষয়গুলি:

Sand rules and regulation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE